বগুড়ায় ইসলামী ছাত্রশিবির-নিয়ন্ত্রিত ছাত্রাবাস থেকে সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা এবং পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে মোটা অঙ্কের অর্থ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
প্রশ্ন ফাঁসের অর্থ নিয়ে আবদুল হালিম নামের একজনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোকে কেন্দ্র করে পুলিশ ইতিমধ্যেই শহরের জামিলনগর এলাকার ছাত্রশিবির-নিয়ন্ত্রিত ছাত্রাবাসটিতে অভিযান চালিয়েছে।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকালের ওই অভিযানে ছাত্রাবাসে জিম্মি করে রাখা আবদুল হালিমকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া আবদুল হালিম ইতিপূর্বে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস কেলেঙ্কারির ঘটনায় রংপুরের ভিন্নজগৎ থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন বলে একটি গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, পুলিশের কাছে খবর ছিল, রংপুরের কারমাইকেল কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুল হালিমকে জামিলনগর এলাকায় ‘দিলরুবা ভিলা’ নামে ইসলামী ছাত্রশিবির-নিয়ন্ত্রিত একটি ছাত্রাবাসে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে বেলা ১১টায় ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার করা হয় অপহৃত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের আবদুল হালিমকে। অভিযানের খবর পেয়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও আটক করা হয় শিবিরের কর্মী আল আমিন সরকারকে (১৯)। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় নগদ ৪৩ হাজার টাকা, ১৭টি মুঠোফোন, দুটি ক্যামেরা, একটি কম্পিউটার, একটি স্ক্যানার, দুটি প্রিন্টার, ১২টি জিহাদি বই, ২৭টি সিডি, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ও সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের নামাঙ্কিত সিল। অভিযান শেষে ফেরার পথে সেউজগাড়ি আমতলা মোড় এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের ধরতে সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকার ছাত্রশিবির-নিয়ন্ত্রিত একটি ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে শিবিরের কর্মী আবু জাফর, আরিফুল ইসলাম, নুরুন্নবী, আবু হাসান, নুরুন্নবী (২), শাকিবুল, আল আমিনকে আটক করা হয়। তারা সবাই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চিত হয়েছেন, ছাত্রশিবির-নিয়ন্ত্রিত ওই ছাত্রাবাসটিকে ঘিরে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছিল। পরীক্ষার আগের রাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আসা প্রশ্ন দ্রুত প্রিন্ট করতে প্রিন্টার ও স্ক্যানার ব্যবহার করা হতো। প্রশ্ন হাতে আসার পর দ্রুত উত্তর তৈরি করে মুঠোফোনের খুদে বার্তার মাধ্যমে তা পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করা হতো। এ জন্য চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আগাম নেয়া হতো। আবদুল হালিমও এই চক্রের সদস্য। ইতিপূর্বে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করার ঘটনায় রংপুর থেকে হাতেনাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। শিবিরের সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস জালিয়াতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার সুবাদেই তিনি জামায়াত ও শিবির-নিয়ন্ত্রিত এলাকা জামিলনগরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই আবদুল হালিমের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের নেতাদের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে শনিবার শিবিরের দুই নেতা তাকে ওই ছাত্রাবাসে ডেকে নেন। এরপর তার কাছে ভাগ-বাঁটোয়ারার পাঁচ লাখ টাকার জন্য চাপ দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশকে খবর দেন হালিম।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের শহর শাখার প্রচার সম্পাদক খোন্দকার বিপ্লব দাবি করেন, আবদুল হালিম একজন প্রতারক। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তিনি বহুজনের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন। কয়েক দিন আগে প্রতারিত দুজন নালিশ করায় ওই টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিতেই তাকে ওই ছাত্রাবাসে ডাকা হয়েছিল।
খোন্দকার বিপ্লব বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস নয়; কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার ব্যবহৃত হতো ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি গাইড কনসেপ্ট-এর পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজে। অপহরণ বা প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সংগঠনের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই শিবিরের বিরুদ্ধে এসব চক্রান্ত ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, অপহরণের অভিযোগের সূত্র ধরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। ছাত্রাবাসটি প্রশ্ন ফাঁসের আস্তানা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বিবার্তা/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]