শিরোনাম
গৌরব ও ঐতিহ্যে ৯৯ বছরে ঢাবি
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০১৯, ১০:৫৯
গৌরব ও ঐতিহ্যে ৯৯ বছরে ঢাবি
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালি জাতির জাগরণ ও প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) আজ ১ জুলাই ৯৯ বছরে পা দিয়েছে।


‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এদিন ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে দেশের গৌরব ও ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠতম এই বিদ্যাপীঠটি।


দিবসটি উপলক্ষে রবিবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মননশীলতার নিরবচ্ছিন্ন চর্চায় এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনন্য। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং দেশ ও মানুষের কল্যাণে আরো বেশি করে অবদান রাখবে।


তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ নিরন্তর উন্নয়ন অভিযাত্রার সমার্থক এক নাম। বিশ্বমানের মেধা লালনের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা এই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সহযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


এবারের দিবস উদযাপনে ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে অনিবার্যভাবেই মানসম্মত হতে হয়; মানহীন শিক্ষা অজ্ঞতারই নামান্তর। শিক্ষার কাঙিক্ষত মান অর্জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা বিশেষভাবে প্রশংসার দাবিদার।



শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিনির্মাণ, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক সত্তার বিকাশ ও দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার পূরণে অব্যাহতভাবে অবদান রেখে চলেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয় ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণে কাঙিক্ষত লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলবে- এটাই প্রত্যাশিত।


বাণীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃপ্ত অগ্রযাত্রার ৯৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং দিবসের সকল আয়োজনের সাফল্য কামনা করেন।


দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণের জন্য সাবেক শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানান।


বিশ্ববিদ্যালয় দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য বিবার্তাকে বলেন, এ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ‘মুজিববর্ষ ২০২০’ এবং ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উৎসব ২০২১’ এর আগমনী বার্তা। এ দু’টি বেঞ্চমার্ককে সামনে রেখে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নেয়া হবে। শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে একজন এমিরিটাস অধ্যাপকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।



বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সুসংহত করতে এই কমিটি ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের সমর্থন ও সহযোগিতা দরকার বলে তিনি মনে করেন।


এদিকে দিবসটি পালনের জন্য ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আলোক সজ্জায় সাজানো হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাসহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে সুসজ্জিত তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।


পাশাপাশি দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ১০টার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জমায়েত হয়ে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর পায়রা উড়ানো, কেক কাটা, সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন এবং উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গমন করা হবে।


উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান এদিন সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মল-চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।



এছাড়া সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইংরেজি বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. এ এফ এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।


দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পাণ্ডুলিপি প্রদর্শন করা হবে। চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বেলা ৩টায় অনুষদ প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্যোগে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কার্জন হল ভবনের উত্তর-পূর্ব বারান্দায় উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) উদ্যোগে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিং পুলে সাঁতার প্রতিযোগিতা, দুপুর সাড়ে ১২টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র থেকে সাইকেল শোভাযাত্রা এবং বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও ডাকসুর মধ্যে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।


এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস সম্পর্কে আলোকপাত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করবে।



ঢাবি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস


১৯১২ সালের ৩০ জানুয়ারি পূর্ব বাংলায় উচ্চশিক্ষার আলো জ্বালাতে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখের নেতৃত্বাধীন একটি দল। তিনদিন পর ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন লর্ড হার্ডিঞ্জ।


একই বছরের মে মাসে স্যার রবার্ট নাথানিয়েলের নেতৃত্বে গঠিত ১৩ সদস্যের নাথান কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলে ডিসেম্বর মাসে তা অনুমোদন পায়। পরে ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও এ ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেয়। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভা `ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন (অ্যাক্ট নং ১৩) ১৯২০` পাস করে।


১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, তিনটি আবাসিক হল, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ শিক্ষার্থীকে নিয়ে।



বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ৮৪টি বিভাগ, ১২টি ইনস্টিটিউট, ৫৪টি গবেষণা কেন্দ্র ও ব্যুরো, ২০টি আবাসিক হল ও তিনটি হোস্টেল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪৯৬ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা এক হাজার ৯৯৯ জন।


৬০০ একর জমি নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বর্তমানে এর জমির পরিমাণ ২৭৫.০৮৩ একর।


বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com