শিরোনাম
বিশ্বের সেরা ১০ ব্যাটল ট্যাংকের ময়নাতদন্ত
প্রকাশ : ২২ মে ২০১৭, ১০:৪৮
বিশ্বের সেরা ১০ ব্যাটল ট্যাংকের ময়নাতদন্ত
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছি যুদ্ধের রাজা ট্যাংক। কিন্তু কখনো জানা হয়নি রাজাদের রাজা কে? সেই রাজাদের খুঁজে বের করতেই আজকের এই প্রচেষ্টা।


এম১এ২ আব্রামস (যুক্তরাষ্ট্র): পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ট্যাংকগুলোর একটি। ১৯৮৮ সাল থেকে তৈরি হওয়া এই ট্যাংকগুলোর নামকরনণ করা হয়েছিল জেনারেল গ্রেগটন আব্রামস থেকে। এই ট্যাংক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র (১৫০০+), কুয়েত (২১৮), সৌদি আরবে (৩৭৩) রয়েছে। এ ট্যাংকের সুরক্ষা ব্যবস্থায় ইউরেনিয়াম মেশ ব্যবহার করা হয়েছে, যেটা তাকে নিরাপদ করে তুলেছে। কিন্তু যেসব এম১এ২ কুয়েত ও সৌদি সেনাবাহিনীতে রপ্তানি করা হয়েছে সেগুলোতে এই ইউরেনিয়াম মেশ দেয়া হয়নি। হান্টার কিলার সিরিজের এই ট্যাংকটিতে রয়েছে ১টি ১২০ মিলিমিটার স্মুথবোর মেইন গান ও ৩টি মেশিন গান। ১৫০০ হর্সপাওয়ার মাল্টিফুয়েল গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিনের এই ট্যাংকটির ওজন ৬২.৫ টন ৪জন ক্রু নিয়ে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬৭ কিলোমিটার স্পিডে একটানা ৪২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। কিছু কিছু এম১এ২ তে লেজার গাইডেড মিসাইলগুলো সনাক্ত ও তাদের নেটওয়ার্ক জ্যাম করার ব্যবস্থা থাকে। এই ট্যাংকের বিখ্যাত হুইল তার নিখুঁত লক্ষ্যভেদ, বিধ্বংসী ফায়ার পাওয়ার, নিজস্ব বর্ম ব্যবস্থা আর সহজ ম্যানুভারএবিলিটির জন্য। সবচেয়ে আশ্চর্যের খবর হল যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে এই ট্যাংকের ইঞ্জিন রিপ্লেসড করা যায় মাত্র ৩০ মিনিটে। সাধে কি আর এটাকে থার্ড জেনারেশন এমটিবি (মেইন ব্যাটল ট্যাংক) বলা হয়? এটার ফোর্থ জেনারেশন বের হওয়ার কথা রয়েছে।


লিউপার্ড ২এ৭ (জার্মানি): এটা সর্বপ্রথম বের হয় ২০১০ সালে, যেটা ছিল লিউপার্ড ২এ৬ এর উন্নত সংস্করণ। এটাকে প্রধানত তৈরি করা হয়েছিল গেরিলা ও সামরিক যুদ্ধের জন্য।১২০ এমএম স্মুথবোর মেইন গান সংযুক্ত এই ট্যাংকের ওজন ৬৭.৫ টন যেখানে ৪জন ক্রু বসতে পারে। সাথে আরো ২টা মেশিন গান আছে যেগুলো হল ১২.৭ এমএম ও ৭.৬২ এমএম বোরের। এটার ইঞ্জিন পাওয়ার হল ১৫০০ এইচপি। এটার ট্যাংকি ভর্তি থাকলে একটানা ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাবে ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার বেগে। এই ট্যাংকের সামনে একটা ডযের ব্লেড আছে যেটা দিয়ে তার পথের সকল বাধা সরিয়ে এগোতে পারে। ২০১১ সালে সৌদি আরব জার্মানির কাছ থেকে ২০০ ট্যাংক কিনে নেয়।


চ্যালেঞ্জার ২ (ব্রিটেন): চ্যালেঞ্জার ২ প্রধানত চিফটেন এমটিবির সাথে কম্বাইন্ড করে ব্রিটিশ আর্মির জন্য বানানো হয়েছিল। এটি সম্মুখ যুদ্ধে শত্রুদের বেশ ভাল রকমের প্রতিরোধ করে। এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ট্যাংক বলা হয়। পুরো ট্যাংকটি চোবহ্যাম কম্পোজিট আর্মার দিয়ে ঢাকা। এখানে আছে ১২০ এমএম রাইফেলড মেইন গান যা দিয়ে ৪ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করা যায়। ব্যাকআপ হিসেবে ২টা মেশিন গান তো আছেই। এর মেশিনারিজের সাথে এম১এ১ আব্রামস ও ল্যাকলার্ক এমটিবির মিল রয়েছে। ৪জন ক্রু নিয়ে এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। এটি বিখ্যাত তার যান্ত্রিক নির্ভরতার কারণে। বর্তমানে এটি ব্রিটিশ (৩৮৬) ও ওমানের সেনাবাহিনীতে (৩৮) রয়েছে।


