সাত বছরের মেয়েটি এখনো বিশ্বাসই করতে পারছে না, বাঁ হাতটা নেই। অনেক সময়ে বাঁ হাত দিয়েই ধরতে চাইছে রং পেনসিলের প্যাকেট, খাতা। খাট থেকে নামতে গিয়ে টাল সামলাতে পারছে না। পুতুলকে শাড়ি পরাতে গিয়ে দু’চোখ ভরে যাচ্ছে পানিতে। ডান হাত কপালে ঠেকিয়ে বলে চলেছে, হাতটা ফিরিয়ে দাও ঠাকুর।
ঘটনাটা ঘটেছিল ২০ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে গোলমাল তখন তুঙ্গে। মারদাঙ্গার খবর আসছে নানা দিক থেকে। তবে তাদের পরিবারে যে সেই আঁচ পড়তে পারে, ভাবেননি শম্ভু হালদার বা তার স্ত্রী দীপালি। ভোরবেলায় ফুল তুলতে গিয়ে খেলার জিনিস মনে করে বোমা কুড়িয়ে এনেছিল মেয়ে পৌলমী।
বাবা-দাদুরা দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন, ফেলে দে ওটা হাত থেকে। থতমত খেয়ে বোমা ফেলেও দেয় পৌলোমী। তার পরেই বিশাল শব্দ, সঙ্গে আলোর ঝলকানি। রক্তে ভিজে বেহুঁশ ছোট্ট শরীরটা। বোমা কার ছিল, তা নিয়ে পুলিশের কাছে দু’দলই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ জমা করে। দু’পক্ষেরই দাবি, ভোটের সময়ে সন্ত্রাস করার জন্য আনা হয়েছিল বোমা।
আরজিকর হাসপাতালে তিনবার অস্ত্রোপচারের পরে প্রাণে বেঁচেছে পৌলোমী। কিন্তু বাঁ হাতটা কব্জির উপর থেকে বাদ গিয়েছে। ব্যান্ডেজ বাঁধা সেই হাত লুকিয়ে রাখতে চায় মেয়ে। আর বলে, কখনো ফুল তুলতে যাব না।
হাড়োয়ার গোপালপুর দক্ষিণ হালদারপাড়ায় থাকে পৌলোমীরা। বড় বোন পল্লবী পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। পৌলোমী পড়ে তৃতীয় শ্রেণি। শম্ভু অসুস্থ, কাজকর্ম তেমন করতে পারেন না। সেলাই করে কোনো মতে সংসার চালান দীপালি।
দীপালি জানান, এখনো ঘুমের মধ্যে চমকে চমকে ওঠে মেয়ে। কেঁদে ফেলে হঠাৎ। ঘুম ভাঙলে বলে, বড় হয়ে আর কী হবে। আমার তো একটা হাতই নেই! সর্বক্ষণ মেয়েকে আগলে রেখেছেন দীপালি। মায়ের কোলে বসে পৌলোমী বলে চলে, আমি কিন্তু ভাল ছবি আঁকতে পারি। নদী, গাছ, ফুল... মানুষও আঁকতে শিখেছি। আনমনা হয়ে বলে, দুষ্টু লোকেরা কেন যে আমার হাতটা নিয়ে নিল, বলতে পারো?
মেয়ের প্রশ্নের সামনে স্থির থাকতে পারেন না বাবা। পাশের ঘরে গিয়ে চোখের জল মোছেন। বলেন, হাসপাতালে যখন খুব কান্নাকাটি করত, বলেছিলাম, নতুন একটা হাত কিনে দেব। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জেনেছি, নকল হাতের দাম দেড়-দু’লাখ রুপি। অঙ্কটা মনে এলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।
বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে সে ঘরে চলে এসেছিল মেয়ে। কথায় কথায় বলে, আমাকে একটা নতুন হাত কিনে দাও না...। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]