গৃহযুদ্ধপীড়িত দক্ষিণ সুদানের বহু মানুষের কাছে এঁরাই একমাত্র ‘ডাক্তার’ , যদিও ওরা আসলে দুই নার্স বেটি ওলিয়া আর রোজিনা ইমোলং এবং তাঁদের সাইকেলে রাখা ডাক্তারখানা ও ডিস্পেন্সারি।
পূর্ব ইকোয়েটোরিয়া প্রদেশের গ্রামগুলিতে প্রতিদিন সাইকেলে চড়ে ঘোরেন এই দু'জন ‘সিস্টার’, এই প্রচণ্ড গরমে যা খুব সহজ কাজ নয়।
ইটালির এভিএসআই ত্রাণ সংস্থার হয়ে কাজ করেন এরা দু'জনে। সংস্থাই তাদের সাইকেল আর ওষুধপত্র দেয়। দক্ষিণ সুদানের সরকারের পক্ষে এখানকার মানুষজনের জন্যে কিছু করা সম্ভব নয়। এখানে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে পানির কল, না বাঁধানো রাস্তাঘাট। চিকিৎসা বলতে একমাত্র সুযোগ হলো বিদেশি ত্রাণসংস্থাগুলো যেটুকু ব্যবস্থা করে।
দক্ষিণ সুদানের অর্ধেক মানুষের জীবন কাটে দারিদ্র্যসীমার নিচে। এ যাবৎ তারা কোনোক্রমে কিছুটা চাষবাস করে জীবনধারণ করে এসেছেন, কিন্তু গত চার বছরের একটানা অনাবৃষ্টি সব কিছু বদলে দিয়েছে।
চিকিৎসা দেয় ‘সাইকেল ক্লিনিক’
রোজিনার বাড়ি কাছের একটি গ্রামে, পাহাড়ের অপর পাশে। পরিস্থিতি কোনোকালে এতো খারাপ ছিল না বলে তাঁর ধারণা। রোজিনা জানালেন, ‘‘পাহাড়ের ওপাশে আমাদের মানুষজন....চার বছর ধরে....তারা যা কষ্ট পাচ্ছে, তা বলা যায় না। বৃষ্টি নেই, খাবার নেই, কিছুই নেই। মানুষজন জঙ্গল থেকে ফলমূল কুড়িয়ে দিন কাটাচ্ছে।’’
দেশে যুদ্ধ, তা থেকেই দুর্ভিক্ষ, অনশন। ব্যবসায়ীরা প্রাণের ভয়ে এ এলাকায় আসেন না – এখানে যে খাবারদাবার বা অন্য কোনো ধরনের জিনিস পাওয়া যায় না, সেটা তারও একটা কারণ। আর যেটুকু বা আসে, তা কেনার সামর্থ্য এখানকার মানুষদের নেই। স্কুলে যাওয়া, পড়াশুনা করা তো একটা বিলাস।
কনভেন্ট সিস্টার পাসকুইনা ইসোকে গ্রামের একমাত্র স্কুলটিকে বহু বছর ধরে বাঁচিয়ে রেখেছেন। শান্তি বলতে তিনি যেটুকু দেখেছেন, সেটা ছিল ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা পাওয়ার পরে স্বল্প কিছুদিন – কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। দু'বছর পরেই আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, যে যুদ্ধ আজ পর্যন্ত চলছে। তা সত্ত্বেও সিস্টার পাসকুইনা স্কুল চালিয়ে যাবার চেষ্টা করে চলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষজন আশা হারিয়ে ফেলছে৷ আজ আর কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। লোকে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’’
সিস্টার রোজিনা আর সিস্টার বেটি প্রতিদিন বেরোন, মানুষজনকে সাহায্য করার জন্য। শিগগির দক্ষিণ সুদানের মানুষদের ভাগ্য ফিরবে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন না, কিন্তু তাঁদের সাইকেল ক্লিনিক ছাড়া এই হারানো গ্রামগুলোর হতভাগ্য মানুষদের শেষ আশার আলোটুকুও যে মুছে যাবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে
বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]