বিশ্বকাপের শুরু থেকেই আর্জেন্টিনা শিবির ক্রমশ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ হয়ে উঠে। শিবিরে গৃহযুদ্ধের ধিকিধিকি আগুন জ্বলছিলই। শনিবার রাতে সেই আগুন রূপ নেয় অগ্ন্যুত্পাতে!
আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্রয়েই আভাস ছিল দলের অন্দরের সমস্যার। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে তিন গোলে লজ্জার, অপমানের পরাজয় কোচের বিরুদ্ধে অনাস্থাকে অন্য মাত্রা দেয়। ফুটবলাররা সবাই একজোট হয়ে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির বিরুদ্ধে ঘোষণা করেন বিদ্রোহ। তবে নেতৃত্বে লিওনেল মেসি নন, বর্ষীয়ান মিডফিল্ডার হাভিয়ার মাসচেরানো।
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচা–মরার ম্যাচে আর্জেন্টিনার একাদশ নির্ধারণে কোচ সাম্পাওলির কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। একাদশ ঠিক করবেন দলের খেলোয়াড়েরাই!
মস্কোর কাছে ব্রোনিৎসিতে শিবির আর্জেন্টিনার। সেখানেই টিম হোটেলে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসার দাবি জানানো হয় ফুটবলারদের তরফে। টিম হোটেলে সাম্পাওলি ও বাকি কোচিং স্টাফদের সঙ্গেও আলোচনার দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার রাতে নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচ মেসিদের। যাতে জিততেই হবে। তবে শুধু জিতলেই হবে না। তাকিয়ে থাকতে হবে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের দিকেও।
তিন পয়েন্ট পাওয়াই এখন মারাত্মক চাপের মধ্যে আর্জেন্টিনা। তার ওপর কোচের প্রতি অনাস্থা চরমে। ফুটবলাররা সোজাসুজি তা জানিয়েও দিয়েছেন। তারা সরাসরি কোচকে সরাতে বলেছেন। কারণ কোচের রণকৌশল নিয়ে তাদের মধ্যেও রয়েছে সংশয়। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে তিন ডিফেন্ডারে দল সাজিয়েছিলেন সাম্পাওলি। অথচ আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে রক্ষণে চারজনকে রেখেছিলেন তিনি। একজন রক্ষণে কমে যাওয়ায় ক্রোটদের আক্রমণে বারবার ভেঙে পড়ছিলেন ওটামেন্ডিরা।
কোচ হোর্হে সাম্পাওলি
নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে তাই সাম্পাওলির ওপর আর ভরসা রাখতে পারছেন না ফুটবলাররা। সাম্পাওলির পরিবর্তে তারা চেয়েছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) জেনারেল ম্যানেজার ও ’৮৬ বিশ্বকাপ তারকা হোর্হে বুরুচাগাকে।
এদিকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার সাবেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রিকার্ডো গিউস্তির দাবি, তিনি বুরুচাগার সঙ্গে কথা বলেছেন। বুরুচাগা তাকে বলেছেন, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে খেলোয়াড়েরা তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ, সেই আলোচনাতেই নাকি ক্ষমতা হারিয়েছেন সাম্পাওলি। সরকারিভাবে যদিও কিছু ঘোষিত হয়নি। তবে, তিনি নাকি কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছেন। তার চাকরি যদিও আপাতত যায়নি। এই ব্যাপারে ফুটবলারদের দাবিও মেনে নেয়া হয়নি। কিন্তু বিশ্বকাপের পরই বিদায় নেবেন সাম্পাওলি।
আসলে কোচকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে সরালে যে বিপুল পরিমাণ অঙ্ক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তার হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছে ফুটবল ফেডারেশন। সাম্পাওলি যদি নিজে থেকে সরে যান, কোনো আপত্তি নেই। নিজে থেকে না সরলে থাকবেন মর্যাদা ও গুরুত্ব সব বিসর্জন দিয়েই।
শিবিরে যা ফিসফাস, তাতে নাইজরিয়া ম্যাচে সাম্পাওলি থাকছেন একেবারে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হয়েই। প্রকাশিত নানা রিপোর্ট অনুসারে, ঠিক হয়েছে, প্রথম দল বেছে নেবেন ফুটবলাররা। খুব সম্ভবত, ফুটবলার পরিবর্তনও নিজেরাই করবেন। সাম্পাওলি যদি ইচ্ছা করেন, তবে বসতে পারেন বেঞ্চে।
আর্জেন্টিনা স্কোয়াডকে চাঙা করে তুলতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছেন মেসি ও মাচেরানো। অবশ্য এ ছাড়া আর পথও নেই। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র এবং ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারে মেসিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। শেষ ষোলোয় উঠতে হলে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে। পাশাপাশি তাদের প্রার্থনায় থাকতে হবে আইসল্যান্ড যেন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জিততে না পারে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]