শিরোনাম
পৃথিবীর সবচেয়ে জনবিরল ১০ দেশ
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০১৭, ১৩:৫৮
পৃথিবীর সবচেয়ে জনবিরল ১০ দেশ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বসবাস করে আমরা যেমন চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ দেখে অভ্যস্ত পৃথিবীর সর্বত্র চিত্রটা কিন্তু এমন নয়। প্রতি বর্গকিলোমিটারে আমাদের দেশে প্রায় ১১২০জন মানুষ বাস করে, আশ্চর্য হলেও সত্য এই পৃথিবীতেই এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে একজনের চেয়েও কম! এরকম জনবিরল দেশের কথা শুনতে কার না আগ্রহ জাগে? জনবিরল এমন দশ দেশের কথা জেনে নিন:


❏ মৌরিতানিয়া: পশ্চিম আফ্রিকায় সাহারা মরুর পাড়ে অবস্থিত মৌরিতানিয়া। বিশ্বের সবচেয়ে কম ঘনবসতি পূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে ১০ম স্থানে। দেশটির পুরো নাম ইসলামিক রিপাবলিক অব মৌরিতানিয়া। আয়তন ১,০৩০,০০০ বর্গকিমি যা মোটামুটি বাংলাদেশের মত ছয়টি দেশের আয়তনের সমান। কিন্তু জনসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখ যা প্রায় ঢাকা শহরের মিরপুর এলাকার জনসংখ্যার সমান। মৌরিতানিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও পশ্চিমের আটলান্টিক উপকূলটুকু ছাড়া বাকি দেশটুকু যেন পুরোটাই ধু ধু মরুভূমি। তাই মরুকন্যা মৌরিতানিয়ার জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৩.৪ জন!


❏ সুরিনাম: বাংলাদেশের মানুষের কাছে সুরিনাম দেশটি খুব বেশি পরিচিত নয়। আর হবেই বা কেন দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি প্রতিবেশি ব্রাজিলের মত তো আর ফুটবল পরাশক্তি নয়। সুরিনাম দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ছোট দেশ। তবে এর আয়তন কিন্তু বাংলাদেশের চেয়েও বেশি! ১৬৫,০০০ বর্গকিমি আয়তনের দেশ সুরিনামের জনসংখ্যা মাত্র ৫৬৬,০০০! জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসাব করলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ২.৯ জন মানুষ বাস করে সুরিনামে। মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীদের নিয়ে গঠিত এই দেশটির উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগর আর দক্ষিণে পুরোটাই আমাজন জঙ্গল। সুরিনামের রাজধানীর নামটিও কিন্তু বেশ অদ্ভুত। বলা বাহুল্য দেশের অর্ধেক মানুষই বাস করে রাজধানী পারামারিবো তেই।


❏ আইসল্যান্ড: ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ আইসল্যান্ড। ছোট্ট কিন্তু অপূর্ব সুন্দর এই দশটি রয়েছে তালিকার ৮ম স্থানে। ২০১৬ ইউরোর মূলপর্বে খেলার সুবাদে আমাদের দেশের মানুষের কাছে আইসল্যান্ড এখন বেশ পরিচিত। আয়তন ১০৩,০০০ বর্গকিমি এবং জনসংখ্যা ৩০৯,৬৭২। আইল্যান্ডের জনসংখ্যার ঘনত্ব মাত্র প্রতি বর্গকিমিতে মাত্র ৩.১ জন। আইসল্যান্ডকে বলা হয় বজ্রপাতের দেশ। দেশটি সম্পর্কে আরেকটি কথা না বললেই নয় জনসংখ্যার ঘনত্বে পিছিয়ে থাকলে মাথাপিছু নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির হিসেবে আইসল্যান্ড সবার চেয়ে কিন্তু এগিয়ে!


❏ অস্ট্রেলিয়া: ক্রিকেট বিশ্বে একচেটিয়া আধিপত্য আর উন্নত জীবনযাত্রার কারণে অস্ট্রেলিয়া আমাদের দেশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার কথা শুনলেই মনের অজান্তে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে সিডনি অপেরা হাউজ, এমসিজি কিংবা ক্যাঙ্গারুর ছবি। তবে প্রায় আড়াই কোটি জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া এই তালিকায় জয়গা করে নিয়েছে তার আয়তনের বিশালত্বের কারণে। প্রায় ৭৬,৯০,০০০ বর্গকিমি আয়তনের দেশ অস্ট্রেলিয়া প্রায় ৫০টি বাংলাদেশের আয়তনের সমান। তাই জনসংখ্যার ঘনত্বও মাত্র প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৩.০৯ জন। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূল জুড়ে গড়ে উঠেছে মেলবোর্ন, সিডনি বা পার্থের মত শহর তবে উত্তর ও মধ্য অস্ট্রেলিয়ায় কিন্তু লক্ষ লক্ষ বর্গমাইল জুড়ে কেবল ধুধু মরুভূমি!


