১০ বছরের সাধনার পর অবশেষে তা দেখল আলোর মুখ। অংশ নিলেন আন্তর্জাতিক স্কেটিং প্রতিযোগিতায়। অংশ নিয়ে একাধিক রেকর্ড গড়লেন জাহরা লারি। বিশ্বের প্রথম হিজাব পরা নারী স্কেটার হিসেবে নাম লেখালেন ইতিহাসে। পাশাপাশি নিজ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তুললেন অনন্য উচ্চতায়। তার বদৌলতে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্কেটিং ইউনিয়নে (আইএসইউ) সদস্যভুক্ত হয়েছে দেশটি।
যার হাত ধরে এল এত সাফল্য, সেই জাহরার উঠে আসার পথটা কিন্তু মোটেও মসৃণ ছিল না। তাকে উঠে আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ। পোড়াতে হয়েছে বহু কাঠখড়। যা রূপকথার গল্পকেও হার মানাবে।
১৯৯৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন জাহরা। ছিলেন মা-বাবার খুব আদুরে সন্তান। তাই যখন যা বায়না ধরতেন, সেই আবদারই পূরণ করতেন তারা। একদিন হুট করেই বরফে স্কেটিং করার বায়না ধরেন। তাও মেনে নেন বাবা। এক পর্যায়ে তা নেশায় পরিণত হয়। বয়সও বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে বিখ্যাত স্কেটার হওয়ার ভূত মাথায় চেপে বসে। এবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় রক্ষণশীল সমাজ।
কারণ, ওই সমাজব্যবস্থায় আঁটসাঁট পোশাক পরে কোনো তরুণীর কিছু করা অন্যায়। তবু দমাতে পারেনি তাকে। অদম্য ইচ্ছায় প্রতি মুহূর্তে পাড়ি দিয়েছেন বিপৎসংকুল পথ।
জাহরার উঠে আসার পথে আরো বাধা ছিল আমিরাতের ভৌগোলিক অবস্থান। যেখানে বছরের অধিকাংশ সময় প্রখর তাপমাত্রা বিরাজ করে, সেখানে স্কেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা আকাশ কুসুম কল্পনা বটে। সঙ্গত কারণে দেশটিতে বরফাঞ্চল খুঁজে পাওয়ায় দুষ্কর। তবে কোনো কিছুই তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণ নিতে গেছেন দূর-দূরান্তে।
মাত্র ১২ বছর বয়সে স্কেটিং করা শুরু করেন জাহরা। তার স্কেটিংয়ে আসার গল্পটিও চোখধাঁধানো। ডিজনি মুভি ‘আইস প্রিন্সেস’ দেখে এই খেলার প্রতি মনোযোগী হন তিনি।
২২ বছরের এই স্কেটার বলেন, ‘সেই সিনেমা দেখে স্কেটার হওয়ার সাধ জাগে আমার। আমাকে এগিয়ে যেতে রোবটের মতো সহায়তা করেছেন আমার বাবা। সমাজ-ঐতিহ্যের কথা ভেবে মাঝে মধ্যেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবে কখনো জোর করেননি। এখন বাবাই আমার সবচেয়ে বড় ভক্ত-সমর্থক।’
বিবার্তা/শারমিন