কে২ ব্ল্যাক প্যান্থার (দক্ষিণ কোরিয়া): সাউথ কোরিয়ান বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ১৯৯৫ সাল থেকে কে সিরিজের তৃতীয় প্রজন্মের ট্যাংক কে২ ব্ল্যাক প্যান্থার। চীন বা নর্থ কোরিয়ার যে কোন ট্যাংকের চেয়ে এই কে২ অনেক উন্নত। নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থায় এখানে আছে এক্সপ্লোসিভ রিঅ্যাক্টর আর্মার (ইআরএ) যা আমেরিকান এম১এ২ আব্রামসের সাথে তুলনীয়। ২টি মেশিন গানসহ এতে আছে সর্বশেষ জার্মান ১২০ এমএম মেশিন গান যা দিয়ে সর্বোচ্চ চার কিলোমিটার পর্যন্ত ফায়ারিং করা যায়। অ্যাডভান্স ফায়ার কন্ট্রোলারের সাহায্যে এই ট্যাংক নিজ থেকেই কাছাকাছি দূরত্বের যে কোন যানবাহন ও তুলনামূলক নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারকে ফালায়া দেয়ার সামর্থ্য রাখে। এই ট্যাংকের টেকনলজি ব্যবহার করে তুরস্ক সেনাবাহিনীতে তৈরি হচ্ছে এ১টে এমবিটি।



মারকাবা এমকে৪ (ইসরাইল): অন্যা দেশগুলোর ট্যাংকের ইঞ্জিন থাকে পেছনের দিকে আর ইসরাইলিরা সামনের দিকে ফ্রন্ট মাউন্টেড ইঞ্জিন বসিয়েছে। আর ঠিক এই কারণে এই ট্যাংক ক্রুদের সেফটি বাড়ছে বহুগুণে। মারকাবা সিরিজের ট্যাংকগুলো যুদ্ধাবস্থায় মালামাল ও সৈন্য পরিবহনে সক্ষম। অন্য দেশের ট্যাংকগুলোতে যেখানে ৩-৪ ক্রু এর বেশি বসার কোন ব্যবস্থাই নেই সেখানে এই ট্যাংকে অ্যামুনিশন আনলোড অবস্থায় ১০জন পর্যন্ত সৈন্য বহন করা যায়। মেইন গান হিসেবে ১২০ এমএম স্মুথবোর ছাড়াও ১টি এটিজিডবলিউ (এন্টিট্যাংক গাইডেড মিসাইল উইপনস ও ২টি মেশিন গান আছে।


টিকে-এক্স (জাপান): জাপানের সবচেয়ে হালকা ও উন্নত প্রযুক্তির ট্যাংক এই টিকে-এক্স। মাত্র ৪৪টন ওজনের এই এমবিটিগুলো স্ট্যান্ডার্ড কমার্শিয়াল ট্রেইলার দিয়ে স্থানান্তর করা যায়। এর মেইন কনট্রাক্টর হল মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ। অন্যান্য ট্যাংকের মতোই এটায় আছে ১২০ মিলিমিটার স্মুথবোর মেইনগান ও দুটো মেশিন গান। নিজস্ব সুরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলতে গেলে তুলনা করা যায় জার্মানির লিউপার্ড ২এ৫ ও ফ্রান্সের লেকলার্কের সাথে। ২০১২ সালে জাপানি সেনাবাহিনীতে এমন ১৩টি ট্যাংক অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এই ট্যাংকগুলো শুধু জাপানের হাতেই থাকবে কারণ জাপানের আইন অনুযায়ী সামরিক যন্ত্রাদি রপ্তানি করা যায় না।


