অন্তঃসত্ত্বা নারী যেমন অনাগত সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন, পাখিরাও অনেকটা সেভাবে নিজেদের ডিমকে গান শোনায়, সেগুলো ফুটে ছানা বেরোনোর আগেই। হয়তো তাদের বলে দেয়, ‘বাইরের পৃথিবীটা বড্ড গরম’।
অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক সম্প্রতি এ তথ্য দিয়েছেন। তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জেব্রা ফিঞ্চ নামে পরিচিত এক ধরনের ছোট্ট পাখিকে পর্যবেক্ষণ করেন। রঙিন ঠোঁটওয়ালা সাদাকালো পালকের এই অস্ট্রেলীয় পাখি সাধারণত আবহাওয়া গরম (তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) হলে এবং ডিম ফুটে ছানা বেরোনোর সময় ঘনিয়ে এলেই সেগুলোকে এক ধরনের গান শোনায়।
বাইরের সাধারণ তাপমাত্রা যা-ই হোক না কেন, ডিমের কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ, পাখি দম্পতি তখন এসব ডিমের ওপর বসে তা দেয়। ফলে সেগুলোর তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে। তবু পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়তে দেখে কিচিরমিচির করে তারা ডিমগুলোকে কী বলে? গবেষক দলটির প্রধান মাইলিন ম্যারিয়েট বলেন, সম্ভবত ওরা বলে, ‘গরম পড়েছে বাছারা, প্রস্তুত হও!’
অনাগত সন্তানের প্রতি পাখিদের এ রকম সতর্কবার্তায় কী প্রভাব পড়ে, তা যাচাই করতে ম্যারিয়েট ও তাঁর সহযোগী ক্যাথেরিন বুকানান সেই কিচিরমিচির গান রেকর্ড করেন এবং একটি ইনকিউবেটরে বাজিয়ে শোনান। তাঁরা দুজনেই অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন।
ইনকিউবেটর হলো কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটানোর যন্ত্র। ম্যারিয়েট ও বুকানান দেখতে পান, যেসব ডিমকে ওই গান শোনানো হয়েছিল, সেগুলো ফুটতে তুলনামূলক দেরি হয়েছে। আর ছানাগুলোও হয়েছে কিছুটা ছোট ছোট। এই আকৃতি তাদের টিকে থাকার সহায়ক। কারণ, উষ্ণ পরিবেশে ছোট্ট শরীর তুলনামূলকভাবে সহজে শীতল হয়।
গবেষকেরা মনে করেন, ওই গান পক্ষীসন্তানের বিকাশের ওপর নিশ্চয়ই কোনো প্রভাব ফেলে। কিচিরমিচির গান শুনিয়ে জেব্রা ফিঞ্চ দম্পতি তাদের অনাগত সন্তানদের সতর্কবার্তা দেয় বাইরের উষ্ণতা সম্পর্কে। এতে তাদের বিকাশের প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে।
অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও এ রকম কৌশলের প্রচলন আছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে। এই গবেষণার মধ্য দিয়েই হয়তো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলার কৌশলের খোঁজও পেয়ে যাবে মানুষ!
বিবার্তা/জিয়া