বাংলাদেশে প্রায়-সবাই মনে করেন এবং বলেনও যে, উন্নত দেশগুলোতে বাড়িঘরে ''কাজের লোক'' লাগে না, সবাই নিজের কাজ নিজেই করে ফেলে। কথাটা অনেকাংশে সত্য বটে, তবে পুরোপুরি সত্য নয়। জেনে রাখুন, জার্মানির মতো দেশেও ‘কাজের লোক' ছাড়া অনেক সংসার অচল হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ মানুষ নিজের কাজ নিজেই সেরে ফেললেও কিছু ক্ষেত্রে ‘কাজের লোক' ছাড়া চলে না। আবার এ ''কাজের লোকদের'' আইনি পথে নিয়োগ না করলেও অনেক সমস্যা হয়ে থাকে।
দেশের অভিজ্ঞতা, বিদেশে অসহায়
বাংলাদেশ-ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অনেক মানুষ জার্মানির মতো দেশে এসে জীবনযাত্রার মান, চলাফেরার সুবিধা, চাকচিক্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। তবে যাঁরা কিছুকালের জন্য অথবা পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে এসেছেন, তাঁরা সবকিছু গুছিয়ে সংসার চালু করার পর একটি বিষয় টের পান। মনে প্রশ্ন জাগে, ঘরদোর ও বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় কাচা, ইস্ত্রি, রান্নাবান্না, বাসন মাজা – এ সব কাজ কে করবে? দেশের মতো ‘কাজের লোক', ‘কাজের বুয়া' কোথায় পাবো? সারা সপ্তাহ চাকরি অথবা সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকার পর ঘরের সব কাজ নিজে করা যে বড্ড কঠিন! ডিশ ওয়াশার, ওয়াশিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো যন্ত্র গৃহস্থালির কিছু কাজ সহজ করে দেয় বটে, কিন্তু তার পরেও কিছু কাজ থেকে যায়।
এটা ঠিক।জার্মানিতেও ‘কাজের লোক' পাওয়া ও রাখা সম্ভব, তবে তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একাধিক বিষয়। প্রথমত যিনি কাজের লোক রাখবেন, তার আর্থিক সামর্থ্য থাকা চাই। কাজের লোকের ঘণ্টা হিসেবে মজুরি স্থির করতে হয়। সেই ব্যক্তি সপ্তাহে এক বা একাধিক বার নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা এসে কাজ করে যাবেন। কাজের ধরনও আগে থেকে স্থির করা থাকবে। আর হ্যাঁ, একটি বিষয় ভুললে চলবে না। জার্মানিতে শ্রমের মর্যাদা সব পেশার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই সেই ব্যক্তির প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাতেই হবে।
আইনি, না বেআইনি পথ?
জার্মানিতে অনেক পরিবারই সংসার সামলাতে এমন ‘পুৎসহিল্ফে' বা ‘কাজের লোক' রাখেন। পরিচিত মহলে খোঁজখবর করলে সাধারণত ‘কাজের লোক'-এর সন্ধান পাওয়া যায়। সেই ব্যক্তির সঙ্গে কাজের ধরন, মজুরি ইত্যাদি নিয়ে একটা রফায়ও আসা যায়। দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হলে সেই ব্যবস্থা অনেক কাল চলতে পারে। কিন্তু ''সমস্যা'' হলো, জার্মানিতে এমন নথিবিহীন শ্রম বেআইনি। কাজের পরিসর যতই ছোট হোক না কেন, জার্মানিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তা করতে হয়। আয়কর, সামাজিক বীমাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ ও কর্মীর নাম নথিভুক্ত করতে হয়।
কেউ এই দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে - প্রথমত ধরা পড়লে জরিমানার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়ির কাজ জার্মানির কর্মসংস্থান দপ্তরে ‘মিনি জব' হিসেবে স্বীকৃত। তাই সেই কাজ নথিভুক্ত না করলে ৫,০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। সেই ‘কাজের লোক' বিদেশি হলে এবং তাঁর জার্মানিতে থাকা ও কাজের অধিকার না থাকলে জরিমানার অঙ্ক বা শাস্তির মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। নথিবিহীন ‘কাজের লোক' চুরি করে পালালে থানায় ডায়রি করাও কঠিন। তখ উল্টো আপনারই জরিমানা হয়ে যেতে পারে। কাজে যাবার পথে অথবা কাজের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে জার্মানিতে নথিভুক্ত কর্মীরা দুর্ঘটনা বীমার সুযোগ নিতে পারেন, কিন্তু ‘কাজের লোক' নথিভুক্ত না হলে চিকিৎসার ব্যয় ও জরিমানার ধাক্কা আপনার কাঁধেই পড়তে পারে। তার ওপর সরকার-স্বীকৃত ন্যূনতম মজুরি মেনে চলার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তার থেকে কম মজুরি দিলে শুধু নিয়োগকর্তা নয়, ‘কাজের লোক' নিজেও নাজেহাল হতে পারেন।
এমন-সব সমস্যা এড়াতে অনেকে কিছু বেসরকারি সংস্থার শরণাপন্ন হন, যারা ‘কাজের লোক' ঠিক করে দেয়। যাবতীয় কাগজপত্র সামলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব নিয়ে গ্রাহককে ঝুটঝামেলা থেকে মুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারাই নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ওই কর্মীর মজুরি গ্রহণ করে। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, এরকম কিছু সংস্থা আইন অমান্য করে থাকে। তাই ভালোভাবে যাচাই না করে কোনো সংস্থার মাধ্যমে ‘কাজের লোক' নিয়োগ না করাই শ্রেয়৷
আইনি পথে সুবিধা
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নথিভুক্ত করে ‘কাজের লোক' রাখার কিছু সুবিধা রয়েছে৷ যেমন, আয়করের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, মজুরি বাবদ যে ব্যয় হয়েছে, তার কিছু অংশ কার্যত রাষ্ট্রই দিয়ে দেয়। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে করদাতা হিসেবে আপনিও সেই সুবিধা পেতে পারেন। বৈধভাবে সবকিছু করলে জরিমানা বা আইনি জটিলতার ঝুঁকিও দূর হয়। (তা সত্ত্বেও একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে জার্মানিতে প্রায় ৮০% ‘কাজের লোক' বেআইনি ভিত্তিতে নিযুক্ত ছিলেন)।
এমনসব রক্ষাকবচ ‘কাজের লোক'-এর অধিকারও পাকাপোক্ত করে। উপযুক্ত পারিশ্রমিক ছাড়াও তাঁরা নিজেদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেতে পারেন৷।বাৎসরিক ছুটি, স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বীমার মতো সুবিধাও তিনি ভোগ করতে পারেন। সূত্র ডয়চে ভেলে
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]