❏ ফ্রেঞ্চ গায়ানা: এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ফ্রেঞ্চ গায়ানা। ফ্রান্সের অধীনের থাকা এই দেশটির আয়তন ৮৩,৫৩৪ বর্গকিমি এবং লোকসংখ্যা আড়াই লাখের মত। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখানে মাত্র তিনজন মানুষ বাস করে। দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত ফ্রান্সের এই উপনিবেশটি কিন্তু সুরিনামের প্রতিবেশী।


❏ নামিবিয়া: দেশটির সাথে আমাদের অনেকেরই পরিচয় ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশ নামিবিয়ার আয়তন যা প্রায় পাঁচটা বাংলাদেশের সমান তবে জনসংখ্যা মাত্র ২১১৩০৭৭ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতিবর্গ কিলোমিটারে ২.৫৪ জন। নামিব ও কালাহারি মরুভূমির মাঝখানে অবস্থিত দেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সাব-সাহারা অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্ন!


❏ মঙ্গোলিয়া: নামটা শুনে নিশ্চয়ই চোখের সামনে ভেসে উঠছে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা চেঙ্গিস খানের ছবি! পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক ছিল কিন্তু এই মঙ্গোলরাই। উত্তরে ইউরেশিয়ার স্তেপ এবং দক্ষিণে গোবী মরুভূমির মাঝখানে অনবাদি এই দেশটি প্রাচীনকাল থেকে যাযাবর অশ্বারোহীদের বিচরণক্ষেত্র। বলা হয়ে থেকে মোঙ্গল শিশুদের জন্মই হয় ঘোড়ার উপর আর ঘোড়ার উপরই কাটে তাদের সারা জীবন। ১,৫৬৬,000 বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ত্রিশ লাখ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ২ জন যা সার্বভৌম দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম!


❏ পিটকেয়ার্ন্স আইল্যান্ড: চার্লস নর্ডহফ এবং জেমস নর্মানহলের বিখ্যাত উপন্যাস পিটকেয়ার্ন্স আইল্যান্ড দ্বীপটিকে পরিচিত করেছে লাখো পাঠকের কাছে। এই সিরিজের বাকি দুটি উপন্যাস মেন ইগেনস্ট সি এবং মিউটিনি অন বাউন্টি (বাংলায় বাউন্টিতে বিদ্রোহ নামেই পরিচিত উপন্যাসটি)। দিগন্ত বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানের এই ছোট্ট দ্বীপটির আয়তন মাত্র ৫০ বর্গকিমি। তবে অবাক করা ব্যাপার হল ইংল্যান্ডের অধীনে থাকা এই দ্বীপের জনসংখ্যা মাত্র ৪৭ জন। তাই প্রতি বর্গকিলোমিটারে এই দ্বীপের এক জনেরও কম মানুষ বাস করে।


❏ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ: বলা হয়ে থাকে ফকল্যান্ড দ্বীপের জন্য ম্যারাডোনার ‘ঈশ্বরের হাত’ এর অবতারণা। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে তিনি হাত দিয়ে যে বিতর্কিত ম্যাচ উইনিং গোলটি করেন, সেটা আজও ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে জনপ্রিয় হয়ে আছে কোটি ভক্তের মানসপটে। খোদ আর্জেন্টিনায় এই গোলটিকে দেখা হয় ইংল্যান্ডের কাছে ফকল্যান্ড যুদ্ধে হারের বদলা হিসেবে। দীর্ঘ দিন মালিকানা দাবি করে আসা আর্জেন্টিনা ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডের কাছে যুদ্ধে হেরে দ্বীপপুঞ্জটিও হারায়। উল্লেখ্য আর্জেন্টিনার দক্ষিণে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি। তেলসমৃদ্ধ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের আয়তন প্রায় ১২,২০০ বর্গকিমি। জনসংখ্যা মাত্র তিন হাজার। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতিবর্গ কিলোমিটারে মাত্র ২৬ জন।


❏ গ্রীনল্যান্ড: সবচেয়ে কম ঘনবসতিপূর্ণ দেশের তালিকায় সবার উপরে জায়গা করে নিয়েছে গ্রীনল্যান্ড। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই দ্বীপটি কিন্তু সার্বভৌম নয়, ডেনমার্কের একটি অঙ্গরাজ্য মাত্র। সাড়ে ২১ লাখ বর্গকিমি আয়তনের এই দ্বীপটিতে বাস করে মাত্র ৫৭ হাজার মানুষ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতিবর্গকিলোমিটারে মাত্র .০৩। যার মানে দাঁড়ায় এই দ্বীপের প্রতি ৩৩ বর্গকিলোমিটারে মাত্র ১ জন মানুষ বাস করে। পূর্বে আর্কটিক সাগর থেকে পশ্চিমে কানাডা পর্যন্ত বিস্তৃত সুবৃহৎ। এই দ্বীপটি বছরের বড় একটা সময় বরফেই ঢাকা থাকে। এই গ্রীনল্যান্ডে গেলে হয়ত মানুষের পরিবর্তে আপনার দেখা হয়েও যেতে পারে শ্বেত ভল্লুকের সাথে!


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com