শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার বিরুদ্ধে সু-কৌশলে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে।
তবে এসব কাজ সে তার নিজ পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্টজন ছাড়াও কাউকে দিয়ে করান না। সব মিলিয়ে ভাই, ভাতিজা, নিজের শ্যালক, ভাইয়ের শ্যালক, আপন খালাতো ভাই এবং একাধিক বন্ধু নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সিন্ডিকেট। আর ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ না করিয়ে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ জুন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত তিনি একই পদে বহাল রয়েছেন। শুধু তাই নয়, সেখানে থেকে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটও। আর ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হানজালার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গড়ে উঠা ওই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন তার আপন ভাই দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুল হাই। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরেরর অধিকাংশ টেন্ডারই নামে-বেনামে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। তার তাকে সহযোগিতা করছেন বড় ভাই, ভাতিজা, নিজের শ্যালক, ভাইয়ের শ্যালক, আপন খালাতো ভাই এবং একাধিক বন্ধু।
এছাড়াও প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মুয়াজ্জেম হোসেন, মো. আবুল হাসেম সরদার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে। অতীতে ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে। উল্টো সিন্ডিকেটটি বেপরোয়া হয়ে উঠতে দেখা গেছে।
সিন্ডিকেটটি সরকারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামত ও সংস্কারের নামে কাজ না করেই কাজের ভুয়া অগ্রগতি দেখিয়ে বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন যেসব নির্মাণ কাজ হচ্ছে তাও অত্যন্ত নিন্মমানের। কোথাও রডের পবিবর্তে বাঁশ দিয়ে নির্মাণ কাজ করানো হচ্ছে, কোথাও আবার রড বা বাঁশ ছাড়াই শুধুমাত্র সিমেন্ট-বালি দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের যতগুলো অনিয়ম হয়েছে, সবগুলো অনিয়মের সঙ্গেই প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা সরাসরি জড়িত। প্রত্যেকটি টেন্ডারের আর্থিক অনুমোদন তার হাতেই চূড়ান্ত হয়। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে অর্থাৎ কাজের বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রধান প্রকৌশলীর নির্ধারিত সিন্ডিকেটের লোকজন রয়েছেন। তাদের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলীর সরাসরি যোগাযোগ আছে। কে কী করছে না করছে প্রধান প্রকৌশলী সবই জানেন। কাজে ফাঁকি, অনিয়ম-দূর্নীতি কোনো কিছুই তার নজরের বাইরে নয়।
হানজালা দায়িত্ব গ্রহাণের পর থেকে যেসব প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১০৯টি কাজের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। নামে-বেনামে এসব কাজ পেয়েছেন হানজালার ভাই, ভাতিজা, খালাতো ভাই, বন্ধু-বান্ধব। পরে সেই কাজগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আজ বুধবার হানজালার মোবাইলে একাধিক ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নাই। এক পর্যায়ে মোবাইলে এসএমএস করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে অভিযুক্ত হানজালা তার সিন্ডিকেটের লোকজন ও নিজ দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোন ছাড়া অন্য কারো ফোন রিসিভ করেন না বলে জানিয়েছে হানজালার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরিতে যোগদান করেন হানজালা। চাকরিতে যোগদানের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি না করলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সেজে যান। এমনকি ২০১১ সালে সুকৌশলে মুক্তিযোদ্ধার সনদও তৈরি করেন তিনি।
এরপর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন হানজালা। শুরু করেন বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতি। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে চাকরির মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করিয়ে নেন। পরবর্তীতে একই পদ্ধতিতে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।
বিবার্তা/খলিল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]