শিরোনাম
বাঘের সাথেই বড় হয়েছে টিয়াগো
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:১৬
বাঘের সাথেই বড় হয়েছে টিয়াগো
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

এক হ্রদে এক জোড়া জাগুয়ারের সাথে ১২ বছরের টিয়াগো সিলভিয়েরা। এদের একজন রীতিমত টিয়াগোর গলা জড়িয়ে ধরে আছে। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।


ছবিটি এত জনপ্রিয় হওয়ায় অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল ছবিটি ভুয়া নয়তো?


ব্রাজিলে জন্ম টিয়াগো শিশু বয়স থেকে জাগুয়ারদের সাথে খেলাধূলা করে বড় হয়েছে। ওদের সাথেই থাকে টিয়াগো।


বিবিসি নিউজ ব্রাজিলকে ১২ বছরের কিশোর টিয়াগো বলেছে, আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে বলেছিল ছবিটা ভুয়া। কিন্তু ছবিটা আসল। অনেকের কাছে ছবিটা দারুণ ভাল লেগেছে এবং ওরা জাগুয়ার দুটো দেখতে চেয়েছে। সবাই তো আমার মতো ভাগ্যবান নয়, তাই ওদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা আমি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।



টিয়াগোর বাবা লিয়ান্দ্রো সিলভিয়েরা আর মা আনা জাকোমো দুজনেই বিজ্ঞানী। ব্রাজিলের জাগুয়ার ইনস্টিটিউটে কাজ করেন তারা। তাদের মূল লক্ষ্য বাঘ, চিতাবাঘ, জাগুয়ারসহ জাতীয় বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা ও তাদের সংরক্ষণ।


টিয়াগোর বাবা বলেছেন, আমাদের ছেলে এমন একটা পরিবেশে জন্মেছে যেখানে শিশু বয়স থেকে সে জাগুয়ারদের সাথে বড় হয়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলতে হয় সেটা ও সহজাতভাবেই শিখেছে। আমরা অবশ্যই ওকে সবকিছু করতে দিই না। কিন্তু ও নিজেও জানে কী করা উচিত বা উচিত না।


তিনি এই ভাইরাল হওয়া ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি বলেন, ওরা টিয়াগোর দৈনন্দিন জীবনের অংশ, ওর জীবনে এটা অস্বাভাবিক কিছু না।


টিয়াগোর যখন জন্ম তখন তার মা-বাবা তিনটা জাগুয়ার ছানাকে বড় করছিলেন। বেড়াতে বের হলে পথে তারা থামতেন চারটে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য। টিয়াগো আর তিন জাগুয়ার ছানা। ট্রাক নিয়ে বেড়াতে বেরতেন সিলভিয়েরা পরিবার।



টিয়াগো বলেছেন, আমাদের এটা ভালবাসা আর সম্মানের একটা সম্পর্ক। জন্তু-জানোয়ারের দেখাশোনায় আমি মা-বাবাকে সবসময় সাহায্য করেছি। আমার ওদের সঙ্গ খুব ভাল লাগে।


জন্তু জানোয়ারের সাথে মেলামেশায় ঠিক কোথায় সীমারেখা টানতে হবে তা টিয়াগোকে শিখিয়েছে তার মা-বাবা।


লিয়ান্দ্রো বলেন, এ ধরনের প্রাণী মানুষকে খাওয়ার জন্য মারে না। এরা যা করে তা শুধু মানুষের আচরণের প্রতিক্রিয়ায়। কাজেই তাদের সম্মান দেখানো উচিত। ওদের শরীরের ভাষা দেখে আপনাকে বুঝতে হবে ওদের কত কাছে যাবেন অথবা যাবেন না।


তিনি বলেন, সীমারেখাটা কোথায় টানবেন সেটা বুঝতে হবে। জাগুয়ার যদি আপনার সঙ্গ চায়, ও নিজেই আপনার দিকে আসবে। ওরা সামাজিক প্রাণী নয়। কিন্তু মানুষের সঙ্গে ওদের আজীবনের বন্ধন গড়ে উঠতে পারে।


টিয়াগোর মা বলেছেন, তার ছেলে আর জাগুয়ারদের নিয়ে তাকে এখনো কোনো বিপদে পড়তে হয়নি। তবে তিনি তার ছেলেকে কখনো জাগুয়ারদের সাথে একা ছেড়ে দেননি।



তিনি বলেন, আমরা সবসময় জাগুয়ার ও অন্যান্য সব জন্তুর ব্যাপারে খুবই সতর্কতা নিয়েছি। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই কড়া নিয়মকানুন মেনে চলি।


১২৩ একর জমির ওপর সিলভিয়েরা ও জাকামোর অভয়ারণ্য। তারা পর্যটকদের সেখানে ঢুকতে দেন না। কারণ তারা জন্তুদের বিরক্ত করতে চান না, তাদের সম্মান রাখতে চান। তারা এই সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তুলেছিলেন ২০০২ সালে শুধু জাগুয়ার নিয়ে গবেষণার জন্য। পরে ব্রাজিলের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থার অনুরোধে তারা অনাথ জাগুয়ার ছানাগুলোর দেখাশোনার দায়িত্ব নেন।


বর্তমানে তাদের অরণ্য এলাকা মূলত জাগুয়ারদের প্রজনন ভূমি। সিলভিয়েরা বলেছেন, এই প্রজনন ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির ৯৫ শতাংশ অর্থই তারা ব্যক্তিগতভাবে দেন, বাকিটা আসে দানের অর্থ থেকে। বর্তমানে তারা দেখাশোনা করছেন ১৪টি জাগুয়ারের। এর মধ্যে চারটি শিশু। গত এক দশকে তারা বড় করেছেন ৩৫টি জন্তুকে।


বিপন্ন প্রজাতির পশুর তালিকায় জাগুয়ার রয়েছে। যদিও পৃথিবীর ২১টি দেশে জাগুয়ার পাওয়া যায়। তবে বিশ্বে জাগুয়ারের প্রায় অর্ধেকই রয়েছে ব্রাজিলে। সুত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com