শিরোনাম
খুলনার সেই কোচিং থেকে ২৮০ জন মেডিকেলে উত্তীর্ণ
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৫০
খুলনার সেই কোচিং থেকে ২৮০ জন মেডিকেলে উত্তীর্ণ
খুলনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

খুলনায় মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার প্রশ্ন কারসাজিতে অভিযুক্ত সেই থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার থেকে এ বছর (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ২৮০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ায় বিস্ময়েয় সৃষ্টি হয়েছে। এতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তারা জানাচ্ছেন ওই কোচিং সেন্টার ও পরিচালক ডা. তারিমের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শুক্রবার (১১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পরে মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে ওই কোচিং থেকে ২৮০ জন বিভিন্ন সরকারি মেডিলেকে চান্স পেয়েছে বলে জানা গেছে।


কোচিংয়ের পরিচালক ডা. ইউনুস খান ওরফে তারিম বলেন, ‘আমরা অতীতের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছি। এবার আমাদের কোচিং থেকে ২৮০ জনের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) চান্স পেয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মেধা তালিকায় ২য়, ১৯তম, ২০তম ও ৩২তম হয়েছে আমাদের কোচিংয়ের শিক্ষার্থীরা।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার থেকে কোচিং করেছেন এমন ২৮ জন ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। মোট ২৭৩ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ৮৬ জন ঢাকার অন্য চারটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এর আগের বছর কোচিং সেন্টারটি থেকে বিভিন্ন মেডিকেলে ২৬৪ জন ভর্তি হয়েছিলেন। প্রতি বছরই সরকারি মেডিকেলে এখানকার শিক্ষার্থীদের ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। ডা. তারিম প্রচারণামূলক পোস্টার ও হ্যান্ড বিলে নিজেকে ৪ হাজার ডাক্তার গড়ার কারিগর হিসেবে দাবি করে থাকেন।


সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে কারসাজি করে কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। খুলনা মহানগরের কেন্দ্রস্থলে ফুল মার্কেটের কাছে একটি বহুতল ভবনে এই কোচিং সেন্টার অবস্থিত। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কারসাজি করে শিক্ষার্থী ভর্তি করার ব্যাপারে এ কোচিং সেন্টারটি জড়িত। যা গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে।


ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া এমন কিছু শিক্ষার্থী সম্পর্কে শিক্ষকেরা বলেছেন, মেডিকেলে পড়ার ন্যূনতম মানও তাদের নেই। ভর্তি পরীক্ষায় কীভাবে তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেটা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। তাদের পড়াশোনা ও জ্ঞান এত নিম্নমানের যে তারা কীভাবে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার মতো কঠিন পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন, তা বোধগম্য নয়।


সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে এক প্রতিবেদনে বলেছে, খুলনার এই কোচিং সেন্টার ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে মেধাহীন, ‘অযোগ্য’ ছাত্রছাত্রীদের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে। জনপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে বছরে শতকোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেন হচ্ছে।


গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে কিছু শিক্ষার্থীর ফলাফল বিবরণীর বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়, যারা থ্রি ডক্টরসে কোচিং করেছেন। তাতে দেখা যায়, তারা কেউ এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাননি। তবে ভর্তি পরীক্ষায় ৭৩ করে নম্বর পেয়েছেন। একজন ৭৩.২৫ নম্বর পেয়েছেন।


প্রতিবেদনে বলা হয়, মুগদা মেডিকেলে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১২ জন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ২১ জন ভর্তি হন, যারা খুলনার ওই কোচিং সেন্টারে কোচিং করেছেন। তাদের লেখাপড়ার মানও অত্যন্ত নিম্ন। শিক্ষকদের আশঙ্কা, তারা কোনো কারসাজির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন।


গত ১০ অক্টোবর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কারসাজির অভিযোগে মেডিকেল ভর্তি কোচিং খুলনা ‘থ্রি ডক্টরস’র পরিচালক ডা. তারিম ওরফে ইউনুস খান তারিমকে আটক করেছিল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান হোসেন খান ওই দিন বেলা ১১টার দিকে নগরীর ফুলমার্কেট এলাকায় অবস্থিত ডা. তারিমের মেডিকেল ভর্তির কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসে অভিযান পরিচালনা করেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ে কোচিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও কম্পিউটারের হার্ডডিক্স জব্দ করা হয়।


ওই দিন বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার এক মাস আগ থেকে সব ভর্তি কোচিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে থ্রি ডক্টরস কোচিং খোলা রাখা হয়েছিল। এছাড়া ইউনুস খান ওরফে তারিম একজন সরকারি চিকিৎসক। কিন্তু কর্মস্থলে না থেকে তিনি কোচিং সেন্টারে সময় দিচ্ছিলেন। তার কোচিং সেন্টারের কোনো নিবন্ধনও (অনুমতি) ছিল না। এসব কারণে তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে মেডিকেল অফিসারের পদ থেকে বরখাস্ত করা এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে সুপারিশ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।


বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ডা. তারিমের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ র‍য়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/তুরান/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com