বৃষ্টি আর ক্রিকেট হয়তো একে অপরের চিরশত্রু। এদিক থেকে বলা যায়, আজ বুধবার চট্টগ্রামের ‘লাকি’ ভেনুতে এই দুই চিরশত্রুও লড়াই। অথচ আজ একটি ইতিহাস রচনা করতেও পারে বাংলাদেশ। আজ জিততে পারে আরো একটি সিরিজ। আর সে ইতিহাস গড়ার আর সিরিজ জেতার আনন্দে জল ঢেলে দিতে শুরু করেছে বেরসিক বৃষ্টি। মঙ্গলবার থেকে বন্দর নগরীতে বৃষ্টি হচ্ছে। আজও যদি বৃষ্টির সে পথ চলা অব্যাহত থাকে তাহলে আরো একটি উৎসব থেকে বঞ্চিত হতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে বৃষ্টির শঙ্কাতেও সিরিজ জেতার প্রত্যয় রয়েছে মাশরাফিদের।
হার দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে বীরের বেশে প্রত্যাবর্তন। তাইতো তৃতীয় ম্যাচটি এখন ফাইনাল। আর সে ফাইনালে জিতে আরো একবার সিরিজ জয়ের উৎসবে মাততে চায় টাইগাররা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামের এই ম্যাচটিতে টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিতে চাইবে উভয় দল। বাংলাদেশ টস জিতলে এই সুবিধাটা নিতে পারবে। যদিও প্রথম দুই ম্যাচে টস হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
এমনিতেই চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ক্রিকেটের লাকি গ্রাউন্ড। এক বছরেরও বেশি সময় আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছিল টাইগাররা। ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে সিরিজে সমতা নিয়ে এসেছিল চট্টগ্রামে। এরপর ইতিহাস রচিত হলো চট্টগ্রামে। শেষ ম্যাচটি জিতে প্রথমবারের মত প্রোটিয়াসদের হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। আজও একই চিত্র নাট্য। তবে কুশিলব বদল হয়েছে। আজ প্রোটিয়াসদের জায়গায় ইংলিশরা। আর আজ জেতা মানে ইংলিশদের প্রথম বারের মত সিরিজ হারের স্বাদ দেয়া।
প্রথম ম্যাচে তিনশর বেশি রান টপকে জয়ের প্রায় কিনারায় চলে গিয়েছিল মাশরাফির দল। কিন্তু শেষ চুমুটা দেওয়া হলো না জয়ের পেয়ালায়। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ২৩৭ রান করেও সেটাকে দুরূহ করে তুলল ইংলিশদের জন্য। আর সে জয়ের দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি। ঠিক যেন বিচক্ষণ সেনাপতি।
আজ আরো একবার গর্জে উঠার পালা। আর আবার নিজেদের হুংকারে ইংলিশদের তাড়ানোর পালা। ভারতীয় লগন সিনেমার ক্রিকেট ম্যাচের মত আজ ব্রিটিশদের পরাজিত করার পালা। সে সাথে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংলিশদের সিরিজ না হারার অহংকার গুড়িয়ে দেওয়ার পালা।
এমনিতেই ইংলিশদের উপর একটা ক্ষোভ রয়েছে এদেশের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেটপ্রেমী সবার। কারণ নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সফরে আসতে চায়নি ইংলিশরা। আসেনি দলের অধিনায়কসহ দুই সিনিয়র ক্রিকেটার। সে অবজ্ঞা আর অহমিকার জবাবটা দিতে হবে আজ। আর সে জবাব একটাই। তা হলো ম্যাচটি জেতা। সে সাথে সিরিজও জেতা।
‘পরাজয়ে ডরে না বীর’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মাশরাফিরা ফিরেছে দ্বিতীয় ম্যাচে। এবার বীরত্বের চূড়ান্ত রূপটা দেখানো বাকি। একটি জয় কিংবা একটি পরাজয় এখন আর টাইগারদের উজ্জীবিত কিংবা হতাশাগ্রস্থ করেনা। কারণ ম্যাচ জেতা কিংবা সিরিজ জেতা এখন টাইগারদের জন্যও নিয়মিত ঘটনা। এখন আর বাংলাদেশ জায়ান্ট কিলার নয়। নিজেরাই জায়ান্ট। তার প্রমাণ গত দেড় দুই বছরে একাধিকবার রেখেছে জায়ান্টদের হারিয়ে সিরিজ জেতার মধ্য দিয়ে। আজ সে রকম আরেকটি দিনের অপেক্ষায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
জয়ী দলের শরীরী ভাষা আর পরাজিত দলের শরীরী ভাষার মধ্যে বেশ ভালই তফাৎ চোখে পড়ে। যেমনটি পড়ছে এখন মাশরাফি-তামিম-সাকিবদের মধ্যে। মঙ্গলবার হোটেল র্যাডিসন থেকে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা থেকে সবকিছুতে একেবারেই নির্লিপ্ত টাইগাররা। সবার মধ্যে একটাই প্রত্যয় জিততে হবে ম্যাচটি। ইংলিশ বধের এইতো সেরা সময়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে আজই। বৃষ্টির শঙ্কাতেও দৃঢ় মনোবল আর অদম্য সাহস নিয়ে আজ আরো একবার বিপ্লব ঘটাতে প্রস্তুত টাইগাররা। আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশে একাধিক পারফরমার। তবে আসল পরীক্ষাটা যে আজ। তামিম-সাকিব-ইমরুল-রিয়াদ-মুশফিকদের হাতে যেমন ব্যাটিং এর ঝাণ্ডা তেমনি মাশরাফি-সাকিব-তাসকিন-তাইজুলদের হাতে বলের বারুদ। তরুণ তুর্কি মোসাদ্দেক যেভাবে নিজের জাত চেনাচ্ছেন আজ আরেকবার নিজেকে চেনাতে ক্ষতি কি?
অভিজ্ঞ নাসির আগের ম্যাচে প্রাপ্ত সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করতে না পারলেও আজ নায়ক হতে পারেন তিনিও। সুযোগটা আর হাতছাড়া করবেন কেন নাসির। তাইতো জ্বলে উঠতে হবে আপন শক্তিতে। নেভাতে হবে ইংলিশদের অহমিকার আগুন। মাশরাফি যেমন বললেন এখন আর অন্য কোনদিকে তাকানোর কোন সুযোগ নাই। লক্ষ্য এখন একেবারেই পরিষ্কার। আর তা হলো ম্যাচ জেতা আর সিরিজে জেতা। বৃষ্টি আর ইংলিশ বাধা উড়ে যাক টাইগারদের গর্জনে। রচিত হোক আরেকটি ইতিহাস। পয়মন্ত ভেনুতে রচিত হোক ইংলিশ বধকাব্য।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]