শিরোনাম
দারিদ্র্য যা করাচ্ছে কেনিয়াবাসীকে
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৮, ১৭:৪৭
দারিদ্র্য যা করাচ্ছে কেনিয়াবাসীকে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ক্রিকেটের সুবাদে পূর্ব আফ্রিকান দেশ কেনিয়ার নামটি বাংলাদেশের অনেক মানুষেরও জানা। তবে কেবল ওইটুকুই। আমরা জানি না কেনিয়া নামের দেশটির মানুষ, তাদের চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-বেদনা, দুঃখকষ্টের কোনো খবরই। আমরা কি জানি, দেশটির বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন এতোই অভাবের যে তারা ক'টি টাকার জন্য বিদেশি পর্যটকদের কাছে স্ত্রীদের ''ভাড়া'' দেয়!


অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই ওই দেশে বাস্তব। আল জাজিরা লিখেছে সে-কাহিনী :


সেদিন ছিল রবিবার। আকাশ ছিল মেঘলা। ভোরের আলো ফুটতেই ধড়মড় করে বিছানা ছাড়লো কেনিয়ার কে'ওয়ালে কাউন্টির (জেলা) মাভেনি গ্রামের বাসিন্দা, তিন সন্তানের পিতা সান্ডে রামাদান। এখনই কাজে ছুটতে হবে তাকে, দেরি করা যাবে না।


ঝটপট মুখহাত ধুয়ে সবুজ ভেস্ট ও খাকি শর্টস পরে পা বাড়ালো লিভিং রুমের দিকে ; তার বৌ জ্যানেট ওয়াম্বুই সেখানে তার জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে অপেক্ষা করছে।


''ভালো করেছ আমাকে সকাল-সকাল ডেকে দিয়ে। ক্লায়েন্টের কাছে দেরিতে যাওয়া আমার একদম পছন্দ নয়'' , চায়ে চুমুক দিতে-দিতে বৌকে বললো সান্ডে, ''আর মহিলা বলেছে এ সপ্তাহের পুরোটা ওর সঙ্গে কাটাতে।''


পাঠক, শুনে আহত হবেন না যে সান্ডে একজন পুরুষ যৌনকর্মী। আর তার বৌ, লম্বাচওড়া, কৃষ্ণবরণী জ্যানেটও একই পথের পথিক। নিজেদের গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি দামী কটেজে এক জার্মান ট্যুরিস্টের সঙ্গে ১০ দিন কাটিয়ে সেও দু'দিন আগে বাড়ি ফিরেছে।


সান্ডে ও জ্যানেটের সংসারজীবন ২০ বছরের। তারা যে সবসময় ''এরকম'' ছিল, তা কিন্তু নয়। কিন্তু ২০০৬ সালে হঠাৎ সবকিছু কেমন বদলে গেল। সান্ডে তখন কেওয়ালে শহরের দিয়ানি সৈকতে পর্যটকদের কাছে কাপড় ফেরি করে বেড়ায়। এ সময় একদিন এক জার্মান পর্যটক তাকে প্রস্তাব দিয়ে বসে, আমাকে তোমাদের দেশী একটা মেয়েমানুষ যোগাড় করে দিতে পারবে? এসপ্তাহটা আমার সঙ্গে কাটাবে !


প্রস্তাবটা মনে ধরে সান্ডের। সে বললো, আচ্ছা, আমার বোনের সঙ্গে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবো।


সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে কথাটা বৌকে জানালো সান্ডে। বললো, ''তুমি আমার বোন সেজে সুযোগটা নিতে পারো না?'' বললো বটে, তবে স্বামী-স্ত্রী কারোই মনের দোটানা কাটে না। একদিকে চিরকালের নৈতিকতা, অন্যদিকে নিদারুণ অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতার হাতছানি। মনের সাথে লড়াই করতে-করতে কেটে গেল আরো ক'টা দিন। তারপর একদিন স্বামীর ''বোন'' সেজে জার্মান পর্যটকের কামতৃষ্ণা মেটানোর দাবিতে সাড়া দিলো হতদরিদ্র গৃহবধূ জ্যানেট (৩৮)।


জ্যানেট জানে কেন তার দেশের মেয়েরা এভাবে পতিতাবৃত্তিতে জড়ায় আর এ আদিম পেশা কিভাবে তাদের জীবন বদলে দেয়। সে বলে, ''আমাদের জীবনটা ছিল খুব কঠিন। আমার স্বামীর আয়-রোজগারের কোনো ঠিকঠিকানা ছিল না। যাও রোজগার করতো তা ছিল একেবারেই কম। তো এমন অবস্থায় সে যখন বললো 'রাজি হয়ে যাও', আমার তো 'না' করার কোনো পথ ছিল না।''


এখন সান্ডে ও জ্যানেট পরিবার প্রতিদিন তিনবেলা খেতে পায়, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিতেও অসুবিধা হয় না।


কেনিয়ার উপকুলীয় শহরগুলোতে এটা কোনো নতুন কাহিনী নয়। বিশেষ করে মাভেনির মতো দরিদ্র এলাকায় এটা হরদম ঘটছে। স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ''ভাড়া'' দিচ্ছে ধনী পর্যটক, বিশেষ করে ইউরোপীয় পর্যটকদের কাছে; অবশ্য খরিদ্দারকে জানতে দিচ্ছে না যে এটি তার বৌ।


নিজের বৌ ভাড়া দেয়ার পক্ষে যুক্তিও খাড়া করে ফেলেছে এসব মানুষ। যেমন সান্ডের কথা, ''আমার ঘরে বৌ থাকতে আমি কেন আরেক মেয়েকে পয়সা পাওয়ার সুযোগ দেবো? এটা তো আমাদের জন্য পয়সা কামানোর একটা সুযোগ। এ পয়সায় আমাদের কত খরচ চলে যাবে!''


অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! কেনিয়ায় প্রতি বছর এক মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক আসে, যা থেকে রাজস্ব বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা হয় ১০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো। কিন্তু এ বিপুল অর্থের সুফল ওইসব গ্রামের বাসিন্দাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না, যেসব গাঁয়ের মানুষ কেবলই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।


রামাদান জুমা'র কথাই শোনা যাক। ৪৩ বছর বয়সী এ মানুষটি ২০ বছর ধরে বীচ অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, সুদিনে আমরা পর্যটকদের সহযোগিতা করে দৈনিক ৪০ ডলার পর্যন্ত আয় করতাম। কিন্তু এখন জীবন কঠিন হয়ে গেছে। এতোই কঠিন যে আমার অনেক বন্ধু তাদের বৌদের পতিতাবৃত্তিতে নামাতে বাধ্য হয়েছে।


এ আদিম পেশা কেনিয়ার অনেক দরিদ্র পরিবারে স্বচ্ছলতার ছোঁয়া যেমন এনে দিচ্ছে, তেমনি নিয়ে আসছে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর ঝুঁকি। যথেচ্ছ যৌনাচার হু হু করে বাড়াচ্ছে এইডস। এক সরকারি হিসেবে দেখা গেছে, কেনিয়ার উপকুলীয় এলাকায় ২০১৪ সালে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২৫ জন, আর দু'বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৫,৩৩৫।


এভাবেই বাঁচার আশায় মৃত্যুকে আঁকড়ে ধরতে যাচ্ছে কেনিয়ার সহায়সম্বলহীন মানুষগুলো।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com