শিরোনাম
এবার এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৭
এবার এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে এবারও শুরু হয়েছে চামড়া সংগ্রহের ব্যস্ততা। গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া মিলিয়ে এবার চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় এক কোটি ১০ লাখ পিস, যাকে ঘিরে চলবে আনুমানিক দেড় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য।


এই ঈদেই সংগ্রহ হয় মোট চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ চামড়া। তাই পাইকারি চামড়ার বৃহৎ আড়ত রাজধানীর পোস্তা, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীসহ সারাদেশের হাটগুলোতে শুরু হয়েছে চামড়া কেনার প্রস্তুতি। নেয়া হয়েছে ব্যাংকঋণ, সংরক্ষণের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে পর্যাপ্ত লবণও।


চামড়ার মূল্য নির্ধারণ


কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকার ভেতরে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। তবে ঢাকার বাইরে কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে দাম। ঢাকা ছাড়া অন্য স্থানে প্রতি বর্গফুটের দাম হবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।


এছাড়া ঢাকায় ছাগলের চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। গত কোরবানীতে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর নির্ধারণ হয় ৫০ থেকে ৫৫ এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঢাকায় ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ২২ এবং ঢাকার বাইরে দাম নির্ধারণ করা হয় ১৫ থেকে ১৭ টাকা। অর্থাৎ গেল বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।


চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক হিসেবে, এবার সংগ্রহ হতে পারে এক কোটি ১০ লাখ পিস চামড়া। যার মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ পিস গরু, ৩৫ থেকে ৪০ লাখ ছাগল, ১০ লাখ মহিষ এবং ৫ লাখ ভেড়ার চামড়া সংগ্রহ হতে পারে।


বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস, ফুটওয়ার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন জানান, কোরবানী ঈদে সব মিলিয়ে ২০ কোটি ফুট চামড়া সংগ্রহ লক্ষ্য ধরে মূল্য দাঁড়ায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা।


চামড়া পাচারের আশংকা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কোরবানী ঈদ এলেই বাড়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। তাই নজরদারি বাড়িয়েছে সরকার। সবাইকে নির্ধারিত দামে চামড়া কেনার আহবান জানিয়ে বলেন, যৌক্তিক মূল্যই পরিশোধ করবে ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে বিশৃংখলা কাম্য নয়।


ব্যস্ত পোস্তা


ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কাঁচা চামড়ার আড়ত পোস্তা। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, পোস্তার আড়াই শ আড়তে এবার সংগ্রহ হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পশুর কাঁচা চামড়া। চামড়া কেনার জন্য দরকার পর্যাপ্ত ব্যাংকঋণ, কিন্তু বকেয়া পরিশোধ না করায় সংকটে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।


পোস্তার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গেল ঈদের চামড়া বিক্রির পুরো বকেয়া পরিশোধ করেনি অনেক ট্যানারি-মালিক। তাই ঋণ পরিশোধেও সমস্যা হচ্ছে। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে বাড়তি ব্যয়ের অজুহাতে পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করছেন অনেকে।


বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, পোস্তার আড়তগুলো প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে। পুরনো চামড়া বিক্রি শেষ করে এখন নতুন চামড়া সংগ্রহের জন্য আড়ত খালি। সংগ্রহ করা হয়েছে পর্যাপ্ত লবন।


ব্যাংকঋণ


কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকও স্বল্প পরিসরে অর্থায়ন করবে। মূলত পাচার ঠেকাতে এবং আগের ঋণ পরিশোধের শর্তে অর্থায়ন করছে ব্যাংক।


কোরবানীর সময় চামড়া সংগ্রহ করে, সারা বছর কারখানা সচল রাখা হয়। তাই এই সময় দরকার হয় পর্যাপ্ত নগদ অর্থ।


প্রতিবছরই উদ্যোক্তাদের অর্থের চাহিদা পূরণ করে থাকে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। অন্যান্যবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে জনতা ব্যাংক। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, নগদ অর্থের সংকটে আছে চামড়াশিল্প। ট্যানারি পল্লীতে বরাদ্দ দেয়া প্লটের মালিকানা বুঝিয়ে না দেয়ায় ব্যাংক থেকে মিলছে না পর্যাপ্ত ঋণ। ওদিকে, চামড়াশিল্পে ঋণ দেবার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে খেলাপি গ্রাহককে ঋণ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।


চামড়াশিল্প নগরীতে দুষণ, বেহাল সড়ক


২০১৭ সালে প্রথম প্রান্তিকে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর হয় ট্যানারি শিল্প। কিন্তু বছর ঘুরলেও এখনও সক্ষম হয়নি চামড়া শিল্প নগরী। বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) প্রস্তুত না হওয়ায় কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পর ক্যামিক্যালযুক্ত দুষিত পানি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরী নদীতে। এখন হাজারীবাগের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গার মতোই মারাত্মক দুষণের কবলে ধলেশ্বরী নদী। সাভারে ১৫৫টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে চামড়া প্রক্রিয়াজাত শুরু করেছে ১১৪টি ট্যানারি। প্রতিদিন এসব ট্যানারির ক্ষতিকর রাসায়নিকমিশ্রিত ভারি বর্জ্য জমা করা হয় নদীর পাশে খোলা জায়গায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরো এলাকা কঠিন বর্জ্যে ভর্তি হয়ে গেলে, ডাম্পিং ইয়ার্ডের বাঁধ ভেঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। ভারি বর্জ্য পরিশোধনের কথা থাকলেও এখনও কাজ শুরু করেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিসিক।


ওদিকে, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। ২০০ একর আয়তনের শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার। ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই সেখানকার সড়কগুলো সংস্কারের নজর দেয়া হয় না। তবে, গত মে মাস থেকে নগরীর রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করেছে বিসিক। এ পর্যন্ত মাত্র ৩০০ মিটার সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হতে আরও তিন মাস লাগবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে রাস্তা ঢালাইর কারণে সড়কে ভারি যানবাহন চলতে পারবে না। এক্ষেত্রে চামড়াবোঝাই ট্রাক ট্যানারিতে আনার ক্ষেত্রে জটীলতা তৈরি হবে।


রফতানিবাণিজ্যে চ্যালেঞ্জ


রফতানি বাণিজ্যে সম্ভাবনাময় খাত হওয়া সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত বাজার তৈরী করতে পারেনি চামড়াখাত। নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় এখন থমকে গেছে এ খাতের প্রসার। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয় ১০৮ কোটি ডলার। এর আগের বছরের তুলনায় যা ১৫ কোটি ডলার কম।


বাংলাদেশি চামড়ার প্রধান গন্তব্য চীন। ওই বাজারেই যায়, মোট রফতানির ৬০ ভাগ চামড়া। কিন্তু রফতানি বাণিজ্যে এখন বড় চিন্তার কারণ 'চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ'। মার্কিন সরকার চীনের আমদানি ঠেকাতে উচ্চ ট্যারিফ নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছে চীন। ফলে এই মুহূর্তে নতুন বাজার না থাকায় সংকটে চামড়া রফতানি।


বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ জানান, প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম কমিয়ে বলা হচ্ছে ২০-২৫ সেন্ট। প্রক্রিয়াকরণসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় মিটিয়ে এতো কম দামে চামড়া রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com