শিরোনাম
‘আমি বাবলু শেখ, শ্রী বাবু না’
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:১২
‘আমি বাবলু শেখ, শ্রী বাবু না’
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পুলিশের অসতর্কতার কারণে এক আসামির সাজায় ৫৯ দিন হাজত খেটেছেন অন্য এক ব্যক্তি।নাটোরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের একটি মারামারির মামলায় সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের শ্রী দেবদাসের ছেলে শ্রী বাবুকে দুই বছরের দণ্ডাদেশ দেন।কিন্তু তার পরিবর্তে কারাগারে পাঠানো হয় ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখ নামের একজন চা বিক্রেতাকে।


আদালতের নথিপত্র ও বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাজী আবদুল মালেক বাদী হয়ে শ্রী বাবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করেন।মামলার নম্বর ১৪।


তৎকালীন নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে ১৫/০৫/২০০১ তারিখে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তীতে একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর পুনরায় শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে সদর থানার উপ-পরিদর্শক হেলেনা পারভীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।



মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামি বাবুকে গ্রেফতর না করে ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখকে ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এই ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ছয় দিন পর ১৩ নভেম্বর আসামির আইনজীবী বাবু পরিচয়েই বাবলু শেখের জামিন করান। পরে ওই পরিচয়ই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামি পরীক্ষা করেন। যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৬ সালের ২৩ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আসামি বাবুর বিরুদ্ধে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।


ওই দিন কাঠগড়া থেকে বাবলু শেখকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি ১৬/০৮/১৬ তারিখে আপিলের মাধ্যমে জামিনে বের হন।


এদিকে মূল ঘটনা জানতে যাওয়া হয় সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে। কথা হয় মামলার বাদী কাজী আব্দুল মালেকের স্ত্রী ওলেগান বেগমের সাথে।


তিনি বলেন, তার স্বামী প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। তিনিসহ পরিবারের সবাই জানে এ মামলার কার্যক্রম এতদিনে স্থগিত হয়ে গেছে।


কাজী আব্দুল মালেকের ছেলে ও মামলার সাক্ষী বাতেন কাজী বলেন, আমরা জানি যে, এতদিনে এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। সংবাদকর্মী পরিচয় পেলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।


একই গ্রামের বাসিন্দা ও এ মামলার সাক্ষী নবীউল্লাহ বলেন, শ্রী বাবু নামের কেউ অত্র এলাকায় নাই। তবে যে বাবলু শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল এ মামলার সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই।


আঁচলকোট গ্রামে গেলে কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা মকছেদ আলী প্রাং, জনাব আলী ও গ্রাম্য ডাক্তার বিশ্বনাথ সরকারের সাথে, তারা জানান অত্র এলাকায় শ্রী বাবু নামের কেউ কোনোদিনই ছিলনা, বাবলু শেখ এলাকার একজন সহজ-সরল মানুষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।


বাবলু শেখ বলেন, আমি বাবলু শেখ, শ্রী বাবু না। আমি একজন নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষ। অন্য আসামিদের সঙ্গে তিনি দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ভুল পরিচয়ের বিষয়টি জানার পর আইনজীবীর মাধ্যমে তার ভোটার পরিচয়পত্র আদালতে জমা দিয়ে ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তাতেও সমাধান পাইনি। তাই বিনা অপরাধে দুইবারে ৫৯ দিন কারাভোগ করেছি।


বাবলু শেখের অন্যতম আইনজীবী দেওয়ান লুৎফর রহমান বলেন, বাবলু শেখের জামিনের সময় অন্য আইনজীবী ছিলেন। তিনি দাবি করেন, ‘পরে আমি বাবলু শেখের জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে উপস্থাপন করে ত্রুটির বিষয়টি অবগত করেছি। এরপরও তার সাজা হওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।


বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী শামীম উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্তকারী দুইজন কর্মকর্তা ও আগের আইনজীবীর গাফিলতির কারণে বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয়েছে বাবলু শেখকে। তিনি পরবর্তী শুনানিতে খালাস পাবে বলে আমি আশাবাদী।


নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল ইসলাম বলেন, অনেক আগের বিষয়, না জেনে বলতে পারছি না। খোঁজ-খবর নিয়ে পরে বলতে পারব।


বিবার্তা/রাজু/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com