হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ আখ্যানমূলক ধর্মগ্রন্থ-সমষ্টি হলো অষ্টাদশ পুরাণ। পুরাণে সৃষ্টি থেকে প্রলয় পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, রাজন্যবর্গ, যোদ্ধৃবর্গ, ঋষি ও উপদেবতাগণের বংশবৃত্তান্ত এবং হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব, দর্শন ও ভূগোলতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। পুরাণে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো দেবতাকে প্রাধান্য দেয়া হয় এবং তাতে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রাবল্যও লক্ষিত হয়। এই গ্রন্থগুলি প্রধাণত আখ্যায়িকার আকারে রচিত, যা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আসুন জেনে নেয়া যাক এই ১৮টি পুরাণের নাম ও পরিচয় কী।
১. অগ্নিপুরাণ বা আগ্নেয় পুরাণ: সঠিক রচনাকাল জানা যায় না। শ্লোকসংখ্যা ১১৫০০। এটি একটি প্রাচীন পুরাণ এবং একে ‘পৌরাণিক ও সাহিত্যবিদ্যার কোষগ্রন্থ’ বলা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, ঋষি বশিষ্ঠের অনুরোধে অগ্নি এই পুরাণ রচনা করেছিলেন। এই পুরাণে বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের বর্ণনা, বংশানুচরিত, সৃষ্টিতত্ত্ব, ভূগোল, ছন্দ, অলংকার, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ, রাজনীতি, অশ্বচিকিৎসা ইত্যাদির বর্ণনা আছে। এটি বৈষ্ণব পুরাণ; তবে এতে তান্ত্রিক উপাসনা পদ্ধতি, লিঙ্গপূজা, দুর্গাপূজা ইত্যাদি শাক্ত ও শৈব বিষয়বস্তুও সংযোজিত হয়েছে।
২. ভাগবত পুরাণ (১৮,০০০ শ্লোক): সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় পুরাণ। এই পুরাণের মূল উপজীব্য বিষ্ণুর দশাবতারের কাহিনি। দশম স্কন্দটি গ্রন্থের বৃহত্তম অধ্যায়; এই অধ্যায়ে কৃষ্ণের লীলা বর্ণিত হয়েছে। পরবর্তীকালে একাধিক ভক্তি আন্দোলনের মুখ্য বিষয়বস্তু কৃষ্ণের বাল্যলীলা এই পুরাণেই লিপিবদ্ধ।
৩. ভবিষ্য পুরাণ (১৪,৫০০ শ্লোক)।
৪. ব্রহ্মপুরাণ বা আদিপুরাণ (রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টীয় অষ্টম-দ্বাদশ শতাব্দী): শ্লোকসংখ্যা ২৪,০০। কিংবদন্তি অনুসারে, সূত লোমহর্ষণ নৈমিষারণ্যে উপস্থিত ঋষিদের কাছে এই পুরাণ প্রথম বর্ণনা করেন। এই পুরাণে ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি, দেব, মনু চন্দ্র ও সূর্য বংশের বিবরণ, বিশ্বের ভূগোল, স্বর্গ-নরক, তীর্থের মাহাত্ম্য, সূর্য ও বিষ্ণু উপসনার পদ্ধতি, আদিত্যগণের বিবরণ, বিষ্ণু-সংক্রান্ত পৌরাণিক গল্প, শিব-পার্বতীর গল্প, কৃষ্ণের জীবনী, বর্ণাশ্রম ধর্ম, নীতিধর্ম ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে। এই পুরাণের প্রক্ষিপ্ত অংশগুলি অন্যান্য পুরাণ থেকে গৃহীত এবং কয়েকটি প্রক্ষিপ্ত তীর্থমাহাত্ম্যের বর্ণনা বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব ও সৌর সম্প্রদায়ের লেখকদের রচনা।
৫. ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ (১২,০০০ শ্লোক; হিন্দু প্রার্থনাগাথা ললিত সহস্রনাম এই গ্রন্থের অন্তর্গত)
৬. ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ (১৮,০০০ শ্লোক)।
৭. গরুড় পুরাণ (১৯,০০০ শ্লোক)।
৮. বিষ্ণু পুরাণ (২৩,০০০ শ্লোক)।
৯. কূর্ম পুরাণ (১৭,০০০ শ্লোক)।
১০. লিঙ্গ পুরাণ (১১,০০০ শ্লোক)।
১১. মার্কণ্ডেয় পুরাণ (৯,০০০ শ্লোক; পবিত্র শাক্ত ধর্মগ্রন্থ দেবীমাহাত্ম্যম্ এই পুরাণভুক্ত)।
১২. মৎস্য পুরাণ (১৪,০০০ শ্লোক)।
১৩. নারদ পুরাণ (২৫,০০০ শ্লোক)।
১৪. পদ্ম পুরাণ (৫৫,০০০ শ্লোক)।
১৫. শিব পুরাণ (২৪,০০০ শ্লোক)।
১৬. স্কন্দ পুরাণ (৮১,১০০ শ্লোক): বৃহত্তম পুরাণ। একাধিক পাঠান্তর সংবলিত এই পুরাণের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বহু কাহিনি-উপকাহিনি ও কিংবদন্তির কথা। একাধিক গ্রন্থে এই পুরাণের উদ্ধৃতি প্রাপ্ত হয়।
১৭. বামন পুরাণ (১০,০০০ শ্লোক)।
১৮. বরাহ পুরাণ (১০,০০০ শ্লোক)।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]