ল্যাকলার্ক (ফ্রান্স): ১৯৯১ সাল থেকে গিয়াট ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ল্যাকলার্কের নামকরণ করা হয় ফ্রেঞ্চ আর্মির জেনারেল ফিলিপ জ্যাক ল্যাকলার্কের নাম অনুসারে। হান্টার কিলার সিরিজের এই ট্যাংকটিকে সুরক্ষিত করে রাখে স্টিল, সিরামিক আর কেভলারের মিশ্রণে তৈরি আর্মার। ১টা মেইন গানসহ ২টা মেশিন গান ফিট করা আছে। এই ট্যাংকের একটা আরবান ভার্সন আছে যেটা ল্যাকলার্ক আজুর নামে পরিচিত। এটা দিয়ে যূদ্ধ করা ছাড়াও রিকভারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ভেহিকল ও ট্রেইনিং ট্যাংক হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের কাছে এই ট্যাংক আছে ৪০৮টি আর আরব আমিরাতের কাছে আছে ৩৮৮টি।


টি-৯০ এমএস তাগিল: রাশিয়ার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মানসম্মত ট্যাংক যেটা বিশ্ব বাজারে কমার্শিয়ালি সবচেয়ে জনপ্রিয়। যদিও এটা পশ্চিমা দেশের ট্যাংকগুলোর মত এত উন্নত নয় তবুও এটিতে দরকারি সকল প্রকার টেকনোলজির উপস্থিতি দেখা যায় এবং এটার খরচ সব দিক দিয়ে খুবই কম।লং রেঞ্জ টার্গেটে তেমন একটা কার্যক্ষম না হলেও স্বল্প দূরতের ক্ষেত্রে এক নম্বর। একটা করে মেইনগান ও মেশিনগান থাকার পরেও এটায় আছে একটা এন্টি ট্যাংব গাইডেড মিসাইল উইপনস, যেটার সাহায্যে ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যে যে কোন যানবাহন এমনকি নীচ দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টার ধ্বংস করতে পারে। এটি পানির ভেতর দিয়ে মিটার মিটার গভীরতায় খুব সহজে চলাফেরা করতে পারে। বর্তমানে এই ট্যাংকগুলো আছে রাশিয়া (৭০০), ভারত (৬২০), আলজেরিয়া (৩০৫), আজারবাইন (২০), তুর্কিমেনিস্তান (৪০) ও ভেনেজুয়েলায় (৫০-১০০)।


ওপলট-এম (ইউক্রেন):ওপলট-এম হল ওপলট সিরিজের টি-৫৪-এর আধুনিক সংস্করণ যেটা ২০০৯ সালে সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পরেই ইউক্রেইন এর গবেষণা শুরু করে, যদিও ২-৩ টা অমিল বাদে পুরা ট্যাংকটাকে রাশিয়ান টি-৯০ এমএস তাগিলের কার্বন কপি বলা যায়। যে কয়েকটা অমিলের কারণে একে সেরা দশে নিয়ে আসা হয়েছে সে গুলো হল- ট্যাংকটিতে Nozh-2 আর্মার লাগানো রয়েছে যা tandem warhead থেকে একে রক্ষা করে। একটি ১২৫ এমএম মেইনগান, ২টি মেশিনগান ছাড়াও এটায় আছে শক্তিশালী এন্টি ট্যাংক গাইডেড সিস্টেম। এখন পর্যন্ত এই সিরিজের মাত্র ১০টি ট্যাংক আছে ওই দেশের সেনাবাহিনীতে।


টাইপ-৯৯ (চীন): যদি সেরা ১০টি ট্যাংকের মধ্যে রেস লাগানো হয় তাহলে ১ নং জায়গাটা দখল করবে এই চাইনিজ ট্যাংক। অন্য ট্যাংকগুলো যেখানে ঘণ্টায় ৫৫-৭২ কিলোমিটার গতিতে ছুটে সেখানে এই ট্যাংক ছুটে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে। রাশিয়ান আর পশ্চিমা দেশের ট্যাংকগুলোর ডিজাইন ও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এই ট্যাংক বানানো হয়েছে। এটার সুরক্ষা ব্যবস্থা পুরাইটাই জার্মানির লিউপার্ড ২এ৫ এর মত। এটার ১২৫ এমএম মেইনগান হুবুহু কপি করা হয়েছে রাশিয়ান ডিজাইন থেকে যদিও মেশিনগান দুটো নিজেরাই ডিজাইন করেছে। এটার এন্টিট্যাংক গাইডেড মিসাইল সিস্টেমটার সাথে রাশিয়ান টি-৯০ এর সামঞ্জস্য রয়েছে। এটার ইউনিক লেজার প্রটেকশন সিস্টেম অন্য ট্যাংক বা হেলিকপ্টারের এন্টিট্যাংক গাইডেড মিসাইলকে বাধা দিয়ে থাকে। এক একটি ট্যাংকের উচ্চমূল্যের কারণে চীনে এখন মাত্র ২০০টি এই সিরিজের ট্যাংক অপারেশনাল আছে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com