সাহারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মরুভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর উঁচু নিচু ছোট ছোট বালুকাময় পাহাড়ের সমন্বয়ে সাহারা মরুভূমি গড়ে উঠেছে। বিশ্বের প্রধানতম এই মরুভূমির পিছনে প্রাকৃতিক কারণ যতটা না ছিল, তার থেকে বেশি ছিল মানুষের হাত। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
‘ফ্রন্টিয়ারস ইন আর্থ সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধে সিওল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ডেভিড রাইট জানিয়েছেন, দশহাজার বছর আগে সাহারা অঞ্চল সবুজ ছিল। পরে তা মরু অঞ্চলে পরিণত হয়। এই পরিবর্তনের পিছনে এতদিন প্রাকৃতিক কর্মকাণ্ডকেই দেখা হতো। মনে করা হত, পৃথিবীর কক্ষপথগত পরিবর্তনও এই মরুভূমির জারণের পিছনে ক্রিয়শীল থেকেছে।
কিন্তু রাইটের মতে, নব্যপ্রস্তর যুগে এই অঞ্চলে মানবিক কারণেই পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। এবং সাহারা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে আসে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও নিউ জিল্যান্ডে এই প্রকার পরিবর্তন পরেও দেখা গেছে।
সাহারা অঞ্চলের পশুপালন-সভ্যতার নিদর্শনগুলিকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দক্ষিণ সাহারায় একসময়ে এই সভ্যতা রীতিমতো জীবন্ত ছিল। ক্রমে এই এলাকায় ঝোপ-জাতীয় উদ্ভিদ বাড়তে শুরু করে, যা পরে মরু-তে পরিণতি পায়। আনুমানিক ৮০০০ বছর আগে নীল নদের অববাহিকায় এক পশ্চিমমুখী অভিপ্রয়াণ দেখা যায়। পশুপালক সভ্যতাগুলি পশ্চিম দিকে সরে যেতে শুরু করে। সাহারার এক বিপুল এলাকা ঝোপ-অধ্যুষিত হয়ে পড়তে শুরু করে।
পশুপালন অর্থনীতি ক্রমে কৃষির দিকে বেঁকে যায়। পশ্চিমে উর্বর জমির সন্ধানে অভিপ্রয়াণ চলতে থাকে। সাহারা ক্রমেই জনবিরল হয়ে পড়ে। পশুপালনে অরণ্যভূমি আগেই ধ্বংস হয়েছিল। কারণ, পশুপালনের উপযোগী চারণভূমি তৈরি করতে বিপুল হারে গাছ কাটা হয়। অরণ্য ধ্বংস হয়ে যায়। বৃষ্টি স্বভাবতই কমে আসে। মরু তার ডানা প্রসারিত করে সাহারা অঞ্চলে।
নব্যপ্রস্তর যুগের অভিপ্রয়াণ যে পৃথিবীর সাবেক চেহারাটা পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল, এ কথা অনেক গবেষকই বলেন। তাই বলে সাহারার মতো সুবিশাল মরুভূমির পিছনেও যে মানবিক কর্মকাণ্ড প্রধান ভূমিকায় থাকতে পারে, তা এতদিন সেভাবে ভাবা যায়নি।
ডেভিড রাইট আরও জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বিস্তৃত গবেষণার অবকাশ রয়েছে। নব্যপ্রস্তর-অভিপ্রয়াণ হয়েতো আরও চমকপ্রদ সত্যকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে অদূর ভবিষ্যতে।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]