শিরোনাম
মালিকানাধীন ফসলি জমিতে খাল খননের অভিযোগ
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:২৫
মালিকানাধীন ফসলি জমিতে খাল খননের অভিযোগ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে খাস জমি রেখে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমিতে খাল পুনঃখননের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে।


বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও প্রভাবশালীদের দাফটে সুফল পাননি নিরহ কৃষকরা। ফলে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কৃষি জমি চাষাবাদে ব্যর্থ হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসেছেন তিন কৃষক পরিবার। অবশেষে জমি উদ্ধারে আদালতের দ্বারস্থ হন কৃষকরা।


মামলা ও অভিযোগে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীখাতা মৌজার এক একর ৯০ শতাংশ জমি পৈত্রিক ও কবলা সূত্রে মালিকানা হিসেবে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ভোগদখল করছেন উপজেলার গেগরা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী খন্দকারের নাতি শফিকুল ইসলাম খন্দকার, আসাদুজ্জামান খন্দকার ও আনোয়ারুল ইসলাম খন্দকার। ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে ওই জমি ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করেন তারা। জমিটির উত্তর পাশে ভেটেশ্বর খাল প্রবাহিত। আর এ জমির ফসলই তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ।



সাম্প্রতিক সময় সরকার খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করলে মুল খাল রেখে দক্ষিণে তিন কৃষকের মালিকানাধীন জমিতে লাল নিশানা সাটান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি), ইউএনও এবং জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে কয়েক দফায় অভিযোগ করে তদন্তের দাবীজানান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। কর্মকর্তাদের হাতে পায়ে ধরেও অভিযোগটির সরেজমিন তদন্ত করাতে পারেননি তারা। অপরদিকে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুদের মোটা অংকের টাকার জোরে তদন্তের অজুহাতে দীর্ঘ সময় কালক্ষেপণ করে খাল পুনঃখনন চালিয়ে যায় প্রশাসন।


কোনো রূপ নোটিশ ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মুল খালের উত্তরে থাকা প্রভাবশালী ভূমি মালিকদের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে খালটি খাস জমি থেকে দক্ষিণে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে সরিয়ে নেয়। ফলে প্রভাবশালীরা খাস জমির মালিক বলে যান। অপর দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে খালটি স্থানান্তরিত হওয়ায় ভূমিহীন হয়ে পড়েন তিন কৃষক পরিবার।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এক কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুক্তি-মূল্যে আট কিলোমিটার খালটি পুনঃখনন কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলাম। প্রথম দিকে বাঁধা দিতে গিয়ে প্রভাবশালীদের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরকারি কাজে বাধাদান মামলার হুমকি প্রদান করে জোরপূর্ব ৩শত মেহগনি গাছ, বাঁশ বাগান ও ফসলি জমির উপর ভেকু মেশিনে খাল খনন করে পূর্বে খাল ভরাট করে প্রভাবশালীদের দখলে দেন।


অবশেষে বেঁচে থাকার অবলম্বন জমিটুকু উদ্ধার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভূমি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন তিন কৃষক। কিন্তু সরকার পক্ষ তিন দফায় সময় চেয়েও অতিরিক্ত আরো দুই দফায় আদলতে গড়হাজির থাকেন। ফলে কোনো সুরাহা না হওয়ায় পুনরায় জমি উদ্ধারের হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। প্রায় দুই শত মণ ধান উৎপাদনের জমির কাগজে মালিক থেকেও ভূমিহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।



ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম খন্দকার বলেন, রেকর্ড, দলিল, নামজারি ও খাজনা সব আমাদের নামে। অথচ পাশে খাস জমি রেখে পুরাতন খাল ভরাট করে আমাদের ফসলি জমিতে খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা খালটি সরিয়ে দিয়ে খাস জমি নিজেদের দখলে নিয়েছে। বিষয়টি ঊচ্চমহলের তদন্ত দাবি করেন তিনি।


খাল পুনঃখনন কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, খালের পানি রক্ষায় যেটাতে সহজতর হবে। সেদিকে খালটি খনন করা হয়েছে। তবে কারো ব্যক্তিগত জমিতে নয়, খনন হয়েছে এক নং খতিয়ান ভুক্ত খাস জমিতে। তবে সেই জমির ভূমি উন্নয়ন কর কেন ভূমি অফিস গ্রহণ করেছেন। সেটা ভূমি অফিসের বিষয় বলেও দাবি করেন তিনি।


কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) আবু সাঈদ বলেন, কৃষকদের অভিযোগটি সার্ভেয়ারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সার্ভেয়ার একাই দুই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করায় তদন্ত করতে পারেননি। তবে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।


বিবার্তা/জিন্না/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com