শিরোনাম
ঈদের ছুটিতে যেমন ছিল ঢাকা
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০১৮, ২০:২৩
ঈদের ছুটিতে যেমন ছিল ঢাকা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রমজানের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকা নগরীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। এরপর ঈদকে কেন্দ্র করে রমজানের শেষের দিকে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়। একদিকে ঘরমুখী মানুষকে দেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা, অন্যদিকে ফাঁকা নগরীতে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।


কিন্তু নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা নগরীই হয়ে উঠেছিল অনিরাপদ! ঘটেছে চুরি-ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ। এমনকি ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে জার্মান এক নাগরিক কাঁদতে কাঁদতে দেশে ফিরেছেন। এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেউ কেউ পুলিশের আশ্রয় নিলেও অনেকেই ‘পুলিশি ঝামেলায়’ যেতে চাননি।


সম্প্রতি বিবার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে এমন বেশ কিছু তথ্য।


হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের কথাই ধরা যাক। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের আগে ১৪ জুন (২৭ রমজান বৃহস্পতিবার) বিকেলে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের টিকিট কাটেন। রাত সোয়া ৮টায় মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ২১১ নম্বর বাসটি যাত্রাও শুরু করে। কাউন্টারের আশপাশে এবং টার্মিনালজুড়ে নিরাপত্তাবলয়। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বও পালন করছেন। কিন্তু বাসটি কাউন্টার থেকে ছাড়ার পর হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে যাওয়ামাত্র ঘটে যায় ভয়ঙ্কর এক ছিনতাই।


আবুল হোসেন বিবার্তাকে জানান, তিনি বাসের জানালার পাশে বসেছিলেন। তার হাতে ছিল মোবাইল। মুহূর্তের মধ্যে বাসের জানালা দিয়ে মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয় এক ছিনতাইকারী। একই সময় ওই বাসের পেছনের দিক থেকে আরেক যাত্রীর মোবাইলও ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। মুহূর্তেই ম্লান হয়ে যায় ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দ। তবে পুলিশের আশ্রয় নিলে আরো বেশি ভোগান্তি হবে, এমন ধারনায় তারা থানায় যাননি।


আবুল হোসেনের মত অনেকেই হয়তো ঈদে বাড়ি ফেরা বা বাড়ি থেকে আসার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন। তারাও হয়তো নীরবে সহ্য করে গেছেন ঘটনাটি।


শুধু তাই নয়, ঈদের পর দিন রাতে (১৮ জুন) রাজধানীর মগবাজার রেলগেইট এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক উৎপল দাস। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছেন। এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘রাত সোয়া ২টার দিকে বন্ধু শাওনের বাসা থেকে খেলা দেখে ফেরার পথে মগবাজারের রেলক্রসিংয়ে ছিনতাইকারীর কবলে। মোবাইল, ওয়ালেট সব খোয়া গেল।’



এর আগে ১৪ জুন (২৭ রমজান) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন সুইন্ডে উইদারহোল্ড নামের এক জার্মান তরুণী। তিনি ধানমন্ডি থানায় একটি মামলাও করেন। এজাহারে সুইন্ডে উল্লেখ করেন, ওই দিন ভোরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে নিজের অস্থায়ী আবাসে রিকশায় করে যাওয়ার সময় একটি সাদা গাড়ি থেকে এক ব্যক্তি তার ব্যাকপ্যাকটি টান মেরে নিয়ে যায়। ওই ব্যাগে তাঁর ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ক্রেডিট কার্ড এবং দুটি হার্ডডিস্কসহ অন্যান্য জিনিস ছিল।


সব হারিয়ে শুক্রবার (১৫ জুন) ভোরে কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা ছেড়েছেন সুইন্ডে। এমনটাই গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন সুইন্ডের বন্ধু শশাঙ্ক সাহা।


তিনি জানান, গত জানুয়ারিতে ধানমন্ডির পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে ফটোগ্রাফি কোর্স করতে ঢাকায় আসেন সুইন্ডে। পরে তিনি চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা শিল্প, সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ অনেক জায়গায় প্রচুর ছবি তুলেছিলেন। সেই ছবিগুলো বিভিন্ন বন্ধুর কম্পিউটারে জমা ছিল।


বুধবার রাতে শংকর বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক বন্ধুর বাড়িতে অন্য বন্ধুসহ রাতে থেকে তিনি সব ছবি তাঁর হার্ডডিস্কে স্থানান্তর করেন। ভোরবেলা এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালের অস্থায়ী আবাসে ফিরতে তিনি একটি রিকশা ভাড়া করেন। রিকশাটি জিগাতলা পার হয়ে সীমান্ত স্কয়ারের ফটকে আসামাত্র একটি সাদা গাড়ি থেকে দুর্বৃত্তরা তাঁর ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। গাড়ির নম্বরপ্লেট বাংলায় থাকায় তিনি সেটি বুঝতে পারেননি। রিকশাচালকও সেটি খেয়াল করেননি। এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সুইন্ডে।



এদিকে, সুইন্ডের দায়ের করা মামলার পর ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।


বুধবার বিকেলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ওই মামলায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


এদিকে, ঈদের আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ‘ফাঁকা নগরীতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে’ বলে জানিয়েছিলেন। যাতে নগরবাসী নির্ভয়ে বাড়ি যেতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু ঈদ করতে নগরবাসী যখন বাড়ি গিয়েছেন, সেই সুযোগে চোরের দল তৎপর হয়ে ওঠে। নগরী বিভিন্ন বাসায় চুরি হলেও অনেকেই নীরবে তা সহ্য করে ঘরে বসে আছেন। আর যারা থানা পুলিশের আশ্রয় নিয়েছেন তারা এখনো কোনো সমাধান পাননি।


জানা গেছে, এবার ঈদে বাড়ি থাকাকালে দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি ও দৈনিক জাগরণ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এফ এম শাহিনের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ঘটনা কোন ক্লু বের করতে বা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।


মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে রাজধানীর কাঠালবাগানস্থ ২৮৭ নং বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। চোরেরা বাসার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে সাড়ে আট ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।


মামলার বাদী দৈনিক জাগরণ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এফ এম শাহিন জানান, ঈদের ছুটিতে গত ১৩ জুন বুধবার গ্রামে যান তারা। গত শুক্রবার (২২ জুন) বিকেল সাড়ে ৬টায় বাসায় ফেরেন। এ সময় বাসার তালা খুলতে না পেরে বিষয়টি ফ্ল্যাটের মালিক কাজি লুৎফুল হককে জানালে তিনি এসেও তালা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে লুৎফুল হক কারওয়ান বাজার থেকে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা ঘরের দুটি আলমারি, দুটি ওয়াড্রব ভাঙা, মালামাল তছনছ অবস্থায় এবং বাসার জানালার গ্রিল কাটা দেখতে পান। পরে কলাবাগান থানায় বিষয়টি জানানো হয়।


তিনি আরো জানান, চোরের দল বাসা থেকে ছয়টি স্বর্ণের চেইন, সাত জোড়া কানের দুল, পাঁচটি আংটিসহ মোট সাড়ে আট ভরি স্বর্ণ, একটি ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি, একটি ডেল ল্যাপটপ, একটি অ্যাপেল আইপ্যাড, ১০টি শাড়ি, ১৩ পিস হাতঘড়ি, ১২টি জামাসহ ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো মালামাল উদ্ধার কিংবা কেউ গ্রেফতার হয়নি।



এ ব্যাপারে জানতে বুধবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই সফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমরা বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখছি। মামলা দায়েরের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি।


এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না বা কোনো ক্লু উদঘাটন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কাউকে গ্রেফতার বা ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com