শিরোনাম
বন্ধুদের মাংস খেয়ে বেঁচেছিলেন ইনি
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৯
বন্ধুদের মাংস খেয়ে বেঁচেছিলেন ইনি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

তীব্র তুষার ঝড়ে ঢেকে গেছে আন্দিজ পর্বতমালা। তারই মধ্যে চিলির উদ্দেশে উড়ে যাচ্ছিল ৪০ সিটের ছোট একটি প্লেন। কিছুক্ষণ আগে উরুগুয়ে থেকে যখন প্ল্যানটি উড্ডয়ন করেছিল তখন অবশ্য আবহাওয়া এতটা খারাপ ছিল না। 

 

বাতাসের ধাক্কায় প্রথমে প্লেনে তীব্র ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। পরে পাহাড়ে আছড়ে পড়ে। সাথে সাথে ৪০ আরোহীর অনেকেই নিহত হন। আর বাকিরা তখন নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাদেরই একজন পেদ্রো অ্যালগোর্টা।

 

চারদিক ছিন্নভিন্ন লাশের ভিড়। তারই মাঝে পড়ে রয়েছে কতগুলো মানব শরীর। ওরা মরেনি তখনো। কিন্তু এত ঠাণ্ডায় কতক্ষণ বাঁচা সম্ভব কেউ জানে না। পেদ্রোরও একই অবস্থা। পেদ্রো কোনোমতে রক্তভেজা লাশগুলোকে সরিয়ে প্লেনের ভাঙা দরজা ঠেলে বাইরে বের হন। সঙ্গে আরো কয়েকজন।

 

এরপর কেটে যায় বেশ কয়েক দিন। তবুও কারো দেখা নেই, কেউই উদ্ধার করতে আসেনি। এদিকে, তুষার ঝড়ের দাপটে মারা যান আরো কয়েকজন। পেদ্রো তখনো লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। এদিকে, ঠাণ্ডা বাতাসের তীব্রতা যেন বেড়েই চলেছে। ঠাণ্ডা বাতাস করাতের মতো আঘাত করছে শরীরটাকে। তবু আশা ছাড়েনি কেউ। বাঁচতে হবেই। ঠাণ্ডায় হার মানলে যে মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু এদিকে বাঁচার উপায়ও মাথায় আসছে না। অন্যদিকে, কমছে মজুত খাদ্য আর পানি।

 

একসময় খাবারও শেষ হলো। খাবার ছাড়া এই ঠাণ্ডায় বাঁচা অসম্ভব। তখনই সবাই সিদ্ধান্ত নিল, বাঁচতে গেলে খেতে হবে। আর খাবার যখন নেই, তখন মৃত বন্ধুরাই একমাত্র ভরসা। প্রথমটায় বমি করে ফেলেছিলেন অনেকেই। তারপর ক্ষুধার জ্বালায় পাগলের মতো মানুষের মাংস খাওয়া শুরু করেছিলেন সবাই। পেদ্রোর ভাগ্যে জুটেছিল এক মৃত বন্ধুর কাটা হাত আর পা।

 

রোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭২ সালে। ওই ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পর পেদ্রো একটি বই লিখেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন ‘ইনটু দ্যা মাউন্টেন’। বইটিতে সে সময়কার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছিলেন পেদ্রো। তিনি লেখেন, ‘আজও যখন সেই দিনটার দিকে ফিরে তাকাই মনে হয়, যদি সেদিন ওই কাজটা না করতাম, তাহলে বোধহয় আজকের দিনটা দেখতে পেতাম না।’

 

পেদ্রো নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, সেদিন কেউ এটা ভাবেনি যে তারা মানুষের মাংস খাচ্ছে। সবার মনে হয়েছিল বন্ধুরা মরে গিয়েও তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এর থেকে বেশি সেই মুহূর্তে আর কিছুই মনে আসছিল না তাদের।

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com