শিরোনাম
নাইজেরিয়ার বোতল বাড়ি
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৪৭
নাইজেরিয়ার বোতল বাড়ি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব, বাড়ছে পরিবেশ দূষণও। উন্নয়ন ও অগ্রগতির এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঠেকাতে মানুষও উদ্ভাবন করে চলেছে নিত্যনব কৌশল। যেমন, প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে এবং বেকারত্ব দূর করতে নতুন এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। প্রকল্পের আওতায় প্লাস্টিক বোতল ও বালি দিয়ে বানানো হচ্ছে বাড়ি। বলা হচ্ছে, এই বাড়িগুলো পরিবেশসম্মত ও টেকসই। এমনকী ভূমিকম্পপ্রতিরোধী ও বুলেটপ্রুফ।


প্রায় ১৯ কোটি মানুষের দেশ নাইজেরিয়ায় প্লাস্টিক একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। প্লাস্টিক বোতল দেশটির শহরগুলোর পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরো বাজে রূপ নেয়। বছরে উৎপাদিত ৩ দশমিক ২ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশটিতে নেই তেমন কার্যকর ব্যবস্থা। ফলে রিসাইক্লিং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে।


দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত নির্মাণ প্রকৌশলী ইয়াহিয়া আহমেদ, যিনি জার্মানিতে ২৭ বছর ধরে বাস করছেন। দক্ষিণ অ্যামেরিকায় এ ধরনের কিছু বাড়ি দেখেই এই ধারণাটি পান ইয়াহিয়া। তিনি বলেন, ‘‘জার্মানিতে এক বন্ধু আমাকে এ বুদ্ধি দেয়। ভাবলাম, নাইজেরিয়াতে তো এটা কাজে লাগানো যায়!’’


উপরের ছবিটি দেখুন। নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বানানো হচ্ছে এই বাড়ি। প্লাস্টিক, বালি ও কংক্রিট মিশিয়ে তৈরি এই বাড়িই মহাদেশটিতে সবচেয়ে বড়। বাড়িটি বানাতে এ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে ৪৬ হাজারেরও বেশি পলিথিলিন টেরেফথালেট বোতল। বোতলগুলোর কিছু-কিছু ডাস্টবিন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে,অনেকে স্বেচ্ছায় দানও করেছেন অনেক বোতল।


নাইজেরিয়ার ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের এক-চতুর্থাংশেরই কোনো নিয়মিত আয় নেই। তাই অনেককেই শেষ পর্যন্ত জীবনধারণে বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি বা চুরি। ইয়াহিয়া আহমেদ বলেন, ‘‘এদের অনেকে রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়, কেউ জড়িয়ে পড়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে। এজন্য তাঁদের বিকল্প উপায় দিতে হবে।’’


এ প্লাস্টিকবাড়ির নির্মাণ প্রক্রিয়া বিস্ময়করভাবে সহজ। প্লাস্টিকের খালি বোতলগুলো প্রথমে বালি ও পাথরকুচি দিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর নাইলনের দড়ি দিয়ে বেঁধে সেগুলোকে একটার ওপর একটা সাজিয়ে কাদা দিয়ে আটকে দেয়া হয়। এই পদ্ধতি যে শুধু পরিবেশবান্ধব তা-ই নয়, খরচও অনেক কম। এতে নির্মাণখরচ প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ কমানো সম্ভব।


বোতল বাড়ির আরেক বড় সুবিধা এর স্থায়ীত্ব। বালিভর্তি বোতলগুলো প্রায় অবিনশ্বরই বলা চলে। দক্ষিণ অ্যামেরিকার হন্ডুরাসে বানানো এমন কিছু বাড়ি ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পেও অক্ষত ছিল। নির্মাতাদের দাবি, এই বাড়িগুলো বুলেটপ্রুফ।


প্রশিক্ষণ


ইটের বাড়ি বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সিইবা, কিন্তু গত সাত বছর ধরে তিনি ইটের বদলে বাড়ি বানাচ্ছেন বোতল দিয়ে। সিইবা বলেন, ‘‘প্রথমে বোতল দিয়ে বাড়ি বানাতে খুব অস্বস্তি লাগতো। কিন্তু একবার কৌশল শিখে গেলে সব সহজ হয়ে যায়৷’’


জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সাত বছর আগে নাইজেরিয়ার কিছু নির্মাণশ্রমিককে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ইয়াহিয়া আহমেদ। তাঁর সেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন পরিণত হয়েছেন দক্ষ প্রশিক্ষকে। এখন বোতলবাড়ি নির্মাণকাজে আগ্রহীদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com