
কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার সামনে পাত্তাই পেলো না ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি। দুই মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে ৩-০ গোলের সহজ জয় পেলো আর্জেন্টিনা। লাউতারো মার্টিনেজ, অ্যাঞ্জেলো ডি মারিয়া ও পাওলো দিবালার গোলে ফাইনালিসিমা জিতে নিলো আলবিসেলেস্তেরা।
ফিনালিসিমার শুরু থেকেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের আশপাশ চলে গিয়েছিলো আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দখলে। ৯০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামের একটা আসনও ফাঁকা যায়নি। শুরু থেকেই উত্তাপটা টের পাওয়া যাচ্ছিলো বৈকি।
ম্যাচেও এর ঝাঁজটা ছিলো বেশ। শুরুটা আর্জেন্টিনা করেছিলো দুর্দান্ত। বলের দখল নিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণে আক্রমণের পসরাই সাজিয়ে বসেছিলো। তবে ইতালিও শুরুর নড়বড়ে ভাবটা কাটিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় শুরুর দশ মিনিট পেরোতে। প্রথম শট অন টার্গেট, প্রথম বড় সুযোগটাও তৈরি করেছিলো দলটিই।
লিওনেল স্ক্যালোনির অধীনে আর্জেন্টিনা আর যাই হোক, রক্ষণে যে বেশ শক্তপোক্ত, তার প্রমাণ মিলেছে গেলো কোপা আমেরিকাতেই। তার প্রমাণ ওয়েম্বলিতেও দিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ আর ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোরা। এমি মার্টিনেজ একটা দারুণ শট ঠেকালেন শুরুতে, ম্যাচের ২০তম মিনিটে আর্জেন্টিনা রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে তৈরি করা বড় সুযোগটাও শেষ মুহূর্তের ট্যাকলে ঠেকিয়ে দিয়েছেন রোমেরো। দিনদুয়েক আগে টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেয়া সেই সাক্ষাৎকারে মেসিও তারিফ করেছিলেন বেশ। গোল হজম না করলেই যে জেতার সুযোগ তৈরি হয়ে যায় বেশ!
মেসি সেই সুযোগটাই নিলেন মিনিট কয়েক পর। ২৮ মিনিটে জিওভানি ডি লরেঞ্জোর কড়া পাহারা এড়িয়ে বাম পাশ থেকে আক্রমণে উঠে বল বাড়ান মাঝে থাকা লাওতারো মার্টিনেজের উদ্দেশ্যে। সহজ ট্যাপ ইনে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন লাওতারো। তাতেই ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচের চিত্রটাই বদলে দেয় আর্জেন্টিনা। এর আগের ১০-১৫ মিনিটে যে পরিস্থিতিটা একটু বিরূপই হয়ে গিয়েছিলো আলবিসেলেস্তেদের জন্য!
এই এক গোলের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি লিওনেল মেসিদের। ইতালি এরপর মরিয়া হয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নরা গোল শোধের চেষ্টা করেছে। আর আর্জেন্টিনা সেসব সামলে প্রতি আক্রমণে উঠে এসেছে। বিরতির ঠিক আগে তেমনই এক প্রতি আক্রমণে দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। গোলরক্ষক এমিলিয়ানোর বাড়ানো বল প্রতিপক্ষ অর্ধে লাওতারোকে পেয়ে যায়, সঙ্গে ছিলেন কোপা জয়ের নায়ক আনহেল ডি মারিয়া। ২ বনাম ৩ মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছিলো একটা। শেষ মুহূর্তে লাওতারোর বাড়ানো বলে আলতো চিপে বলটা ইতালির জালে জড়ান ডি মারিয়া। তাতেই ২-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতির আগে তাও বারদুয়েক আর্জেন্টিনা রক্ষণকে একটু দুশ্চিন্তা উপহার দিতে পেরেছিলো ইতালি। দুই গোল খেয়ে বিরতি থেকে ফিরে সেটাও ডুবে গেলো যেন। তাতে খেলাটা হয়ে পড়লো আর্জেন্টিনা আক্রমণ আর ইতালি রক্ষণের। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে মেসি-মার্টিনেজ-ডি মারিয়াদের আক্রমণ আর ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুমার। বিরতির পর কম করে হলেও চারটা নিশ্চিত গোলের সুযোগ ঠেকিয়ে দিয়েছেন।
যার মধ্যে দুটো ছিলো মেসির। প্রথম গোলের যোগান দিলেও শুরুর ৪৫ মিনিটে মেসি খানিকটা নিশ্চুপই ছিলেন যেন। তবে স্বরূপে ফিরেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ বক্সে গিয়ে শট করেছিলেন তিনি, সেটা ঠেকিয়ে দেন ডনারুমা। মিনিট কয়েক পর আবারও তার শট একই পরিণতি পায়। শেষ মুহূর্তে আর্জেন্টিনার জয় যখন মুহূর্তের দূরত্বে, তখন তার সলো রান আটকে দেয় ইতালি রক্ষণ। তখনই মেসি বলটা বাড়ান মিনিট দুয়েক আগে মাঠে আসা পাওলো দিবালাকে। বক্সের সামনে থেকে দারুণ এক ফিনিশে ব্যবধানটা আরো বাড়ান তিনি। তাতে একপেশে ফাইনালটা আরো একপেশে করে আর্জেন্টিনা ৩-০ ব্যবধানে হারায় ইতালিকে। ১৯৯৩ সালের পর আবারও ফিনালিসিমার আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি ট্রফি জয়ের আনন্দে ভাসে আলবিসেলেস্তেরা।
বিবার্তা/বিএম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]