শিরোনাম
সমুদ্রের তলদেশে ‘গুপ্তধন’ পেলেন দুই ডুবুরি
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:১৬
সমুদ্রের তলদেশে ‘গুপ্তধন’ পেলেন দুই ডুবুরি
সংগৃহীত
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

অপেশাদার দুই ডুবুরি সমুদ্রগর্ভে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ ‘গুপ্তধন’-এর সন্ধান পেয়ে গেলেন। এমনিতে গুপ্তধন বলতে আমরা যা ভাবি বা বুঝি, তেমন রত্নখচিত বাক্স থেকে উপচে পড়া সোনাদানা না হলেও খান পঞ্চাশেক ঝকঝকে স্বর্ণমুদ্রাই উদ্ধার করেছেন ওই ডুবুরিরা। তবে সেগুলোর ঐতিহাসিক কদর তাদের বস্তুমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।


স্বর্ণমুদ্রাগুলো অতি প্রাচীন। কম করে দেড় হাজার বছরের পুরনো। রোমের বিভিন্ন সম্রাটের আমলে তৈরি করা হয়েছিলো সেগুলো। ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, এ যাবৎ যত রোমান মুদ্রা উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে এই সংগ্রহটিই অন্যতম বড়।


স্পেনের পূর্ব উপকূলে ইবিজা থেকে সামান্য দূরে ভূমধ্যসাগরের লাগোয়া প্রাচীন শহর জাবিয়া। এক সময় রোমের উপনিবেশ ছিলোএই শহরে। জাবিয়াতেই দুই ডুবুরি ‘গুপ্তধন’ খুঁজে পেয়েছেন। জাবিয়ার পোর্টিটজল দ্বীপে সমুদ্রের পানিতে নেমেছিলেন তারা। প্রথমে নুড়ি পাথরের নীচে চাপা পড়ে থাকা আটটি স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছিলেন তারা। পরে তাদের কথায় ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে স্পেনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা আরও ৪৫টি স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করেন।


সমুদ্রের তলা থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণমুদ্রার ওই সংগ্রহ দেখে ইতিহাসবিদরা উচ্ছ্বসিত। একটি বিবৃতি দিয়ে স্পেনের অ্যালিসান্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সেই উচ্ছ্বাসের কথা বেশ ফলাও করে জানিয়েছেন।


উচ্ছ্বাসের কারণ মুদ্রাগুলোর বর্তমান অবস্থা। সেগুলোতে সময়ের ছাপ তো পড়েইনি, বরং দেড় হাজার বছরের পুরনো মুদ্রা এখনও বেশ ঝকঝকে। এক গবেষকের কথায়, দেখে মনে হবে যেন কালই তৈরি হয়েছে।


এতে দু’টি সুবিধা হয়েছে। প্রথমত, মুদ্রায় খোদাই করা রোমান সম্রাটদের ছবি এবং লিপি স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, তা থেকে মুদ্রাগুলোর সময়কাল সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণাও পাওয়া গেছে। গবেষকদের ধারণা, মুদ্রাগুলো খুব ভালভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিলো বলেই এত বছর ধরে পানির তলায় থেকেও নষ্ট হয়নি।


ঠিক কোন সময়ে মুদ্রাগুলো তৈরি হয়েছিলো, তা জানতে পরীক্ষা করানো হয়েছিলো। তাতে জানা গেছে, মুদ্রাগুলো চতুর্থ শতাব্দীর শেষ থেকে পঞ্চম শতাব্দীর গোড়ার দিকের মধ্যে সময়ে তৈরি।


মোট ৫৩টি মুদ্রা পাওয়া গেছে। তবে এর মধ্যে ৫২টির সময়কাল জানতে পেরেছেন অ্যালিসান্টের গবেষকরা। একটি মুদ্রায় খোদাই করা সম্রাটের মুখ বা লিপি কেউ ঘষে তুলে দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে অ্যালিসান্টের পক্ষ থেকে।


এই ৫২টি মুদ্রার তিনটি সবচেয়ে বেশি পুরনো। সেগুলি রোমের সম্রাট প্রথম ভ্যালেন্টিনিয়ানের আমলের। এছাড়া দ্বিতীয় ভ্যালেন্টিনিয়ানের আমলের সাতটি, প্রথম থিওডোসিয়াসের আমলের ১৫টি, আর্কাডিয়াসের রাজত্বকালের ১৭টি এবং অনোরিয়াসের সময়ের ১০টি মুদ্রা রয়েছে।


মুদ্রাগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকটি তামার পেরেকও উদ্ধার করেছিলেন ডুবুরিরা। তবে গবেষকদের ধারণা, সেটি হয়তো কোনও সিন্দুকের। যাতে স্বর্ণমুদ্রাগুলো ভরে কেউ সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলেন পরে এসে উদ্ধার করবেন বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরতে পারেননি।


অ্যালিসান্টের অধ্যাপক জেমি মলিনা ভিডালের নেতৃত্বে জাবিয়ার সমুদ্রের নীচে তল্লাশি চালিয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। মলিনা জানিয়েছেন, স্বর্ণমুদ্রাগুলো তাদের সামনে ইতিহাসের একটি অজানা দরজা খুলে দিয়েছে। বেশ কিছু অজানা সূত্রও জোড়া লাগানো যাবে তা দিয়ে।


যদিও কারা এভাবে ওই মুদ্রা পানিতে ফেলে থাকতে পারে, তা স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে। তাদের মতে, ৪০৯ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে রোমান সম্রাজ্যে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে বেশ কিছু বিদেশি শক্তি। তাদের অত্যাচারের কথা বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ্যে এসেছে। মলিনার ধারণায় আগ্রাসকদের হাত থেকে সম্পদ রক্ষা করতেই তা পানিতে ফেলে দেন এলাকার কোনো ধনী ব্যক্তি।


জাবিয়া রোমানদের বন্দর শহর ছিলো। রোমানদের মাছের সরবরাহ আসত এখান থেকেই। তাই জাবিয়ায় উপকূল এলাকায় কোনও ধনী ব্যক্তি থাকবেন, এটা ধরে নেওয়া যায়। মলিনা বলেছেন, হয়তো যিনি ওই মুদ্রা সমুদ্রে ফেলেছিলেন, তিনি ভেবেছিলেন পরে তা উদ্ধার করবেন। কিন্তু ফিরে আসার আগেই সম্ভবত মারা যান। তার পর দেড় হাজার বছর পার করে দুই ডুবুরি সন্ধান পেলেন সেই গুপ্তধনের।


বিবার্তা/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com