রাজশাহীতে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। দাম ভালো থাকায় এবার লাভের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। বিভাগটিতে এবার আবাদও বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বিঘা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনালী আঁশের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে এবার। বর্তমানে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, এবার রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গতবারের চেয়ে এক হাজার ২১ হেক্টর (সাত হাজার ৬০০ বিঘা) বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে। এবারে হয়েছে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। এবারে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৫৭৭ বেল (১ বেল সমান প্রায় ৫ মণ বা প্রায় ১৮৭ কেজি)।
পাটচাষি ও কৃষিবিদরা জানান, সরকারিভাবে খাদ্যশস্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়ায় পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২ বছর যাবত ভালো দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলে পাটের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। রাজশাহীতে বৃদ্ধি পেয়েছে পাটের আবাদ। এজন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে রাজশাহীতে বেসরকারি পর্যায়ে নির্মিত কয়েকটি জুটমিল।
এবারও চলতি খরিপ-১ মৌসুমে রাজশাহীতে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে এবারও পাটের ভালো উৎপাদন হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও দাম ভালো থাকায় লাভ হচ্ছে। তাদের হিসাব মতে, পাটের আবাদ করতে বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাট উৎপাদন হয়েছে বিঘায় ৮ থেকে ১২ মণ।
গতবার মৌসুমের শুরু থেকেই পাটের দাম ভালো ছিল। প্রতিমণ পাট বিক্রি হয় ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। মৌসুমের শেষদিকে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। চাষিরা মনে করেন, মধ্যসত্ত্বভোগী ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না থাকলে পাটের দাম আরো বেশি হতো। চাষিরা পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে উঠতি মৌসুমে দর নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জিনোম আবিষ্কার, পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সরকারি প্রণোদনা এবং সর্বশেষ পাট থেকে পলিথিন আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও শুধু কাঙ্ক্ষিত বাজারমূল্য না পাওয়ায় তুলনামূলকভাবে পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন চাষিরা। সোনালী আঁশের এ দেশে পাটচাষ আশানুরূপ নয় বলে দাবি করেছেন অভিজ্ঞজনরা।
জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর উপজেলায় পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাটকাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানো এবং শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও তার পরিবারের সদস্যরা। কোথাও কোথাও খেতে পাট গাছ কাটছে, কোথাও জাগ দেয়ার জন্য পাটের আঁটি সংরক্ষণ করছে। আবার কোথাও আঁশ ছড়াচ্ছে এবং গৃহবধূরা পাট শুকাচ্ছেন। দাম ভালো থাকায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
পাট ব্যবসায়ী ও নওহাটা মিলসের মালিক মনসুর বলেন, গতবার থেকে পাটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহীর পাটের বড়বাজার নওহাটায় নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে জুটমিল গড়ে ওঠায় চাষিরা পাটের দাম ভালো পাচ্ছেন। এবারো দাম ভালো পাবেন’।
তিনি বলেন, এ এলাকার পাটের মান ভালো করলে চাষিরা আরো বেশি দাম পাবেন। আজকে প্রতিমণ পাট ক্রয় হবে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
দেশে আদমজি জুটমিলসহ বড় বড় জুটমিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চাষিরা কয়েক বছর শুধু শাক ও গৃহস্থালি কাজের জন্য পাটচাষ করতেন। ওই অবস্থায় জেলায় ২০০১ সালে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল।
বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ছোট পাটকল স্থাপনের পরে আবারো পাটচাষের পরিধি বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে সেখানে জেলায় ১৪ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল।
পাটের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আবারো পাট চাষ কমতে থাকে। ২০১২ সালে পাটচাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ হেক্টর। ২০১৩ সালে ১২ হাজার ১০১ হেক্টর এবং পরের বছরে মৌসুমে আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। গতবার আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে। এবার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক সামছুল হক বলেন, এবারে পাটচাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় আবাদ ভালো হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। দাম ভালো পেলে আবারো পাটের সুদিন ফিরবে ও সোনালী আঁশের মর্যাদা বাড়বে। লাভবান হবেন চাষিরা। আগামীতে আরো বেশি পাট চাষ হবে বলে তিনি আশা করেন।
বিবার্তা/তারেক/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]