শিরোনাম
উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি রাশিয়া-সৌদি আরব
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০১৮, ১১:৫৮
উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি রাশিয়া-সৌদি আরব
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আর কয়েক ঘণ্টা পরই মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে সৌদ আরব। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দল কখনো হারেনি। সে হিসেবে আজকের ম্যাচের ফেভারিট দল রাশিয়া। কিন্তু ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে জয়শূন্য রাশিয়া। এদিকে বিশ্বকাপের সর্বশেষ ১০ ম্যাচেই হেরেছে সৌদি আরব। আজকের ম্যাচে জয় পেতে হলে বিশ্বকাপের এই ইতিহাসটা বদলাতে হবে তাদের।


বিশ্বকাপে রাশিয়া প্রথম নয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমানের রাশিয়া মিলে দশমবারের মতো অংশ নিচ্ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার এ টুর্নামেন্ট। কিন্তু প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করে রাশিয়ার ফুটবল রঙ-বর্ণহীন। দেশটির ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় বিশ্বকাপ আয়োজন করছে রাশিয়া। ৩২ দেশের মধ্যে সবার নিচে থেকে আন্ডারডগ হিসেবেই মাঠে নামতে হচ্ছে লেলিনের দেশকে।



বিশ্বকাপের ইতিহাসের এই প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা দুইটি দলের ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সৌদি আরবের অবস্থান ৬৭, অন্যদিকে রাশিয়ার অবস্থান ৭০।


শক্তিতে দুই দেশের পার্থক্য বেশ। এশিয়ার দেশটিরও একটা রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে। এই প্রথম এশিয়ার কোনো দেশ খেলছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ। ইতিহাসের অংশ হতে যাওয়া দিনটি কী রাঙিয়ে দিতে পারবে সৌদি আরব? বুধবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের কোচ হুয়ান অ্যান্থনি পিজ্জি বলেছেন, তারা গ্যালারির দর্শকের উচ্ছ্বাসটা থামিয়ে দিতে চান।


সৌদি জিতলে তাদের রেকর্ড যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমন ভেঙ্গে যাবে বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের আরেকটি ইতিহাস। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের না হারার রেকর্ড হয়ে যাবে ধুলিষ্যাত। রাশিয়া কী পারবে স্বাগতিকদের সেই গৌরব ধরে রাখতে? জয় না হোক, অন্তত ড্র করতে পারলেও অটুট থাকে আগের আসরগুলোর রেকর্ড।


রাশিয়ার যে ১১ শহরে বিশ্বকাপ হবে তার মধ্যে প্রধান মস্কো। দেশটির রাজধানীর দুটি স্টেডিয়াম লুঝনিকি ও স্পার্টাক আছে ভেন্যুর তালিকায়। তবে সবার দৃষ্টি থাকবে লুঝনিকির দিকে। এখানে উদ্বোধন, এখানেই ফাইনাল। একটা ভেন্যুর ঐতিহ্য রাঙাতে আর কী লাগে।


কিন্তু রাশিয়ার মানুষ কী এ সব নিয়ে ভাবে? হয়তো ভাবে। কিন্তু ফুটবল নিয়ে তাদের আগ্রহের জায়গা যে আগের অবস্থানে নেই। এক সপ্তাহ হলো মস্কোতে আছি। কোনো রাশিয়ানকে দেখা যায়নি নিজ দেশের ফুটবল নিয়ে সেভাবে আগ্রহ প্রকাশ করতে। কেমন করতে পারে রাশিয়া? এমন প্রশ্নের উত্তরে বেশিরভাগ রাশিয়ানেরই এক উত্তর-‘নট গুড।’


বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় বাঁজবে বিশ্বকাপের বাঁশি। বিশ্ব কাঁপিয়ে শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপ। আর সে বাঁশি যে শহর থেকে বাজবে সেই মস্কোকে তো উৎসবের নগরী বানিয়ে রেখেছেন ভীনদেশিরা।


এই যেমন ১২ জুন রাশিয়ার জাতীয় দিবস উদযাপনতো রাঙিয়ে দিয়েছিল নানা দেশের নানা রঙের মানুষেরা। মস্কোর ঐতিহাসিক রেড স্কয়ারে হাজার হাজার বিদেশি মানুষ উৎসব করেছে দিনভর। বিদেশিদের সরব উপস্থিতি না থাকলে মস্কোকে বিশ্বকাপের শহর মনেই হতো না।


শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় বরং ভীনদেশিদের নানা ধরনের উৎসব উপভোগ করছে স্থানীয় মানুষ। স্থানীয়রা হেটে যাচ্ছেন-পাশে দেখা গেলো ভীন দেশি একদল সমর্থ ব্যস্ত নাচ-গানে। রাশিয়ানরা একটু মুচকি হেসে পাশ দিয়ে হনহন করে চলে যাচ্ছেন।


বিশ্বকাপ মানেই ফিফার বড় চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া বিশ্বকাপের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও। এই তো এক মাস আগেও কয়েকটি দেশ সুর তুলেছিল বিশ্বকাপ বয়কটের। যদিও ফিফা আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে বয়কটের মতো দু:সাহস কারো নেই। তারউপর এটা বিশ্বকাপ। সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলার হুমকীও ছিল বিশ্বকাপ চলাকালীন। তবে এখানকার নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা জানান দিচ্ছে ভালোয় ভালোয় শেষ হবে বিশ্বকাপ।



রাশিয়া দলের অবস্থা ভালো নয়। এটা দেশের মানুষের জন্য যখন মন খারাপের বিষয় তখন দেশটির প্রধান পুতিনেরতো হবেই। তাইতো তিনি ফুটবলারদের দেশের জার্সি, দেশের জন্য, দেশের ঐহিত্যের কথা মনে করে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলার উপদেশ দিয়েছেন। রাশিয়ার মানুষও বেশি কিছু চায় না ফুটবলারদের কাছে থেকে। গ্রুপ পর্ব পার হলেই সেটা হবে রাশিয়ানদের জন্য বিশাল অর্জন।


রাশিয়ার কোচ স্তানিস্লাভ চেরিসভ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘লুঝনিকি স্টেডিয়ামের সমর্থন জানাবে আমাদের। এক ম্যাচ জিতলে সব চিত্রই বদলে যাবে। ফুটবলে সব কিছুই সম্ভব। আমরা দর্শকদের আনন্দ দিতে চাই।’


এবার দল নির্বাচনে বেশ বেগ পেতে হয়েছে রাশিয়ান কোচ স্টানিসলাভ চেরচিসোভকে। দলটির রক্ষণভাগে বেশ কজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়ে খেলতে পারছেন না। ফলে অবসরে যাওয়া ৩৮ বছর বয়সী সের্গেই ইগনাশিভিচকে দলে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। দলটির বিশ্বকাপ রেকর্ডও খুব উজ্জ্বল নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এ পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে রাশিয়া। কোনবারই নক আউট পর্বের খাড়া এড়াতে পারেনি দলটি। বিশ্বকাপের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে ৩টিতে হেরেছে তারা। ড্র করেছে ২টিতে।


অন্যদিকে সৌদি আরবও কখনো নক আউট পর্ব পার হতে পারেনি। আর নিজেদের প্রথম ম্যাচেও জয় পায়নি কখনো। তবে এবার ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ আল-শাহলাইকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে দলটি। বাছাইপর্বে ১৬ গোল করেছেন এই ফরোয়ার্ড। তবে সৌদি আরবের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে ইতিহাস। এর আগে দুই দল একবারই মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে এক প্রীতিম্যাচে রাশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল তারা।


সম্ভাব্য একাদশ :


রাশিয়া


ইগোর আকিনফিভ (১) মারিও ফের্নান্দেস (২), ফেদোর কুদ্রাইয়াসহোভ (১৩), সের্গেই ইগনাশিভিচ (৪), ইউরি জিরকভ (১৮), রোমান জোবনিন (১১), ডেলার কুজিয়াভ (৭), অ্যালান জিগোয়াভ (৯), আলেকজান্দার সামিডোভ (১৯), আলেকজান্দার গোলভিন (১৭), ফেদর সমোলোভ (১০)।


সৌদি আরব


আব্দুল্লাহ আল-মায়ুফ (১), উসামা হাওসায়ি (৩), মোহাম্মদ আল-বারিক (৬), ওমর হোসাই (৫), ইয়াসির আল-শাহরানি (১৩), আব্দুল্লাহ ওতিফ (১৪), সালমান আল-ফরাজ (৭), ইয়েহিয়া আল-সেহরি (৮), তাইসির আল-জসিম (১৭), সালমেন আল দোসেরি (১৮), মোহাম্মদ আল-শাহলাই (১০)।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com