শিরোনাম
মেসিবিহীন দুর্দান্ত আর্জেন্টিনা দেখলো ইতালি
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০১৮, ১২:২৪
মেসিবিহীন দুর্দান্ত আর্জেন্টিনা দেখলো ইতালি
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আগের ম্যাচে ব্রাজিলের একচেটিয়া জয়ের পর আর্জেন্টাইন সমর্থকরাও উপভোগ করতে চাচ্ছিলেন প্রিয় দলের জয়। সকল ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা জিতলো ঠিকই তবে এদিন দলের সঙ্গে থেকেও ছিলেন না দলের ক্ষুদে জাদুকর। খেলা শুরুর আগে উরুতে ব্যথা অনুভব করলে তাকে ছাড়াই মাঠে নামে সাম্পাওলির শিষ্যরা।


মেসি ছেলেখেলা খেলবেন ইতালির রক্ষণ নিয়ে। গোল-বন্যায় ভাসবে ম্যানচেস্টার স্টেডিয়াম। হয়তো এমন স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিল আর্জেন্টিনা মেসি ভক্তরা। তাদের স্বপ্নে খানিকটা ব্যাঘাত ঘটেছে বৈকি। চোটের কারণে মেসি খেলেননি। বিশ্বকাপের আগে তাকে নিয়ে কেনো ঝুঁকি নেবে আর্জেন্টিনা!


চোখে জল নিয়ে গত নভেম্বরে ফুটবলকে বিদায় বলেছিলেন বুফন। ইতালির সর্বকালের সেরা এ ফুটবলার দলকে বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু চার মাসের ব্যবধানে অবসর ভেঙে ফিরেন তিনি।


১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে খেলা হবে না ইতালির। দলটার সামগ্রিক অবস্থা তলানিতে। পিছিয়ে থাকা ইতালিকে টেনে তুলতে তাই আরও কিছুদিন খেলতে চান বুফন। এজন্য অবসর ভাঙলেন। ফিরলেন মাঠে। কিন্তু ভাগ্য পাল্টাল না ইতালির।


শুক্রবার রাতে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ইংল্যান্ডের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার কাছে হারল ২-০ ব্যবধানে। লিওনেল মেসি, সার্জিও অ্যাগুয়েরোদের ছাড়াই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি জয় দিয়ে শুরু করল আর্জেন্টিনা।


প্রথমার্ধে সামান্য হলেও মেসির অভাব বোধ করেছে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা। সেজন্যই বল দখলের লড়াইয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থেকেও গোল ছাড়াই মাঠ ছাড়তে হয় মারিয়া-হিগুয়েনদের। সেটা অবশ্য ওই বুফনের কারণে। ইতালির ৪০ বছর বয়সী গোলরক্ষক ছিলেন অসাধারণ, অনন্য। অন্যভাবে বললে বুফনই রুখে দাঁড়ান আর্জেন্টিনার সামনে।


ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের নবম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় ইতালি। লরেন্সো ইনসিনিয়ের দারুণ ক্রসে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মর্কো পারোলো। প্রথমার্ধে আর কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি লুইজি ডি বিয়াজিওর শিষ্যরা।


এরপর ম্যাচের ১৭ মিনিট থেকে শুরু। রক্ষণভাগ থেকে উঠে আসা ওটামেন্ডির হেড রুখে দেন বুফন। এর এক মিনিট পরই বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রিকিক পেয়ে বসে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ডি মারিয়ার দুর্বল শটে এবার রক্ষা পায় ইতালি। এরপর ২৩ মিনিটে ইতালির ডি বক্সে ভয় ধরিয়ে দেয় ডি মারিয়া। কিন্তু শেষতক আর গোল পাননি।


ম্যাচের ২৪ মিনিটে আবারও ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। আরেকবার আটকে দেন বুফন। একের পর এক আক্রমণে চাপে পড়ে যায় ইতালি। একাই দেয়াল হয়ে দাঁড়ান বুফন। ৪০তম মিনিটে দূরপাল্লার শটে ভাগ্য পরীক্ষা করেন লিয়েন্দ্রো পারদেস। তার বুলেট গতির শট পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়।


