শিরোনাম
পিরোজপুরের সোহাগদলে বঙ্গবন্ধুর ১৫ দিন
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:০৫
পিরোজপুরের সোহাগদলে বঙ্গবন্ধুর ১৫ দিন
সৈয়দ বশির আহম্মেদ, কাউখালী (পিরোজপুর)
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার নিভৃত পল্লী সোহাগদলে একটানা ১৫ দিন অবস্থান করেছিলেন। ১৯৫৬ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় একটি উপ-নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তিনি এ অঞ্চলে আসেন। সেই উপনির্বাচনে জাঁদরেল মুসলিম লীগ নেতা হাশেম আলী খানকে হারিয়ে নিজ দলের প্রার্থী জয়নুল আবেদীন মোক্তারকে বিজয়ী করেই ঘরে ফেরেন বঙ্গবন্ধু।


কালের আবর্তে ঢাকা পড়ে যাওয়া ঘটনাটি সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত সোহাগদল গ্রামের সাধারণ মানুষ। তারা এতদিন পর বঙ্গবন্ধুর অবস্থানকে নিয়ে গর্ব করছেন। জানার চেষ্টা করছেন সেই ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু যে ঘরটিতে থাকতেন সেই খালি ভিটায় নতুন করে ঘর নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


সোহাগদল গ্রামের নবতিপর প্রবীণ আবদুর রহমান, যার ভাই ওই নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন, তার স্মৃতিচারণ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, এর আগেও ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পিরোজপুরে পাঁচ বার সফর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তবে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর ১৫ দিন পিরোজপুরে অবস্থানের খবর এতদিন ছিল অজ্ঞাত।


১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সোহাগদলের আবদুর রব তালুকদারের এই ঘরটিসহ অন্য ঘরগুলো পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পরে অন্য ঘরগুলো পুনর্র্নিমাণ করা হলেও দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহাসিক এই ঘরের ভিটা শূন্য ছিল। সম্প্রতি এই অজানা তথ্য জানাজানি হলে প্রয়াত আবদুর রব তালুকদারের আমেরিকাপ্রবাসী স্ত্রী ও পুত্ররা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য এই শূন্য ভিটায় একটি দালান নির্মাণকাজ শুরু করেন।


আবদুর রহমান বলেন, ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গভর্নর হলে তার আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে উপ-নির্বাচনে পিরোজপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তার ভাই জয়নুল আবেদীন মোক্তার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন। পিরোজপুর উত্তর প্রাদেশিক পরিষদের আসনটি ছিল স্বরূপকাঠি-বানারীপাড়া-কাউখালী এই তিনটি থানা নিয়ে। এ আসনে জয়নাল আবেদীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সাবেক মন্ত্রী, মুসলিম লীগ নেতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খান। এই নির্বাচনী প্রচারণায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে একটি ছোট লঞ্চে করে স্বরূপকাঠিতে আসেন।


তিন বলেন, দুই-তিন দিন প্রচারণা চালিয়ে মওলানা ভাসানী ঢাকা ফিরে গেলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহাগদলের আবদুর রব তালুকদারের ঘরে একটানা ১৫ দিন থেকে অসংখ্য জনসভা ও কর্মিসভায় ভাষণ দেন এবং জয়নুল আবেদীনকে ভোট দেয়ার আহবান জানান। এ সময় মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহম্মেদ, বরিশালের মহিউদ্দিনসহ যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।


ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াও একদিন এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রচারণা চালান উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয়দের মধ্যে আবদুর রহমান, মোসলেম আলী হাওলাদার, জহুরুল হক লাল মিয়া, হাবিবুর রহমান তালুকদার ও হাফিজুর রহমানসহ শতাধিক স্থানীয় নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকতেন। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এবং ব্যক্তিত্বের কারণেই হাশেম আলী খানের মতো নেতাকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল।


বিবার্তা/হুমায়ুন/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com