শিরোনাম
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক বাঁচাতে ২৭ সুপারিশ
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০১৮, ১৮:৩১
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক বাঁচাতে ২৭ সুপারিশ
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে চায় সরকার। কোন কৌশলে সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব তা খতিয়ে দেখছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এরই মধ্যে ২৭ সুপারিশের আলোকে শুরু হয়েছে কাজ, যেখানে ঋণখেলাপী ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।


গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা : চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় উঠে আসা সুপারিশগুলো থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে মোট ২৭টি সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে আর্থিক বিভাগ।


গেল বছরে জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। তবে প্রকাশিত খেলাপীর তালিকায় দু’জন ব্যক্তি এবং বাকি সব প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল। জনগণ যাদের শীর্ষ ঋণখেলাপী হিসেবে জানে, তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও নাম এ তালিকায় ছিল না।


নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণ এবং লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে পাহাড়সমান খেলাপী ঋণে বিপর্যস্ত রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক। সংকট উত্তরণে ধোপে টিকছে না কোনো কৌশলই। ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে ২৭টি সুপারিশ পর্যালোচনা করছে অর্থবিভাগ।


সুপারিশে বলা হয়, ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি খেলাপী ঋণ কেসগুলো তদারকির জন্য প্রতিটি ব্যাংকে একটি করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি তদারকি সেল গঠন করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের চাকরিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সূচকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রতি তিন মাস পর পর সেই সূচকগুলো বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সফলতা-ব্যর্থতার বিষয়টি তাদের এসিআর-এ প্রতিফলনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।


একই সঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি ও সিইওদের বিভিন্ন সূচকে লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে তা মূল্যায়ন এবং সে মোতাবেক বোনাস, ইনসেন্টিভ দেয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তন করার সুপারিশ করা হয়। খেলাপী ঋণ আদায়ে প্রণোদনা এবং ব্যর্থতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রণয়ন/সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য সুপারিশ উঠে আসে।


উচ্চ আদালতে ব্যাংকের ঋণসংশ্লিষ্ট রীট মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন করার কথা বলা হয়। ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচ্য প্রার্থীদের শিক্ষা ও পেশাগত যোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয়ে ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট করার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।


ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের আলোকে একটি গাইডলাইন প্রণয়নের তাগিদ দেয়া হয়। বেসরকারি খাতে শেয়ার ছেড়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার বিষয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেশ করার সুপারিশ করা হয়।


ঋণপ্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদনে বিদ্যমান পদ্ধতি রিভিউ করে পুনরায় জারি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন ধাপে ঋণপ্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।


জমি বা ভূ-সম্পত্তিকে জামানত হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য জালিয়াতি প্রতিরোধে জামানত গ্রহণের বিষয়ে নীতিমালাসহ একটি কেন্দ্রীয় তথ্যকোষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।


এলটিআর (Loan Again Trust Receipt) বা বিল পারচেজ ধরনের নন-ফান্ডেড ঋণসুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনাসহ এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা জারি করতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।


সুপারিশে বলা হয়, ঋণপ্রস্তাব মূল্যায়নের সময়ই পর্যাপ্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন বিবেচনায় এ সংক্রান্ত্ বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। ঋণগ্রহীতাদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় কেওয়াইসি (Know Your Customer) বা ইলেকট্রনিক ব্যাংক এ/সি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে।


এতে আরো বলা হয়, জামানত হিসেবে ব্যবহার্য্য জমির মূল্যায়ন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সার্ভেয়ার/ক্রেডিট রেটিং কম্পানির যোগ্যতা নির্ধারণসহ তালিকাভুক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক অনুসরণীয় নীতিমালা প্রণয়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ঋণ শৃঙ্খলা, অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোগুলো জোরদার করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সনদধারী জনবল পদায়ন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে নীতিমালা জারি ও তা অনুসরণসহ অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সুপারিশে বলা হয়েছে।


শীর্ষ ঋণখেলাপী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একইভাবে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন তাদের তালিকাটাও প্রকাশ করলে উৎসাহ বাড়ে।' তিনি বলেন, যারা ঋণ নেয় আর পরিশোধ করে না তাদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ না হলে কোনো কিছুতেই কাজ হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অর্থঋণ মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সেদিকে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।


অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান মনে করেন, যারা অভ্যাসগত ঋণখেলাপী তাদের ক্ষেত্রে কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে ক্ষতি নেই। কারণ, অনেকেই আছেন যারা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেন না। তবে, কোনো ব্যক্তির মানহানী করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়ে ভাবতে হবে। এর ফলে কারো যেন চরিত্রহরণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com