ম্যাচের ৪৩ মিনিটে ডি মারিয়ার পাস থেকে ওটামেন্ডির শট আটকে দেন ওই বুফনই। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ডি মারিয়ার পাস থেকে হিগুয়েনের শটও রুখে দেন তার ক্লাব সতীর্থ বুফন। আর এভাবে এক বুফনেই আটকে যায় আর্জেন্টিনার প্রথমার্ধের খেলা।


দ্বিতীয়ার্ধে খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ইতালি। ‘ডিফেন্স ইজ দ্য বেস্ট অ্যাটাক’ এই নীতি অনুসরণ করে। ৪৮ মিনিটে একটা সুযোগও পেয়ে যায় তারা। কিন্তু চাপে থাকা ইতালি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। ইতালির মাঝমাঠের সেনা লরেনজো বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন। এরপর দু-একটা ভালো আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি বুফনের ইতালি। বরং তাদের আরও চেপে ধরে আর্জেন্টিনা।


৫০ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে পাওয়া বলে মাথা ছোঁয়ান হিগুয়েন। সেটা গোল পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৫২ মিনিটে লানজিনির কাছ থেকে সুবিধাজনক জায়গায় বল পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি হিগুয়েইন। ৫৮তম মিনিটে আর্জেন্টিনার ত্রাতা কাবাইয়েরো। ইম্মোবিলের ইনসিনিয়েকে দেয়া পাস কোনোমতে হাত বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন এই গোলরক্ষক। দুই মিনিট পর মার্কো ভেরাত্তির চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন তিনি।


অনেক তো হলো। ডি মারিয়া-হিগুয়েইনরা পারছে না। ৬৪ মিনিটে কোচ সাম্পাওলি তুলে নিলেন ডি মারিয়া ও পারদেসকেই। নামালেন দিয়েগো পেরোত্তি ও বানেগাকে। দর্শকদের কপালে তখন চিন্তার ভাঁজ। ৬৮তম মিনিটে আবার দলকে হতাশ করেন ইনসিনিয়ে। ভেরাত্তির উঁচু করে বাড়ানো বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে বিপজ্জনক জায়গায় পেয়ে যান এই ফরোয়ার্ড। গোলরক্ষককে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি তিনি।


এই অর্ধের খেলার ধারার বিপরীতে ৭৬তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন এভার বানেগা। লো সেলসোর সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে জোরালো শটে বুফনকে ফাঁকি দেন তিনি। ৮৫তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লানসিনি। হিগুয়েইনের কাছ থেকে বল পেয়ে জোরালো শটে বল জালে পাঠান ওয়েস্ট হ্যামের এই ফরোয়ার্ড। দুইজন খেলোয়াড় ছিলেন তার সামনে কিন্তু কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। উঁচু শটে বল ধরার কোনো সুযোগই ছিল না বুফনের। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হলে ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মেসিবিহীন আর্জেন্টিনা।


অনেক বছর ধরেই ইতালি হারাতে পারছে না আর্জেন্টিনাকে। ৩১ বছর আগে ১৯৮৭ সালের জুনে শেষ ইতালি হারিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। এরপর অবশ্য চারটি ম্যাচ খেলেছে দুই দল। সবশেষ খেলেছিল ২০১৩ সালে। আর্জেন্টিনা জয় পেয়েছিল ২-১ ব্যবধানে। গতকাল রাতে সেই সাফল্য পাতায় যোগ হলো আরেকটি অধ্যায়।


মাঠে না নামলেও ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাদ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন লিওনেল মেসি। আগামী মঙ্গলবার স্পেনের বিপক্ষে মাঠে ফিরতে পারেন বার্সেলোনার এ ফরোয়ার্ড।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com