ছেলেবেলায় স্কিপিং বা দড়ি লাফ খেলা খেলেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই দড়ি লাফে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠালেন ঠাকুরগাঁওয়ের সন্তান রাসেল ইসলাম। মাত্র ২১ বছর বয়সেই স্কিপিং রোপে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন তিনি।
রাসেল ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের সিরজাপাড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। তিনি শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে অধ্যায়নরত।
জানা যায়, স্কুলজীবন থেকেই রাসেলের ইচ্ছা ছিলো স্কিপিং রোপে বিশ্ব রেকর্ড করার। সেই চিন্তা নিয়েই ২০১৭ সাল থেকে তিনি স্কিপিং রোপের চর্চা শুরু করেন। বাসার আশপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছেন সেখানেই প্রতিনিয়ত চর্চা করে গেছেন। অবশেষে নিজেকে এই খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন রাসেল।
স্কিপিং রোপের ওপর দুটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিরেন রাসেল। একটি ৩০ সেকেন্ডের অন্যটি এক মিনিটের। এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে ১৪৪ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও রাসেল সে রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। তিনি ৩০ সেকেন্ডে ১৪৫ বার লাফিয়েছেন। আর এক মিনিটে এক পায়ে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে রাসেল লাফিয়েছেন ২৫৮ বার।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাসেল অনলাইন থেকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সনদপত্র পান। স্থানীয়রা বলছেন, এই রাসেলের কারণে দেশবাসী আমাদের গ্রামের নাম জানতে পেরেছে। অনেকেই তার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। তার বাসার ঠিকানা জানতে চাইছে অনেকে এটা শুনতেই ভালো লাগছে। আমাদের গ্রামের সন্তান আজ আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে একটি দড়ি নিয়ে লাফাতো। তাকে বলেছিলাম এসব করে কী হবে বাবা। সে আমাকে বলতো আব্বা আমি একদিন এই খেলা দিয়েই তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করবো। আজ সত্যিই সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তিনি আরো বলেন, বাবা হয়ে আমি আমার সন্তানকে তেমন কোনো কিছু দিতে পারি নি। তবে সে আমাদের দিয়েছে। আজ সকলের মুখে আমার ছেলের নাম। আমি শুধু আমার ছেলেকে সাহস দিয়েছিলাম। এই সাহস নিয়েই এগিয়ে গেছে আমার ছেলে।
স্কিপিং রোপে বিশ্ব রেকর্ড করা রাসেল ইসলাম জানান, স্কিপিং রোপ তার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো। ইন্টারনেটে স্কিপিং রোপের ওপর ভিডিও দেখতেন তিনি। রাসেল বলেন, স্কিপিং রোপে কতবারে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে তা নজরে রাখতাম। ওই বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করার স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি প্রতিনিয়ত চর্চা করে যাই। পড়াশোনার পাশাপাশি যখন যেখানে সময় পেতাম সেখানেই চর্চা করে যেতাম।
রাসেল আরো বলেন, দীর্ঘদিন চর্চার পরে যখন দেখলাম আমি এখন সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করতে পারব তখন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে চ্যালেঞ্জিং আবেদন করি। এরপর সেখান থেকে আমাকে তিন মাস পরে কিছু গাইডলাইনসহ একটি রিপ্লাই দেয়া হয়। সেখানে তারা তাদের নিয়ম মতো কিছু ভিডিও চায় আমার কাছে। সেই সঙ্গে কীভাবে সেগুলো করতে হবে তারো বিস্তারিত দেয়া হয়। এরপর আমি কিছুদিন আরো মনোযোগ দিয়ে সেই কাজগুলো করে তাদের পঠিয়ে দেই।
রাসেল বলেন, অবশেষে আমি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে একটি নতুন রেকর্ড করেছি। যার জন্য আমাকে দুটি সনদপত্র দেয়া হয়েছে। আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। তারা আমার মেধাকে গুরুত্ব দিয়েছে।
বিবার্তা/বিধান/অনামিকা/বিআর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]