শিরোনাম
শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বজনদের নির্ঘুম রাত
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৯, ১১:৩০
শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বজনদের নির্ঘুম রাত
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

কেউ বসে আছেন, কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ খোলা আকশের নিচে শুয়ে আছেন। কারো মুখে হাসি, আবার কারো চোখে জল। কেউ জানাচ্ছেন বিদায়, আবার কেউ জানাচ্ছেন স্বাগত। বুধবার ভোররাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।


সরেজমিন বিমানবন্দর ঘুরে দেখা যায়, প্রায় কয়েকশত লোক বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বজনদের বিদায় জানাতে আসছেন। আবার কারো কারো স্বজন বা আপনজন বিদেশ থেকে দেশে আসছেন। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন।


বিমানবন্দরের এক নম্বর ও দুই নম্বর টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত লোক টার্মিনালের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আর টার্মিনালের ভেতরে কেউ কেউ ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে বের হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ লাগেজের অপেক্ষায় রয়েছেন কেউ কেউ। তবে তাদের দেখলেই টার্মিনালের বাহিরে রেলিংয়ের পাশে অপেক্ষমান স্বজনরা প্রিয়জনদের নাম কিংবা সম্বোধন করে চিৎকার করতেও দেখা গেছে।



অপেক্ষমান স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন পর বিদেশ থেকে তাদের স্বজনরা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বজনদের রিসিভ করতে বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন তারা। তাই রাতভর জেগে হেঁটে-বসেই বিমানবন্দরের বাইরে কাটিয়ে দিচ্ছেন স্বজনরা। আপনজনের সঙ্গে দেখা হলেই চলে যাবে নির্ঘুম রাতের কষ্ট।


কথা হয় রফিকুল ইসলাম কামাল নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বিবার্তাকে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে তার ছোট ভাই দুবাইতে ভিজিট ভিসায় গিয়েছিলেন। তবে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি দেশে ফিরেছেন। তাই ছোট ভাই জামালকে রিসিভ করতে তিনি বিমানবন্দর এলাকায় এসেছেন।


তবে নির্ধারিত সময়ে বিমান টার্মিনালে অবতরণ করলেও তার ভাই ইমিগ্রেশন শেষ করে বাইরে বের হতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। তাই একটু ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাইরে অপেক্ষমান কামাল।



ছোট ভাই জামালের বরাত দিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা কামাল বলেন, দুবাই থেকে নিয়ে আসা ব্যাগ ও লাগেজ বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় নাই। তাই ইমিগ্রেশন শেষ করে বাইরে বের হতে দেরি হয়েছে। তবে দুই একদিনের মধ্যে তাদের ব্যাগ বাড়ি পৌঁছে দেয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই আশ্বাসেই শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তারা দুই ভাই।


এক পর্যায়ে কথা হয় রহিমা বেগম নামের মধ্যবয়সী এক নারীর সাথে। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘ দিন থেকে সৌদি আরবে থাকেন। তিন বছর পর দেশে ফিরছেন। তাই তাকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে এসেছি।


এ সময় তার সাথে আরো তিনজন লোক দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একজন তার সন্তান, অপর দুইজন তার নিকট আত্মীয়।



তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল বিভাগে জানিয়ে রহিমা বেগম বলেন, স্বামীকে স্বাগত জানাতে রাত ২টা থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন। সারারাত বিমানবন্দরেই কাটিয়েছেন। তবে স্বামীর দেখা পেলেই নির্ঘুম রাতের কষ্ট দূর হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।


দুই নম্বর টার্মিনালের বাইরে ব্যাগের উপর মাথা দিয়ে এক যুবক শুয়ে আসছেন; এমন দৃশ্য দেখে সেখানে যান এই প্রতিবেদক।


তবে তার সাথে থাকা স্বজনরা বিবার্তাকে বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। কিন্তু মধ্যরাতে একটি ফ্লাইটে দুবাই থেকে এসে তাদের ভাই (ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তি) শাহজালাল বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন। পরে ইমিগ্রেশন শেষ করে টার্মিনালের বাইরেই স্বজনের সাথে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। গভীর রাতে বাস টার্মিনালে যাওয়া নিরাপদ নয়; এমনটা জেনে বিমানবন্দরের বাইরেই একটি রাস্তায় শুয়ে বিশ্রাম করছেন তিনি। সকালে বাড়িতে চলে যাবেন।



শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী মখলিছুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ বিমানবন্দরে আসেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বজনদের স্বাগত জানাতে, আবার কেউ কেউ স্বজনদের বিদায় জানাতে আসেন। তাই দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই টার্মিনালের বাইরে মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে তাদের নিরপাত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।


বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com