উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হলো রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে আয়াক্স আমস্টারডামের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা বিদায় নিলো।

মঙ্গলবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তাদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ডাচ ক্লাব। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ ব্যবধানের জয়ে ইতিহাস গড়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে আয়াক্স।

আয়াক্সাসের বিপক্ষে শেষ সাত ম্যাচের সবগুলো জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে মাঠে নামে রিয়াল মাদ্রিদ। তাই ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তাদের গায়ে নিশ্চিত ফেভারিটের তকমা ছিল। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে এদিন ছিলেন না রিয়ালের নিয়মিত অধিনায়ক সার্জিও রামোস। কিন্তু খেলার শুরুতেই অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে রিয়াল।

ম্যাচের শুরুতেই ৪ মিনিটের মাথায় লুকাস ভাসকুয়েসের ক্রস থেকে রাফায়েল ভারানে হেড করলে বল গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফলে গোল বঞ্চিত হয় স্বাগতিকরা।

তবে এরপরই ম্যাচের চিত্রটা পাল্টে দেয় নেদারল্যান্ডসের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আয়াক্স। ৭ থেকে ১৮ এ ১১ মিনিটে পুরো ম্যাচের সমীকরণ বদলে দেয় অতিথি দলটি। ৭ মিনিটে আক্রমণ থেকে বল পেয়ে রিয়ালের ডি-বক্সে নিয়ে যান ডুসান ট্যাডিক। দুর্বল ডিফেন্সের সুযোগে তার পাস থেকে বল জালে জড়ান হাকিম জাইসি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আয়াক্স।

এরপর ১৮ মিনিটে আবারো আক্রমণ চালায় আয়াক্স। সেই ডুসান ট্যাডিকের পাস থেকে পেনাল্টি বক্সের ৬ গজ দূরে বল পেয়ে যান ডেভিড নেরেস। বাম পায়ের বুদ্ধিদীপ্ত শর্টে বল আবারো রিয়ালের জালে। ২-০ গোলের লিড আয়েক্সের। দুই লেগ মিলে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় ডাচ ক্লাবটি।

পরে আক্রমণের গতি আরো বাড়িয়ে দেয় আয়াক্স। ২১ মিনিটে ডেভিড নেরেস লিডটাকে ৩-০ করার সুযোগ পেয়েছিল। তবে সুযোগটি নষ্ট করেন তিনি। ৩৪ মিনিটে হাকিম জাইসির শট ফিরিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবাউ কোর্তোয়া।

রিয়াল মাদ্রিদও গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিল। ৩৬ মিনিটে করিম বেনজেমার শট ফিরিয়ে দেন আয়াক্স গোলরক্ষক। ৪২ মিনিটে গ্যারেথ বেলের শট গোলবারে লেগে ফিরে আসে। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে শেষ করে আয়াক্স।

বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে পড়ে স্বাগতিক দল লস ব্ল্যাঙ্কসরা। ৫০ ও ৫৪ মিনিটে বেনজেমার দুইটি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

এরপরের গল্পটা আয়াক্সের। ৬২ মিনিটে ডুসান ট্যাডিকের গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আয়াক্স। তবে গোলটি নিয়ে থেকে যায় বিতর্ক। টিভি রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা যায় গোল হওয়ায় আগে বলটি ছিল সাইড লাইনের বাইরে। অর্থাৎ বলটি সাইড লাইনের বাইর থেকে টেনে আনা হয়। তবে ভিডিও রিভিউতে গোলটি দেয়া হয়।

৭০ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদের মার্কো আসানসিও একটি গোল শোধ করে ব্যবধান কমান। কোয়ার্টার ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে আক্রমণের গতি আরো বাড়িয়ে দেয় গ্যালাকটিকোরা। তবে সেই আশাটা এর দুই মিনিট পর নিভিয়ে দেন আয়াক্সের ল্যাসি স্কুনি। ৭২ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ এক গোলে দলকে ৪-১ গোলের লিড এনে দেন তিনি। ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী রিয়াল।

এরপর বাকিটা সময় অনেক চেষ্টা করেও আর কোনো লাভ হয়নি রিয়ালের। ৮৬ মিনিটে আয়াক্সের হাকিমি ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়েও গোল করতে পারেনি। ইনজুরি সময়ে নাচোর লাল কার্ড শুধু হতাশাই বাড়িয়েছে রিয়াল শিবিরে। শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলের এক ঐতিহাসিক জয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় আয়াক্স। দুই লেগ মিলে আয়াক্স জয় পেয়েছে ৫-৩ গোলে।

চ্যাম্পিয়নস লিগে বিদায়ের ফলে রিয়ালের এই মৌসুমটা হয়তো বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যাবে। কেননা এর আগে স্পেনের ঘরোয়া ফুটবলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসর কোপা দেল রে থেকেও বিদায় নেয় দলটি। আর লা লিগাতেও শীর্ষে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে তারা। নিশ্চিত শিরোপা শূন্য একটি মৌসুমে শেষ করতে যাচ্ছে সোলারির শিষ্যরা।

এদিকে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের অপর ম্যাচে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করেছে ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পার। দুই লেগ মিলে টটেনহ্যামের জয় ৪-০ গোলের।

বিবার্তা/মাইকেল/আকবর