পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের বালুর বুক চিরে জেগে ওঠা সেই শত বছরের পুরানো নৌকাটি সংস্কারের অভাবে ক্রমশই ধ্বংস হতে বসেছে। ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য, ২২ ফুট প্রস্থ ও প্রায় ৯০ টন ওজনের এ নৌকাটি সৈকত থেকে উত্তোলন করে বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।
একচালা একটি টিনসেট ঘর নির্মাণ করে আনুষ্ঠানিক ভাবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় হয়। এরপর আর সঠিক কোনো তদারকি না থাকায় টিনের ঘরটি ঝড় বাতাসে ভেঙ্গে যায়। বৃষ্টিতে ও রৌদ্রের তাপে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন নিদর্শন এ নৌকাটি।
বর্তমানে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহনকারী নৌকাটির বেহাল দশা দেখে হতাশ পর্যটকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের জুলাই মাসের দিকে সৈকতের বালুর মধ্যে জেগে ওঠা এ নৌকাটির অংশ বিশেষ স্থানীয়রা দেখতে পায়। শুরু হয় নানা রকম আলোচনা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নজরে আসে। এক পর্যায়ে নৌকা বিশেষজ্ঞ দল নৌকাটির খুঁটিনাটি বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নৌকা বিশেষজ্ঞের তত্ববাধানে এ নৌকাটি কুয়াকাটার সৈকত থেকে উত্তোলন কাজ শুরু করে।
২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অর্থয়ানে পত্নতত্ত্ব অধিদফতর নৌকাটি মাটি থেকে উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নৌকাটি উদ্ধার করে কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন টিন সেট একচালা একটি স্থাপনা তৈরি করে সেখানে রাখা হয়। আর এর নাম করণ করা হয় কুয়াকাটা নৌকা যাদুঘর। আগত পর্যটক ও শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীরাও অতীত ইতিহাস জানতে প্রতিদিন ভিড় জমায় সেখানে। বর্তমানে বৃষ্টির পানি ও রৌদ্রে পুড়ে নৌকাটির কাঠ খুলে গিয়ে ধ্বংস হতে চলছে।
নৌকাটির এমন বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে কুয়াকাটা কেরানীপাড়ার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের ঠাকুর (বানতে) জ্ঞানেত্র মহাথের বলেন, এটি নিয়ে অনেক স্মৃতি ও ইতিহাস রয়েছে রাখাইদের।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর তোফায়েল আহমেদ তপু বলেন, নৌকাটির উপরে থাকা টিনের ছাউনি ভেঙ্গে যাওয়ায় রোদ বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এটিকে যদি ভাল ভাবে সংস্কার করে তাহলে প্রাচীন এ নৌকাটি পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষারের সাথে এ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যে ও সংস্কৃতির সাক্ষী বহনকারী এই নৌকাটি অযত্নে অবহেলায় পরে রয়েছে। যা মোটেই কাম্য নয়। পর্যটকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। দ্রুত এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, নৌকাটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সরাসরি দেখভাল করছে। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান জানান, কুয়াকাটার প্রাচীন নৌকাটি পরিদর্শন করেছি। সংস্কারের বিষয় নিয়ে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির মিটিংয়ে তোলা হবে।
বিবার্তা/উত্তম/তাওহীদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]