শিরোনাম
চীনের এক সন্তান নীতি ও ক্যাটির গল্প
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:৫৯
চীনের এক সন্তান নীতি ও ক্যাটির গল্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চীনের হাংজু শহরের একটি ব্রিজের উপর বহুদিন ধরে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন, নির্দিষ্ট একটি সময় অপেক্ষা করেতেন এক দম্পতি লিডা ও ফেংশিয়াং। অবশেষে তাদের সেই অপেক্ষারও অবসান হয়েছে।


চীনে বহুদিন এক সন্তান নীতিমালা বলবত ছিলো। একটির বেশি সন্তান হলেই দম্পতিদের কঠোর শাস্তি দেয়া হতো। জোরপূর্বক গর্ভপাত, সন্তান নেয়ার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া অথবা জরিমানা করা হতো। তাই একের অধিক সন্তান হয়ে গেলে অনেক দম্পতি ভয়ে তা গোপন করতেন। অথবা কোনো উপায় না থাকলে সেই সন্তানকে পরিত্যাগও করতেন।


তেমনটাই হয়েছিলো ১৯৯৪ সালে জন্ম নেয়া ক্যাটি পোহলারের বেলায়। তার জন্মদাতা বাবা ফেংশিয়াং, গর্ভপাত করে ফেললে আমাদের খুবই কষ্ট হতো। আমাদের মনে হয়েছিলো শিশুটিকে যদি আমরা নিজেরা মানুষ করতে নাও পারি ওকে অন্তত দত্তক দিতে পারবো। শিশুটিকে তাই স্থানীয় বাজারে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।



ফেংশিয়াং বলেন, ওর জন্মের তিনদিন পর আমি সকালে উঠে ওর জন্য দুধ বানালাম। ওকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকলাম। তারপর বাজারের দিকে হেটে গেলাম। ও ঘুমচ্ছিল। তাই ও সেদিন কাঁদেনি। আমি ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ওকে বিদায় জানালাম।
ক্যাটির আশ্রয় হয়েছিলে একটি অনাথ আশ্রমে। সেখান থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাডসনভীল শহরের কেন ও রুথ পোহলার দম্পতি।


শ্বেতাঙ্গ পরিবারে বড় হওয়া চীনা শিশুটি প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো সে কোথা থেকে এলো? রুথ পোহলার বলেন, "ক্যাটি একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমি কার পেট থেকে এসেছি? আমি কি তোমার পেট থেকে এসেছি? আমি ওকে বলেছিলাম, না তুমি চীন দেশের এক নারীর পেট থেকে এসেছ। কিন্তু আমার হৃদয়ে তোমার জন্ম। কথাটা শুনে ও খেলতে চলে গেলো। আমার এই জবাবে যেন ও সন্তুষ্ট হয়েছিলো।


ক্যাটি আপাতত সন্তুষ্ট হলেও কৌতূহল তার মেটেনি। যে অনাথ আশ্রম থেকে ক্যাটিকে দত্তক নিয়েছিলেন কেন ও রুথ পোহলার, তারা সাথে একটি চিঠি পেয়েছিলেন।


তাতে লেখা ছিলো ক্যাটির আসল মা-বাবার করুন আর্তি। ফেংশিয়াং সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, দারিদ্র ও অন্য কিছু সমস্যার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে তোমাকে ফেলে যাচ্ছি। আমাদের ছোট্ট শিশু তোমাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোন উপায় ছিলো না। তোমার মনে গভীরে কোথাও কোনোদিন যদি মা-বাবার জন্য কোনো অনুকম্পার জন্ম হয়, তাহলে আজ থেক ১০ অথবা ২০ বছর পর হাংজু শহরের ভাঙ্গা ব্রিজটার ওপরে এসো।


ফেংশিয়াং বলছিলেন, ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর নিদিষ্ট দিনটিতে আমি সেই ভাঙা ব্রিজটার ওপর অপেক্ষা করতাম। আমি জানতাম হয়ত তাতে কোন আশা নেই তবুও আমি অপেক্ষা করতাম। যখন ওর সাথে দেখা হবে তখন ওকে আমি কিই বা বলতে পারি। ওর কাছে যদি আমি হাজারো বার ক্ষমা চাই তা কি যথেষ্ট হবে?"


সম্প্রতি ক্যাটির হাতে চিঠিটি দেন তার পালক মা-বাবা। আর সেই চিঠির সূত্র ধরেই ক্যাটি মিলিত হন তার আসল মা-বাবার সাথে।



ক্যাটি বলেন, আমি বড় হওয়ার সময় তেমন কোনো প্রশ্ন করিনি। তবে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার জন্মদাতা মা-বাবা সম্পর্কে তিনি কতটুকু জানেন। একদিন মা বলেছিলেন, একটা জিনিস অনেক আগেই তোমাকে দেয়া উচিত ছিলো।


তিনি বলেন, আমার আসল মা-বাবার সাথে দেখা হওয়া নিয়ে আমার একটা ভয় ছিলো। আমার মনে হতো আমি যদি ওদের কোনোভাবে হতাশ করি। আমাকে ফেলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ওরা হয়ত একটা অপরাধবোধে ভুগেছে। আমি বুঝতে পারি ওরা কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটিয়েছে।


সেই কষ্টের অবশেষে বুঝি অবসান হয়। হাংজু শহরের সেই ভাঙা ব্রিজটা এখন আর ভাঙা নেই। কিন্তু সেটির উপরেই ২৩ বছর পর মিলিত হন ক্যাটি ও তার জন্মদাতা বাবা মা। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com