শিরোনাম
টাইটান ও টাইটানিকের কাকতালীয় ঘটনা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ১৪:৩৯
টাইটান ও টাইটানিকের কাকতালীয় ঘটনা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

অদ্ভুতভাবে দুই বিচ্ছিন্ন কালের ঘটনা মিলে যাওয়াকে সিনক্রনিসিটি বলে। আজকের সিনক্রনিসিটি বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ ও টাইটান উপন্যাস নিয়ে।


১৮৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ছোট গল্পকার ও উপন্যাসিক মর্গান রবার্টসন এক মাঝারি আকারের উপন্যাস প্রকাশ করেন। উপন্যাসের নাম The Wreck of the Titan: Or, Futility। এই উপন্যাস ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সহজেই পড়তে পারা যায়। উপন্যাসটি জন রোল্যান্ড নামের এক প্রাক্তন নৌবাহিনীর অফিসারকে নায়ক বানিয়ে লেখা। তিনি টাইটান নামের এক জাহাজে করে সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক যাচ্ছিলেন।


মাঝসমুদ্রে জাহাজডুবি। এক মেয়েকে তিনি বাঁচালেন, কিন্তু উল্টো তার বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের মামলা দিল মেয়ের মা। মামলার কারণে তার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। এরকম বহু ঘটনা শেষে রোল্যান্ড সাহেব অনেক বছর পরে শেষমেশ এক মাছ ধরার জাহাজে চাকরি নিয়ে দিন গুজরান করলেন। ৮ বছর পরে ওই মেয়ের মা চিঠি লিখে ভুল মামলার জন্য ক্ষমা চাইল রোল্যান্ডের কাছে।


এই হল মোটামুটি উপন্যাসের ঘটনা।


কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, উপন্যাসের মাঝপথে বর্ণনা দেয়া জাহাজডুবির ‘টাইটান’ জাহাজটার সাথে উপন্যাস প্রকাশের ১৪ বছর পরে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ঘটনা অসম্ভব রকমের মিল। একেবারে বুলেট পয়েন্ট মিলিয়ে লিস্ট করলে বিষয়টা দাঁড়ায়:


❏ উপন্যাসে জাহাজের নাম টাইটান, আর বাস্তবিক জাহাজের নাম টাইটানিক।


❏ উপন্যাসের জাহাজের সামনে Unsinkable লেখা ছিল, আর বাস্তবের টাইটানিককেও বলা হচ্ছিলো Unsinkable।


❏ দু’টি জাহাজই সাউদাম্পটন থেকে ছেড়ে নিউইয়র্ক যাবার কথা।


❏ উপন্যাসে জাহাজের দৈর্ঘ্য ২৪৪ মিটার আর টাইটানিকের ২৬৯ মিটার (প্রায় কাছাকাছি!)।


❏ উপন্যাসে জাহাজের বেগ ছিল ২৫ নটিক্যাল মাইল, আর সত্যিকারের টাইটানিকের বেগ ২৩ নটিক্যাল মাইল।


❏ উপন্যাসের টাইটান জাহাজের ওজন ৪৫০০০ টন, বাস্তবিক টাইটানিক ৪৬০০০ টন।


❏ উপন্যাসে জাহাজের ৩ প্রপেলার, টাইটানিকেরও ছিল ৩ প্রপেলার।


❏ দুই জাহাজেই লাইফ বোটের ঘাটতি ছিল, যা ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রীকে বাঁচানোর জন্যেও যথেষ্ট ছিল না।


❏ দুই জাহাজই এপ্রিল মাসের রাতে ডুবে।


❏ দু’টি জাহাজই উত্তর আটলান্টিকে আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খায়।


❏ দুই জাহাজই নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে ৪৬০ মাইল দূরে ডুবে।


❏ উপন্যাসে যাত্রী সংখ্যা ২৫০০ জন, যার মধ্যে বাঁচতে পেরেছিল ১৩ জন। আসল টাইটানিকে যাত্রী ছিল ২২০০ জন, প্রাণে বেঁচেছিলেন ৭৫০ জন।


❏ দুই জাহাজই পৃথিবীর বৃহত্তম যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল।


এসব বিশ্বাস না হলেও সত্যি যে সময় টাইটানিকের আর্কিটেক্ট থমাস এন্ড্রু এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানি টাইটানিক জাহাজ বানানোর কথা চিন্তাও করেননি সে সময় এই উপন্যাস প্রকাশিত হয়। টাইটানিক ডুবে যাবার পরের দিন উপন্যাসের লেখক রবার্টসনের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। পরে মুক্তি পান তিনি।


অনুসন্ধানে জানা যায়, এই উপন্যাস টাইটানিক জাহাজ বানানোর আগে ইংল্যান্ডে প্রচলিত হয়নি এবং আর্কিটেক্টের সাথে এই উপন্যাসের কোন সম্পর্ক ছিল না। যদিও থাকত, তবু এত লোকের মৃত্যু, একই সময়ে যাত্রা, বরফখণ্ড, ধ্বংস- এতকিছু একসাথে মিলিয়ে দেয়া কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।


এই লেখকের আরেকটি এরকম উপন্যাস আছে, যেটি পরবর্তীতে বাস্তবের সাথে মিলে গিয়েছিল আবারো! এ উপন্যাসটির নাম Beyond the Spectrum। এটাতে জাপান কর্তৃক আমেরিকার পার্ল হারবার আক্রমণের ঘটনা প্রায় হুবহু লেখা আছে, যা সত্যিকার আক্রমণের ২৭ বছর আগে লেখা!


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com