আওয়ামী লীগ সরকার টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখনো অবহেলিত। বরং কৌশলে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের আদর্শ প্রচার বা শিক্ষা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছেন মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ.কে.এম. ছায়েফ উল্যা।
জানা গেছে, ১৭৮০ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আলিয়া ধারার মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়। পর্যায়ক্রমে অবিভক্ত বাংলা, বিহার, আসাম ও ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা শিক্ষা সম্প্রসারিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী ও কর্মমুখী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড গঠিত হয় এবং ঢাকাস্থ সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি চক্র আজও স্বাধীনতাবিরোধী একটি গোষ্ঠিকে প্রতিষ্ঠিত করার পায়তারা করছে। আলিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা নামের একটি বইয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজল স্বাধীনতাবিরোধীদের পায়তারার অভিনব কিছু কৌশল ও নমুনার ব্যাখা দিয়েছেন।
বইটিতে আলিয়া মাদ্রাসার কারিকুলাম ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মাদ্রাসা বোর্ডেও প্রণীত কারিকুলামে একটি রাজনৈতিক দল এবং এর প্রতিষ্ঠাতায় ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সহনশীল হবার পরিবর্তে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উগ্রবাদী হবার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের বইগুলো সেসব প্রকাশনী প্রকাশ করে সেগুলোর স্বত্ত্বাধীকারীদের প্রায়ই জামায়াতি ঘরানার ও মওদুদি দর্শনের অনুসারি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- আল বারাকা লাইব্রেরি, ইসলামিয়া কুতুবখানা, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স, পাঞ্জেরী প্রকাশনী, কামিয়াব প্রকাশনী, আল মদীনা প্রকাশনী, মিল্লাত প্রকাশনী, ইমতেহান প্রকাশনী, মাদরাসা লাইব্রেরী ও আল আরাফা প্রকাশনী। এদের মধ্যে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ইসলামি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গড়ে উঠেছে।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সেই মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধেও আদর্শ ও চেতনা বিষয়ে গুরুত্ববহ আলোচনা থাকবে এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকে এসব বিষয় উপেক্ষিত করা হয়েছে। এমন কি আলিয়া মাদ্রাসার সরকারিভাবে প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকেও বাংলাদেশের মহান স্থপতি ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শব্দগুলো পরিহার করে শুধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যবহার করা হয়েছে। আলিম থেকে কামিল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশনার প্রায় সকল বইয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি বিষয়কে কৌশলে পরিহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সামীম মোহাম্মদ আফজল।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যদশার নৈপথ্যে রয়েছেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ.কে.এম. ছায়েফ উল্যা। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের কাছের লোক হওয়াতে তিনি দীর্ঘদিন থেকে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
শুধু তাই নয়, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ১২ মাদ্রাসার একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করেছিলেন; যা তার এখতিয়ারবহির্ভূত। পরবর্তীতে সেই বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এছাড়াও সেই সময় ছায়েফ উল্যার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে তলব করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ।
তবে সোমবার দুপুরে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ.কে.এম. ছায়েফ উল্যার সাথে একাধিকবার যোগাযোগরে চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইলে এসএমএস করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
বিবার্তা/খলিল/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]