শিরোনাম
একজন সফল বাবার গল্প (পর্ব-১)
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২১, ১২:৩৯
একজন সফল বাবার গল্প (পর্ব-১)
নাঈম কামাল
প্রিন্ট অ-অ+

ছেলে আমার বড় হবে, মাকে বলতো সে কথা। হবে মানুষের মতো মানুষ এক, লেখা ইতিহাসের পাতায়। জেমসের গাওয়া এই গান শুনেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। কিন্তু যেই মানুষটিকে নিয়ে এই গান সেই মানুষের বাস্তব জীবনের গল্প কতজনইবা জানে। জীবনে কতো বাবার গল্প শুনেছি, কতো বাবা সম্পর্কেই না জেনেছি, কিন্তু এই সকল বাবার গল্প হয়তো অনেকেরই অজানা। অনেক সন্তানই জানেন না তাদের তিলে তিলে গড়ে তোলার পেছনে বাবাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের কথা।


যেই বাবাকে নিয়ে জেমসের বিখ্যাত এই গান, সেই বাবাদেরই একজন তাজুল ইসলাম। বাড়ি শরিয়তপুরে। ৬৪ বছর বয়সী তাজুল ১৯৯০ সাল থেকে আইসক্রিম বিক্রি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে। এখন ২০২১ সাল। দীর্ঘ এই ৩১ বছর ধরে আছেন এই ক্যাম্পাসে। দেখেছেন ঢাবিতে বিগত দিনের কতো শত মানুষের উত্থান-পতন। সংগ্রাম ইতিহাসের অনেক কিছুই ঘটেছে তার চোখের সামনেই। সেসব বলতে গিয়েই প্রসঙ্গক্রমে জানালেন তার আইসক্রিম ব্যবসার কথা।


ছোট এই ব্যবসা দিয়েই চার ছেলের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেন তিনি। প্রথম ছেলেকে আইস্ক্রিম বিক্রির টাকা দিয়ে পুরান ঢাকার বোরহানউদ্দিন কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করিয়েছেন। মেঝো ছেলেকে পড়িয়েছেন কবি নজরুল কলেজে। সেখান থেকেই ডিগ্রী শেষ করেছে সে। তৃতীয় ছেলে রাজধানীর একটি স্কুলে এবার দশম শ্রেণির ছাত্র। চতুর্থ জন পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে।



বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে তাজুল ইসলামের সাথে কথা হয় বিবার্তার। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি ১৯৯০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসক্রিম বিক্রি করে আসছি। এর থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছি। নিজে কষ্ট করছি ঠিকই, কিন্তু ছেলেদের পড়াশুনা করাতে পারছি এতেই মনে শান্তি পাচ্ছি। আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় কির আর আমার ছেলেরা অশিক্ষিত থাকবে তা কি করে হয়। নিজে পড়ালেখা করতে পারিনি কিন্তু এখানে থেকে এখন মর্ম বুঝি। তাই নিজে না পারলেও ছেলেদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।


তিনি বলেন, বড় ছেলেদেরকে পড়ালেখা শেষ করাতে পেরেছি। এখন ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। তবে করোনা মহামারীর কারণে প্রায় দুই বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় তাদেরকে নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত। কবে স্কুল খুলবে তা এখনো বুঝতে পারছি না। কবে স্কুল খুলবে, কবে আমার স্বপ্ন সত্যি হবে সে চিন্তায় আমার ঘুম হয় না ঠিক মতো। আমার তো এখন বয়স হয়ে গেছে, কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার ইচ্ছা তাদেরকে পাড়ালেখা শেষ করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবো। তাদের সফল জীবন দেখার পরে আমি কবরে যেতে যাই।


তিনি জানান, আগে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার আইসক্রিম বিক্রি করতাম। কিন্তু করোনা আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাম্পাসে কোন শিক্ষার্থী নেই কার কাছে বিক্রি করবো? তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় বাসায় বসেই অলস সময় পার করতে হয়েছে। প্রথম প্রথম আইসক্রিম কোম্পানী থেকে পাওয়া অনুধানে কোনরকম দিন চালিয়ে নিয়েছি। কিন্তু কয়েকমাস ধরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে সংসার নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। গত তিনদিন আগে মৌখিক অনুমতি পেয়ে আবার ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছি। আগে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারলেও এখন সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছি। অন্তত কোনরকম খাওয়ার খরচ জোগাড় করতে পারছি এতেই খুশি।


সংসারে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারলেও ব্যবসার ধরনে কোন পরিবর্তন হয়নি তার। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে আইসক্রিম বিক্রিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। আগে বিক্রি করতেন কাঠের বাক্সে করে, আর এখন ফ্রিজিং সিস্টেম গাড়িতে। আগে বরফ বোঝাই বাক্স মাথায় নিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চসে বেড়াতেন পুরো ক্যাম্পাস, আর এখন চসে বেড়ান গাড়িতে।


বিবার্তা/বিআর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com