শিরোনাম
দুর্নীতির ‘স্বর্গরাজ্যে’ প্রফেসর মশিউজ্জামান!
এনসিটিবিতে তৎপর বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট
প্রকাশ : ০২ মে ২০১৯, ১০:০৯
এনসিটিবিতে তৎপর বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট
এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মোহাম্মদ মশিউজ্জামান
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে তৎপর রয়েছে বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট। আর ওই সিন্ডিকেটকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মোহাম্মদ মশিউজ্জামান।


শুধু তা-ই নয়, ওই সিন্ডিকেটে ইতোমধ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং পাঠ্যপুস্তক উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত বিভিন্ন কার্য্ক্রমে নানা ধরনের অনিয়ম করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলেছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।


দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪.নেটের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।


জানা গেছে, পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক উসকানি, নারী সমাজের প্রতি অবজ্ঞা, ঘনঘন সিলেবাস পরিবর্তন এবং ভুলেভরা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলেছিলেন এনসিটিবির কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রফেসর মশিউজ্জামান।


বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত ওই কর্মকর্তা এনসিটিবির শিক্ষাক্রম (সদস্য) পদে তিনবছরের অধিক সময় ধরেই কর্মরত রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে তার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেটের সদস্যরা আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী বিভিন্ন অপপ্রচারেও লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে নির্বাচনের পরপরই খোলস পরিবর্তন করে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বড় আওয়ামী লীগার বনে যান।


এদিকে, বিগত দিনে এনসিটিবি থেকে কয়েকজন কর্মকর্তাকে (প্রফেসর মশিউজ্জামান অনুসারী) বিভিন্ন অভিযোগে বদলি করা হয়। তবে সম্প্রতি ওইসব অনুসারীদেরকে ফের এনসিটিবিতে ফিরিয়ে আনার জন্য তদবির করে বেড়াচ্ছেন মশিউজ্জামান।


তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা প্রফেসর হাবিবুল্লাহ, জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা ফাতেমা নাসিমা আখতার এবং বিএনপির ড্যাব নেতা এ জেড জাহিদের শালিকা মনিরা বেগম ও শাহীন আরা বেগমকে পুনরায় এনসিটিবিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।



এছাড়াও প্রফেসর মশিউজ্জামান বাংলার প্রফেসর হয়েও নিউক্লীয় শক্তির উপর গ্রহণ করেছেন বৈদেশিক প্রশিক্ষণ! এমন ঘনঘন বৈদেশিক ভ্রমণ নিয়ে এনসিটিবিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে গুঞ্জন।


জানা গেছে, বিভিন্ন ওয়ার্কশপে শিক্ষাক্রম নিয়ে যারা কাজ করেন; তাদের বিদেশে পাঠানোর কথা থাকলেও কাউকে না পাঠিয়ে মশিউজ্জামান নিজেই চলে যান। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে তিনি জাপান, থাইল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফিলিপাইন, সুইডেন, নরওয়ে সফর করেছেন। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।


এছাড়াও বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মণি দায়িত্ব গ্রহণের পর যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার তাগিদ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় এনসিটিবি ও সেসিপ প্রকল্পের সমন্বয়ে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের জন্য টুলস তৈরি করা হয়। আর এ প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর মশিউজ্জামান।


কিন্তু টুলসগুলো ভুলেভরা এবং দূর্বোধ্য ও নিম্নমানের হওয়ায় মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তারা বিব্রত হচ্ছেন। নাম প্রকাশে না করার শর্তে এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তা বিবার্তাকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


এছাড়াও প্রফেসর মশিউজ্জামানের অদক্ষতার কারণে শিক্ষাক্রম উইং এখন ড্যাম্পিং স্টেশন। এনসিটিবির নিজস্ব কোনো কাজ নেই। শিক্ষাক্রম উইং বিভিন্ন এনজিও সাথে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এসব কাজে মশিউজ্জামানের সিন্ডিকেটের বাইরের কোনো সদস্য অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। ওইসব প্রতিষ্ঠান ও এনজিওতে নামে মাত্র ওয়ার্কশপ করে টাকার বিনিময়ে কাজের বৈধতা দিতে ব্যস্ত রয়েছেন প্রফেসর মশিউজ্জামান। বোর্ডের অর্গানোগ্রামে শিক্ষাক্রম উইং এ- পাঁচটি শাখা ইউনিট থাকলেও ক্ষমতা কুক্ষিগত ও সদস্য (শিক্ষাক্রমের) অদক্ষতার কারণে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে কোনো কর্মকর্তাই জানেন না তিনি কোনো শাখার কর্মকর্তা!


শুধু তাই নয়, সম্প্রতি প্রফেসর মশিউজ্জামান একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করেন। এতে অতিথি করা হয় শিক্ষা উপমন্ত্রীকে। কিন্তু ওই ওয়ার্ক্শপের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল মোমিন মোছাব্বির। এ নিয়ে সরকার দলীয় কর্মকর্তারা প্রফেসর মশিউজ্জামানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।


জানা গেছে, মোছাব্বির বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় মাউশির প্রভাবশালী সহকারি পরিচালক ছিলেন। তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এপিএসের সঙ্গে একই কক্ষে বসতেন তিনি। কিন্তু ২০১৩ সালে এনসিটিবিতে এসে বনে যান বড় আওয়ামী লীগার। এরপর মশিউজ্জামানের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন। এ কারণে বৈদেশিক ভ্রমণ তারও নৈমিত্তিক ব্যাপার। এছাড়াও মোছাব্বির সরকার দলীয় কর্মকর্তাদের বদলি করানোর জন্য প্রফেসর মশিউজ্জামানের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মশিউজ্জামান।


বিবার্তার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের বদলির তদবির করা প্রশ্নই উঠে না। কারণ আমি আমার স্ত্রীকেও বদলি করে আনতে পারছি না।


যদিও তার স্ত্রী চট্রগ্রামের বড় একটি কলেজের উপাধ্যক্ষ বলে জানা গেছে।


একাধিকবার বিদেশ সফরের ব্যাপারে তিনি বলেন, কত বিদেশ গেছি সব রেকর্ড মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া কখনো আমি বিদেশ যাই নাই।


এনসিটিবির অন্য কর্মকর্তাদের প্রতি উল্টো অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বরং অন্য কর্মকর্তারা আমাকে রেখে অনেকবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন।


বাংলার প্রফেসর হয়ে নিউক্লীয় শক্তির উপর প্রশিক্ষণ কেন গ্রহণ করলেন? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি প্রফেসর মশিউজ্জামান।


এনসিটিবি ও সেসিপ প্রকল্পের সমন্বয়ে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের জন্য টুলস তৈরি করার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা আমি তৈরি করিনি। এটা এনসিটিবি কর্মকর্তারা তৈরি করেছেন।


এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নায়ারণ চন্দ্র সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি এসব জানি না কিংবা এসব বিষয়ে আমার নিকট কেউ অভিযোগ করেনি।


তাছাড়া এনসিটিবি ও সেসিপ প্রকল্পের সমন্বয়ে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের জন্য টুলস তৈরি করার ব্যাপারে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কর্মকর্তারা এটা তৈরি করছেন। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা আমরা দেখব। কিন্তু এটা আপনার কাছে যাবে কেন?


বিবার্তা/খলিল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com