শিরোনাম
চীনের 'বাবা ও মা ক্যান্টিন'
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:০৫
চীনের 'বাবা ও মা ক্যান্টিন'
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

'আমার নাম ইয়াং স্যিউ ইং। আমার বয়স এখন ৭৬ বছর। এই ক্যান্টিন যদিন প্রথম খুলেছিলো, সেদিন থেকেই আমি রোজ এখানে দুপুরের খাবার খাই। এখানকার খাবার খুবই ভালো। দুপুরের খাবারে মাংস, সবজি ও স্যুপ থাকে। আর এ সবই পাওয়া যায় মাত্র তিন ইউয়ানে!'


কথাগুলো বলছিলেন চীনের নানচিং শহরের ছিসিয়া এলাকার উফুচিয়াইউয়ান সম্প্রদায়ের একজন প্রবীণ। তাঁর পায়ের সমস্যা আছে। স্বামী মারা গেছেন আগেই। তিনি এখন ছেলের সঙ্গে থাকেন। কিন্তু তাঁর ছেলে প্রতিদিন ভোর ৬টায় ঘর থেকে বের হয় এবং ফেরে রাত ৮-৯টার দিকে। তাই সে তার মায়ের যত্ন নেয়ার সময় খুবই কম পায়।


নানচিং আইদে তহবিল ২০১৫ সালে আলিবাবা গোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে 'বাবা ও মা ক্যান্টিন' চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল নানচিংয়ের দুই হাজারের বেশি বয়স্ক, বিধবা ও বিপত্নীক, স্বজনহীন, প্রতিবন্ধী ও অক্ষম প্রবীণদের সেবা দেয়া। এখন ইয়াং স্যিউ ইং প্রতিমাসে মাত্র ৬০ ইউয়ান ব্যয় করে এই ক্যান্টিনে প্রতিদিন তিন ইউয়ানের লাঞ্চ খেতে পারেন। তাঁর জন্য এটা সত্যি খুবই সুবিধাজনক। তিনি জানান, যদি 'বাবা ও মা ক্যান্টিন' ডিনার সরবরাহ করা শুরু করে, তবে তিনি প্রথম আবেদন করবেন।


চাং শি ফাং হলেন নানচিং ছিসিয়া এলাকার উফুচিয়াইউয়ান সম্প্রদায়ের 'বাবা ও মা ক্যান্টিন' প্রকল্পের একজন স্বেচ্ছাসেবক। তিনি প্রতিদিন দুপুর ১২টায় ক্যান্টিনে আসেন এবং লাঞ্চ তৈরি করেন। প্রবীণদের লাঞ্চ খাওয়া শেষ হলে তিনি ক্যান্টিন পরিষ্কারের কাজেও অংশ নেন। চাং শি ফাং কোনো কোনো সময় প্রতিবন্ধী প্রবীণদের লাঞ্চ তাদের বাড়িতেও দিয়ে আসেন। ওই সময় তিনি প্রয়োজনে তাদের চিকিত্সাও দিয়ে থাকেন।


তিনি বলেন, 'আমার বয়স ৬২ বছর। আমিও একজন প্রবীণ এবং আমি প্রবীণদের পছন্দ করি। আমি একজন পল্লী চিকিত্সক। সেজন্য আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এখানে কাজ করি।'
'বাবা ও মা ক্যান্টিন' প্রকল্প ২০১৩ সালে আইদে তহবিল ও চিয়াংসু প্রদেশের তথ্য ও বেতার গোষ্ঠীর উদ্যোগে গৃহীত হয়। স্থানীয় প্রবীণরা এ প্রকল্পের কাজে খুবই সন্তুষ্ট।


২০১৪ সালের ডিসেম্বরে 'বাবা ও মা ক্যান্টিন' খোলা হয়। নানচিং ছিসিয়া এলাকায় পুষ্টিবিজ্ঞানী, সুপারভাইজার, সামাজিক কর্মীদের নিয়ে বিশেষ গ্রুপ গঠিত হয়। গ্রুপটি নানচিংয়ের ৬০টিরও বেশি ক্যান্টিন পরিদর্শন করে এবং ৩২টি বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালকদের মধ্য থেকে বাছাই করা ব্যক্তিদের নিয়ে 'নানচিং বাবা ও মা ক্যান্টিন নির্বাহী গ্রুপ' গঠন করে। এ গ্রুপ নিয়মিত ক্যান্টিন পরিদর্শন করে এবং ক্যান্টিনসংক্রান্ত সব কাজ দেখাশোনা করে। সংশ্লিষ্ট প্রবীণদের জন্য পুষ্টিকর লাঞ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করার দায়িত্ব এ গ্রুপের।


প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থাওবাও ওয়েবসাইটের ৬০ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী এতে ৫০ লাখ ইউয়ান দান করেছেন। নানচিং শহরের ৯টি এলাকার ২৯টি সড়কের ৫০টিরও বেশি কমিউনিটিতে এ ধরনের ক্যান্টিন আছে ৫০টি।


'বাবা ‌ও মা ক্যান্টিন' অক্ষম প্রবীণদের বাড়িতে লাঞ্চ পৌঁছেও দিয়ে থাকে। ২৮ বছর বয়সী ওয়াং না বলেন, 'বাবা ও মা ক্যান্টিনের' সেবা শুধু প্রবীণদের জন্য লাঞ্চ সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের উদ্দেশ্যে অন্যধরনের সেবাও দেয়া। যেমন, আমরা লাঞ্চ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি নিঃসঙ্গ প্রবীণদের সঙ্গে বসে খানিকক্ষণ আড্ডা দিতে পারি। আমরা চিকিত্সক পাঠিয়ে তাদের চিকিত্সাসেবা দিতে পারি। এ ছাড়াও তাদের অন্যান্য সেবা দিতে পারি।"


ইয়াং ইয়ান হচ্ছেন ছিসিয়া এলাকা বৃদ্ধাশ্রমের নির্বাহী প্রধান। তার বয়সও ওয়াং না'র মতোই। তিনি বলেন, "সরকার সামাজিক সংস্থাগুলোকে প্রবীণদের সেবা দেয়ার কাজে অংশগ্রহণ করতে উত্সাহ দেয়। স্থানীয় সরকার এসব সংস্থাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।"


ওয়াং না মনে করেন, চীনে 'প্রবীণ সংকট' প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। বয়স্কদের সেবাদান প্রক্রিয়া বাড়ছে, তবে এক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের অভাব স্পষ্ট।


ওয়াং না বলেন, "আমাদের পরিচিত অনেক তরুণ-তরুণী আছে, প্রবীণদের সেবাদানের ব্যাপারে যাদের আগ্রহ আছে। কারণ, তারা উপলব্ধি করে যে, সবাইকে একসময় বৃদ্ধ হতে হবে। তরুণ বয়সে প্রবীণদের সেবা করলে, বয়সকালে নিজেও সেবা পাওয়ার আশা করা যায়।" সূত্র : রেডিও চায়না


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com