শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করল চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আইসিসি বিশ্বকাপের ২০তম ও দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে লঙ্কানদের ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে হারায় অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার এটা চতুর্থ জয়। পাঁচ ম্যাচ খেলা অস্ট্রেলিয়া মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছে। এর ফলে সর্বোচ্চ ৮ পয়েন্ট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে পিছনে ফেলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে এখন অস্ট্রেলিয়া। ৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নিউজিল্যান্ড।
আর এই ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠার স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গেল লঙ্কানদের। কারণ দলটির সংগ্রহ ৫ ম্যাচে মাত্র ৪ পয়েন্ট।
ওভালে টস জিতে আগে ব্যাট করে ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ৩৩৪ রানের বিশাল স্কোর গড়েই জয়ের পথে এগিয়ে যায় দলটি। জয়ের জন্য ৩৩৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বোলিং আক্রমণে শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতেই পারেনি লঙ্কানরা। মিচেল স্টার্ক আর রিচার্ডসনের বোলিংয়ে মাত্র ২৪৭ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।
ফলে ৮৭ রানে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। স্টার্ক চারটি, রিচার্ডসন তিনটি ও প্যাট কামিন্স দুই উইকেট পান। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা ফিঞ্চ।
জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার সামনে ৩৩৫ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল। তবে ৩৩৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা অসাধারণ করে দলটি। উদ্বোধনী জুটিতে কুশল পেরেরা ও দিমুথ করুনারত্নে মিলে ঝড়ো ব্যাটিং করে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে সফলও হয় এই জুটি।
কারণ ওপেনিং জুটি ভাঙ্গার আগেই শ্রীলঙ্কা পৌঁছে যায় ১১৫ রানে। তবে পেরেরার বিদায়ে ভাঙ্গে এই জুটি। স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৩৬ বলে ৫২ রান করেন পেরেরা। তার ৫২ রানের ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার আর একটি ছক্কার মার। পেরেরা ফিফটি করে আউট হলেও সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন অপর ওপেনার করুনারত্নে। কিন্তু ৯৭ রানে গিয়ে আউট হন এই অধিনায়ক। মাত্র তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি। রিচার্ডসনের বলে ম্যাক্সওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১০৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৯৭ রান।
দলীয় ১৫৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ে রানের গতি কিছুটা কমতে থাকে লঙ্কানদের। ব্যাট করতে নেমে দলের হয়ে ভালো করতে পারেননি থিরিমান্নে। মাত্র ১৬ রান করে আউট হলে ১৮৬ রানে প্রথম তিন উইকেট হারায় লঙ্কানরা। তবে কুশল মেন্ডিস আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস মিলে দলকে ২০০ রানের ঘরে নিয়ে যায়। দলীয় ২০৫ রানে ম্যাথুস আর দলীয় ২০৯ রানে মিলিন্দা সিরিবর্ধনের দ্রুত বিদায়ে বেশ চাপে পড়ে তারা। ম্যাথুস ৯ রান করলেও সিরিবর্ধনে করেন মাত্র ৩ রান।
ব্যাট করতে নেমে থিসারা পেরেরা রানের খাতা খোলার আগে বিদায় নিলে ২১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ম্যাথুসকে কামিন্স ফেরানের পর সিরিবর্ধনে আর পেরেরাকে ফিরান মিচেল স্টার্ক। দলীয় ২২২ রানে মেন্ডিসকে আউট করে স্টার্ক শ্রীলঙ্কার জয়ের স্বপ্ন একেবারে ভেঙে দেন। আউট হওয়ার আগে ৩৭ বলে দুই ছক্কায় ৩০ রান করেন মেন্ডিস।
শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার স্কোর থেমে যায় ৪৫.৫ ওভারে ২৪৭ রানে। দলটি খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভার।
এর আগে অধিনায়ক ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের জন্য ৩৩৫ রানের বিশাল টার্গেট দেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। লন্ডনে টস হেরেও আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে বিশাল ৩৩৪ রান করে চ্যাম্পিয়নরা। ফিঞ্চের সেঞ্চুরির পাশাপাশি স্টিভেন স্মিথের ৭৩ রান আর ম্যাক্সওয়েলের অপিরাজিত ৪৬ রানের উপর ভর করে ৩৩৪ রানের বিশাল স্কোর গড়ে দলটি।
দুই ওপেনার ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার দলকে পৌঁছে দেয় ৮০ রানে। ওয়ার্নারের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে সরাসরি বোল্ড আউট হওয়ার আগে ৪৮ চলে ২৬ রান করেন গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নার।
ওয়ার্নারকে হারানোর ধাক্কা সামলে নিতে ফিঞ্চ নতুন জুটি করেন ওসমান খাজাকে নিয়ে। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি খাজা। দলকে ১০০ রানে পৌঁছে ব্যক্তিগত মাত্র ১০ রান করে ডি সিলভার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন খাজা। খাজার বিদায়ে ফিঞ্চ নতুন জুটি করেন স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে। এই দু’জনের ব্যাটে ভর করেই বড় স্কোরের সুযোগ পায় অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ১৭৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন ফিঞ্চ।
এই জুটি ভাঙার আগেই ২৭৩ রানে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ১৭৩ রানে ফিঞ্চের বিদায়ে ভাঙে এই সফল জুটি। আউট হওয়ার আগে দলের পক্ষে সেঞ্চুরিসহ ১৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ফিঞ্চ। সেঞ্চুরির পাশাপাশি চলমান বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিকও এখন এই অধিনায়ক।
ইসুরু উদানার বলে আউট হওয়ার আগে ৯৭ বলে সেঞ্চুরি করা ফিঞ্চ ১৩২ বলে ১৫টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ১৫৩ করেন তিনি। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা রানও। দলীয় ২৭৪ রানে আউট হন স্মিথ। লাসিথ মালিঙ্গার বলে বোল্ড হওয়ার আগে স্মিথ ৫৯ বলে সাতটি চার ও একটি ছক্কায় ৭৩ রান করেন।
ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেননি শন মার্শ, অ্যাওেলক্স ক্যারি আর প্যাট কামিন্স। শন মার্শকে মাত্র তিন রানে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন উদানা। ব্যাট করতে নেমে অ্যালেক্স ক্যারি ৪ রান করলেও রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হন প্যাট কামিন্স।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে ডি সিলভা ও উদানা দুটি করে উইকেট নেন। মালিঙ্গা নেন একটি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৭ (ওয়ার্নার ২৬, ফিঞ্চ ১৫৩, খাওয়াজা ১০, স্মিথ ৭৩, ম্যাক্সওয়েল ৪৬*, মার্শ ৩, কেয়ারি ৪, কামিন্স ০, স্টার্ক ৫*; মালিঙ্গা ১০-১-৬১-১, প্রদিপ ১০-০-৮৮-০, উদানা ১০-০-৫৭-২, থিসারা ১০-০-৬৭-০, ডি সিলভা ৮-০-৪০-২, সিরিবর্দনা ২-০-১৭-০)
শ্রীলঙ্কা: ৪৫.৫ ওভারে ২৪৭ (করুনারত্নে ৯৭, কুসল পেরেরা ৫২, থিরিমান্নে ১৬, মেন্ডিস ৩০, ম্যাথিউস ৯, সিরিবর্দনা ৩, থিসারা ৭, ডি সিলভা ১৬*, উদানা ৮, মালিঙ্গা ১, প্রদিপ ০; স্টার্ক ১০-০-৫৫-৪, কামিন্স ৭.৫-০-৩৮-২, বেহরেনডর্ফ ৯-০-৫৯-১, রিচার্ডসন ৯-১-৪৭-৩, ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৪৬-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যারন ফিঞ্চ
- বাসস
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]