আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সুযোগে দেশের জন্য ভালো কিছু করাই প্রধান লক্ষ্য মাশরাফির। মিরপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য পরিষ্কার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগ দিয়েছেন যদি বৃহৎ পরিসরে কিছু করা যায়। যদি সুযোগ পাই, মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের নক্ষত্র বলা হয় মাশরাফিকে। তবে এই নক্ষত্র হবার পথে শুধু বাধাই অতিক্রম করেছেন। কিন্তু কখনো জাতীয় দলের সাফল্যের নিজেকে গুটিয়ে নেননি। কখনো নিজের জন্য চিন্তা করেননি। নয়তো হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচারের পরও এখনো দলের অন্যতম ভরসার নাম মাশরাফি।
আগামী বিশ্বকাপকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বাংলাদেশের। সেই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন মাশরাফি। তবে ভবিষ্যতে দেশের ভালোর জন্য রাজনীতির ময়দানে যাবার সুযোগ তৈরি হয়েছে ম্যাশের। কিছুদিন আগেই দেশের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর নতুন ক্যারিয়ার নিয়ে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন মাশরাফি।
রাজনীতিতে নিজের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, আমার ক্যারিয়ার অবশ্যই শেষের দিকে। আমি শচিন টেন্ডুলকার না, আমি ম্যাকগ্রাও না, যে আমার কথা মানুষ স্মরণ রাখবে। আমি আমার মতো করেই ক্রিকেটটা খেলেছি। আমার সংগ্রামের জীবনে যতটুকু পেরেছি খেলেছি। তবে আমি সব সময় উপভোগ করেছি, মানুষের জন্য কাজ করতে পারা। এটা আমার ছোটবেলার শখ ছিল বলতে পারেন। ছোট বেলায় চাওয়া পাওয়া ছিলো। যেই সুযোগটা আমি বললাম, সেটি প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন, সে কারণেই বৃহৎ পরিসরে যদি কিছু করা যায়।
নির্বাচনে কেন আসার সিদ্বান্ত নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, প্রথমত ধরেন, আমি যদি ওয়ার্ল্ড কাপ পর্যন্ত খেলি, আমি যেটা চিন্তা করেছি..আর সাত থেকে আট মাস বাকি আছে। বিশ্বকাপের পর আমার ক্যারিয়ার যদি শেষ হয়, পরের সাড়ে চার বছরে কি হবে আমি জানি না। আর আমার একটা সুযোগ এসেছে, যেটা আমি উপভোগ করি সবসময়- মানুষের সেবা করার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা সুযোগ দিয়েছেন, আপনারা জানেন যে আমার একটা ফাউন্ডেশন আছে, আমার এলাকার জন্য কিছু কাজ করছি। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য ভালো সুযোগ, তাদের জন্য কাজ করার। এখান থেকেই মনে হয়েছে, হয়তো সাড়ে সাত-আট মাস পর তো আবার জাতীয় নির্বাচন হবে না। তাই এমন সিদ্বান্ত।
আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে ঘরের মাঠে শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। ওই সিরিজের আগে নির্বাচন কারণে আলোচনা বেশি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মাশরাফি বলেন, প্রথমত আমি বলেছি, আমার মাইন্ড সেট আপ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর পারবো কি-না জানি না। তারপরও আমার ফিটনেস পারফর্মেন্স ঊনিশ পর্যন্ত চলছিল বলে আমি মোটামুটি এগিয়েছি। সেটাই বলছি আমার বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাইন্ড সেট আপ আছে। তারপর রিভিউ করার সুযোগ আছে, আমি যদি সেই অবস্থায় না থাকি তাহলে অবশ্যই আমাকে সড়ে যেতে হবে। আর যদি থাকি তাহলে অবশ্যই আমি চেষ্টা করবো। তার আগেও যে কোন কিছু হতে পারে।
তিনি বলেন, ২০১১ বিশ্বকাপের পর আপনাদের এখানেই ৫০% লোকের বিশ্বাস করেছিল যে আমার ক্যারিয়ার শেষ। আল্লার রহমতে আরো সাত বছর খেলতে পেরেছি। ওখানে আমার ফ্যামিলির সবাই ভেবেছিল, আমি পারবো কি-না।
জাতীয় নির্বাচনের কারণে খেলায় মাশরাফির মনসংযোগ ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, এমন চিন্তা অনেকেরই। কিন্তু অনেকের সাথে একমত নন ম্যাশ।
তিনি বলেন, আমার কাছে একদমই না। আমার মাইন্ডসেট আপে একদমই নেই। আমার পুরোপুরি অনুশীলনে মন আছে। অবশ্যই ১৪ তারিখের পর আমি নির্বাচনে মন দিবো। নির্বাচনে যা করার ১৪ তারিখের পর। এর আগে পুরোপুরি মন থাকবে খেলার উপর।
যদি বিশ্বকাপের পর অবসর নেয়া হয়, তবে দেশের মাটিতে এটিই মাশরাফির শেষ সিরিজ। নির্বাচনে নাম লেখানোর পর এই সিরিজকে কিভাবে দেখছেন মাশরাফি?
