শিরোনাম
প্রেমিকার পাশেই মৃত্যু নাইজেলের
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:৩৫
প্রেমিকার পাশেই মৃত্যু নাইজেলের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গত পাঁচ বছর ধরে একা থাকলেও একেবারে একা কিন্তু না না। কারণ তাকে ঘিরে ছিল তার মতোই ৮০টি মূর্তি। আর তার মধ্যে থেকেই সে বেছে নিয়েছিল তার প্রেমিকাকে। গত সপ্তাহে তার সেই কংক্রিটের ‘প্রেমিকা’র পাশ থেকেই ‘একাকী’ নাইজেলের দেহ উদ্ধার হয়েছে।


এই নাইজেল হল নিউজিল্যান্ডের উপকূলে মানা দ্বীপের বাসিন্দা— বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক গ্যানেট পাখি! গোটা শরীরটাই সাদা, মাথায় কমলা হলুদের ছোপ এবং ডানার ধারে কালো একটা রেখা। বকের মতো দেখতে এই সুন্দর পাখিটির মৃত্যুতে শোকাহত পক্ষীপ্রেমিকেরা। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়েছে তাকে নিয়ে দুঃখের কবিতার বন্যাও।


২০১০ সালে মানা দ্বীপে গ্যানেট পাখিদের জন্যই একটি ঘাঁটি বানানোর কথা ভেবেছিলেন বনদফতরের কর্মী ও সংরক্ষণকারীরা। কাজটা সহজ ছিল না! কারণ ওই সামুদ্রিক পাখিদের বিষয়ে প্রচলিত ছিল যে, তারা সেখানেই বাসা বাঁধতে পছন্দ করে, যেখানে আগে কোনও গ্যানেট বাসা বেঁধেছিল। তাই ওই দ্বীপে ৮০টি সিমেন্টের গ্যানেট পাখির মূর্তি বানিয়েছিল বনদফতর। তার পর ছিল শুধুই অপেক্ষা! অবশেষে ২০১৩ সালে ওই দ্বীপে পৌঁছায় একটি গ্যানেট। ৪০ বছরে এই প্রথম। ওই গ্যানেটটিকে ঘিরেই বনকর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নাইজেল’।


নাইজেলের আগমনের পরে বনকর্মীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, যে, এই নাইজেলের জন্যই ওই দ্বীপে আরও গ্যানেট পাখি আসবে। কিন্তু সেই আশা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে। আর নাইজেল একা একা বাঁচতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।


ডিপার্টমেন্ট অব কনজারভেশন রেঞ্জার ক্রিস বেল জানিয়েছেন, নাইজেল ওই দ্বীপে তার পাথুরে বন্ধুদের মধ্যে থেকে একটি গ্যানেটের মূর্তিকে বেছে নিয়েছিল। তার পাশেই বাসা তৈরি করে সে। সারাদিন ওই মূর্তিটার কাছেই দেখা যেত নাইজেলকে। মনে হত যেন, ওই মূর্তিটার মধ্যেই নিজের প্রেমিকাকে খুঁজে নিয়েছে সে। ওই প্রেমিকার সঙ্গেই বছরের পর বছর একতরফা ভাবে নিজের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছে সে। এর পর কয়েক সপ্তাহ আগেই আরও তিনটি গ্যানেট পাখি মানা দ্বীপে পৌঁছয়। অনেকেই ভেবেছিল, জীবন্ত সঙ্গী পেয়ে প্রেমিকাকে ভুলে যাবে নাইজেল। কিন্তু আদতে তা হয়নি। কংক্রিটের ‘প্রেমিকা’কে ছেড়ে রক্ত-মাংসের সঙ্গীদের সঙ্গে মিলেমিশে উঠতে পারেনি নাইজেল। এর পর গত সপ্তাহেই তার মৃত্যু হয়েছে।


ক্রিস বেলের বক্তব্য, ‘‘কংক্রিটের ওই গ্যানেট মূর্তিগুলোক দেখে নিজের আদি বাসভূমির কথা ভুলে গিয়েছিল নাইজেল। অনেকে হয়তো তাকে ‘বোকা’ বলবে। কিন্তু সংরক্ষণের দিক থেকে দেখতে গেলে নাইজেল ছিল একটা বিশাল সম্পদ। নাইজেলকে নিয়ে আমাদের আশা ছিল যে, তার মাধ্যমেই মানা দ্বীপে গ্যানেটদের ঘাঁটি তৈরির কাজ এক দিন সফল হবে। শেষ দিকে এসে এ বার মনে হচ্ছে, সেটা সফল হতে চলেছে।’’ সূত্র: আনন্দবাজার


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com