শিরোনাম
লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে অতিমানবীয় উদ্যোগ
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:০৬
লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে অতিমানবীয় উদ্যোগ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ছেলে সন্তান জন্ম নিলে পরিবারে আনন্দের শেষ নেই পক্ষান্তরে কন্যা সন্তান জন্ম নিয়ে মায়ের ওপর অত্যাচারের শেষ নেই। এমনই একটি রীতি চলেছে ভারতে। ছেলে সন্তানকে আশির্বাদ মানলেও কন্যা সন্তানকে মনে করা হয় অভিশাপ হিসেবে। অথচ সন্তানটি ছেলে হবে কি মেয়ে হবে তার কোনটিই মা জ্ঞাত নন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ভারতের প্রায় প্রদেশগুলোতেই মনে করা হয় কন্যা সন্তানের জন্য মা-ই দায়ী।


নারীর ক্ষমতায়নে ও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে বিগত ছয় বছর ধরে এমনই একটি মহতী কাজ করে যাচ্ছেন ভারতের পুনের বাসিন্দা ডা. গণেশ রাখ। তার এই উদ্দোগ্যের মূল কারণ হলো তারপরও যদি কন্যা সন্তানটি তার সঠিক মর্যাদা ফিরে পায় পাশাপাশি তার পরিবারের সবাই তাকে আর্শিবাদ রূপেই গ্রহণ করে।


কী এমন মহৎ কাজ করছেন ডা. গণেশ রাখ? আর তা হলো, তার হাসপাতালে কোনো প্রসূতি মা কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে তার চিকিৎসার জন্য এক রূপিও গ্রহণ করা হয় না! ছয় বছর পূর্বে তিনি একটি ক্যাম্পেইন চালু করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে আরো অনেকেই একই কাজ করেছেন।


ডা. রাখ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ২০০৭ সালে হাদাপ্সার এলাকায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করি। এর পর থেকেই সকল মায়েদের মাঝে অদ্ভুত আচরণ খেয়াল করি। যা আমাকে বিস্মিত করে তোলে।


তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন, গর্ভাবস্থার সময়ে এমনকি সন্তান জন্মদানের মুহূর্তেও অধিকাংশ মায়েরা গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। পুত্র সন্তান হবে কিনা- এই ব্যাপার নিয়ে তাদের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অসীম।


ডা. রাখ জানান, সন্তান জন্মদানের কষ্ট অনেক মায়েরাই মুহূর্তের মাঝেই ভুলে যেতেন পুত্র সন্তান হবার আনন্দে। অন্যদিকে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার ফলে তাদের কষ্ট যেন দ্বিগুণ বেড়ে যেতো।


পুত্র সন্তান জন্ম নেয়া যেখানে একটি পরিবারের খুশির সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হতো, কন্যা সন্তানের জন্ম সেখানে অভিশাপ হিসেবে দেখা হতো। প্রায়ই দেখা যেত কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার কথা শুনে অনেক আত্মীয়রা শিশুর মুখ না দেখেই চলে গেছে।


এমনকি, হাসপাতালের বিল দেবার ক্ষেত্রেও নানান রকম সমস্যা তৈরি করত কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার কারণে। এ সব ঘটনা ও আচরণের কারণে ডা. রাখ মানসিকভাবে খুব কষ্ট পান। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন এমন কিছু তিনি করবেন, যার ফলে খুব অল্প হলেও মানুষের চিন্তাধারা পরিবর্তন করা যায়। এইভাবেই ডা. রাখ-এর এমন চমৎকার ক্যাম্পেইনের সূচনা।


২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি এমন অভিনব সিদ্ধান্ত নেন- কন্যা সন্তান জন্ম নিলে হাসপাতালের ডেলিভারি ফির জন্য কোনো বিল করা হবে না। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশর বেশী কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে একেবারেই বিনামূল্যে। হাসপাতালের সকল রোগীর মাঝে মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে প্রতিটি কন্যা সন্তানের জন্ম আনন্দ নিয়ে পালন করেন হাসপাতালে কর্তব্যরত ৩৫ জন কর্মী।


দিনমজুর রাহুল খালসে বলেন, আমাদের বাসার কাছেও অনেক হাসপাতাল আছে। কিন্তু আমরা দূর থেকে এই হাসপাতালে এসেছি। কারণ ডা. রাখ কোন টাকা গ্রহণ করেন না।


একেবারে ছোট একটি পদক্ষেপ পরবর্তীতে অনেক বড় আকারে ধারণ করেছে। ১০০ জনের বেশী ডাক্তার বর্তমানে কন্যা সন্তানের জন্মের ব্যাপারে পরিবারকে উৎসাহিত করছেন।


ডা. রাখ কখনোই ভাবেননি, তার ছোট একটি পদক্ষেপ এমনভাবে আলোড়ন তুলবে সকলের মাঝে। বিভিন্ন সরকারি অফিস তার কাজের প্রশংসা করেছে। বিখ্যাত বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন ডা. রাখ-এর ব্যাপারে বলতে গিয়ে তাকে ‘রিয়েল হিরো’ বলে অভিহিত করেন।


ডা. রাখ জানান, তিনি মানুষের আচরণ বদলাতে চান। তিনি বলেন, যেদিন কন্যা সন্তানের জন্ম নিয়ে সকলেই আনন্দিত হবেন সেদিন থেকে আবারো বিল গ্রহণ করা হবে। এরপরে কিঞ্চিৎ মজা করে তিনি বলেন, বিল ছাড়া কীভাবে আমার হাসপাতাল চালাবো আমি?


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com