তিনি বলেন, আমার কাছে নির্বাচনে আসার আগেও যেমন ছিল এই সিরিজটাও সেরকম। আমার শেষ আর শুরুতে কিছু আসবে না। তবে অবশ্যই সিরিজটা জিততে চাই। আমার চোখে ঠিক আট-দশটা সিরিজ যেভাবে খেলছি এটাও তাই।
মাশরাফি রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে বিভিন্ন দলের মন্তব্য সর্বত্র। এটিকে কিভাবে দেখছেন মাশরাফি, আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে আপনার নিজের পারসনালিটি থাকা উচিত। আপনি যদি কোনো দলকে সাপোর্ট করেন তাহলে অবশ্যই সেটা প্রকাশ্যে বলা উচিত। এমন অনেকেই আছে যারা সাপোর্ট করে কিন্তু বলতে পারে না। প্রত্যেকে যে যার দল করে তার সম্মানটা থাকা উচিত এবং তার মতো করে দেশের জন্য কাজ করবে এই মানসিকতাই থাকা উচিত। যারা কমেন্ট করছে বা করবে তা আমার নিয়ন্ত্রণে নাই।
রাজনীতিতে নাম লিখেছেন, চলতি মাসের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচন। এখনো নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করেননি মাশরাফি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষেই নির্বাচন নিয়ে নিজের কাজ শুরু করবেন বলে জানান মাশরাফি।
তিনি বলেন, না এখনো এলাকায় ঘোরার সুযোগ পাইনি, যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সিরিজটা খেলার পর যাবো। নড়াইলের মানুষজনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমি যেতে পারিনি, গেলে আমার যেই কাজগুলো আছে সেগুলো আমি করবো।
বিশ্বকাপ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক খেলার কথা বলেছিলেন মাশরাফি। তবে ফিটনেস থাকলে নিজের দেশের হয়েও আরও খেলার চিন্তা-ভাবনা করবেন তিনি। তবে সাংসদ হয়ে গেলে তখন কি করবেন মাশরাফি!
এ ব্যাপারে ম্যাশ বলেন, প্রথমত আমার লক্ষ্য বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবে। বিশ্বকাপ পর্যন্ত আট মাসের ব্যাপার। আট মাস পর্যন্ত যেভাবে খেলে আসছি ওইভাবে খেলার চেষ্টা করব। আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্যও ছিল বিশ্বকাপ। পরে সেটা রিভিউ করব কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।
নির্বাচন নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা বলেন মাশরাফি। আর নির্বাচিত হবার পর কি করবেন তা আগ থেকে বলতেও চান না তিনি, দেখেন আমি স্বপ্ন দেখাতে আসিনি। যদি গতানুগতিক হয়ে থাকে গতানুগতিক কথা বলতেও চাই না। যেটা হয়ত কাল আপনি মিলাতে পারবেন না। সেই সুযোগটা যদি আমার আসে, এখনি চিন্তা করার সুযোগ নাই যে আমি নির্বাচিত হয়ে গেছি। নির্বাচিত হওয়ার পর যদি আপনাদের মনে হয় রিভিউ করতে আমার কাজ, তখন করবেন। এখন আসলে বলা কঠিন।
নিজ জেলা নড়াইয়ে সমর্থন ভালো আছে বলে জানান মাশরাফি, আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনো যেতে পারিনি, তাই পুরোটা বলা কঠিন। খেলার পরে গেলে বুঝতে পারব।
দেশের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুশি মাশরাফি। তিনি বলেন, দেশের ক্রিকেটের কথা যেটা বললাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালই চলছে। এখন যারা আছেন, আরো পরিষ্কারভাবে বলতে পারেন, আমার অবস্থান থেকে যতটুকু সাপোর্ট দেয়ার ততটুকু দেব।
ভবিষ্যতে ক্রিকেট বোর্ডে আসতে চান কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, আমি তো আগেই বললাম সামনে কি হবে জানি না। নির্বাচন হলে নির্বাচনে জিততে হবে। এই পর্যায় পার না হলে বলা যায় না কিছুই।
ক্রিকেটে যেভাবে মন দিয়েছেন নিজের দ্বিতীয় ক্যারিয়ারেও সেভাবে কাজ করতে বদ্ধ পরিকর মাশরাফি, আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি। নিজেকে ঠিক জায়গায় নিতে পারি কি-না, সেটা আমি দেখি। ২০০১ সালে যখন ডেব্যু হয় আমি তরুণদের আইকন ছিলাম না। আমি আমার কাজটা মন দিয়ে করে গেছি, তারপর এ অবস্থানে এসেছি। আর নির্বাচিত হলে আমার কাজটা ঠিকমতো করার চেষ্টা করব, তারপর দেখা যাক কী হয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করেন মাশরাফি, ফরম্যাট যত ছোট হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তত ভালো একটা দল। অবশ্যই ভালো একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আশা করছি। টেস্ট সিরিজ জেতার পর খেলোয়াড়রা ভালো অবস্থায় আছে।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]