মন্দ ঋণ আদায় করে দেয়ার পর কমিশনের অর্থ এজেন্টকে পরিশোধ করছে না সোনালী ব্যাংক। সাত কোটি ২৫ লাখ টাকা কমিশন পরিশোধে আট বছর ধরে টালবাহানা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতের এই ব্যাংক। টাকা চেয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে নালিশ দেয় ডেট রিকভারী এজেন্ট ‘দি পিপলস ডেভলপমেন্ট সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড’ (পিডিএসসি)। সব নথি যাচাই-বাছাই করে অর্থ ফিরে পেতে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবার নির্দেশনা দিলেন অর্থমন্ত্রী।
পিডিএসসি’র পাঠানো চিঠির ওপরই নিজ হাতে তার নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্ করে অর্থমন্ত্রী লেখেন, ‘তাদের যেসব আইনী ব্যবস্থার আশ্রয় নেবার সুযোগ আছে সেসব পদক্ষেপ নেবার উপদেশ দিয়ে আবেদনের জবাব দিন।’
অর্থমন্ত্রী নির্দেশনার পর অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা একটি চিঠি ইস্যু করে নির্দেশনার কথা জানান। চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।
কু-ঋণে জর্জরিত সোনালী ব্যাংক। অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করায় বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। দীর্ঘদিন অনাদায়ী ঋণের অর্থ তুলে দিতে বেসরকারি ডেট রিকভারী এজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের এই ব্যাংক। চুক্তি মোতাবেক কাজ শুরু করে পিডিএসসি। ২০১০-১১ সালে মেসার্স মকবুলার জুট মিলস লিমিটেডের কাছে থাকা ৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঋণ সমন্বয় করে দেয় এই প্রতিষ্ঠান। এতে এজেন্ট কমিশন দাঁড়ায় ৬ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য ঋণ আদায় করে কমিশন পাওনা হয় এক কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সোনালী ব্যাংকের কাছে কমিশন বাবদ ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় সাত কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। চুক্তি মোতাবেক কমিশন চাইলে তা পরিশোধে গড়িমসি শুরু করে সোনালী ব্যাংক। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে প্রথমে ২০১৭ সালে ২৯ মে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয় পিডিএসসি। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করার পরও সুরাহা হয় না। প্রতিকার চেয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয় পিডিএসসি।
শুধু সোনালী ব্যাংকই নয়, রাষ্ট্রায়ত্বখাতের অগ্রণী ব্যাঙ্কের ঋণও আদায় করে দেয় পিডিএসসি। তবে ওই ব্যাংকের সঙ্গেও কমিশন নিয়ে সমস্যা তৈরী হয়। শেষ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের কাছে কমিশন বাবদ পাওনা ছিল এক লাখ ১৮,০০০ টাকা। ওই পাওনা টাকা অগ্রনী ব্যাংক পরিশোধে অস্বীকৃতি জানালে চুক্তি শর্ত অনুযায়ী আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেয় অর্থমন্ত্রনালয়। সে অনুযায়ী আরবিট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়। আরবিট্রেশন মামলায় পাওনা কমিশন পরিশোধের রায় হওয়া সত্ত্বেও এর বিরূদ্ধে আপিল মামলা দায়ের করে অগ্রণী ব্যাংক। তবে, সেই আপিল খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংক সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধে অসামার্থ্যর কথা বলে ৫০ শতাংশ পরিশোধ করে।
পিডিএসসির চেয়ারম্যান এম এ রহমান বলেন, কমিশনের অর্থ পেতে সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্না দিয়েও কাজ হয়নি। তিনি বলেন, অর্থ দেবার বিষয়ে সার্বিক দিক খতিয়ে দেখতে ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ব্যাপারে তার সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যাংকের জিএম অশালীন আচরণ করেন। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে প্রমাণাদি ফাইল আছে ও যা গোপন করা হয়েছে সেসব বিষয় সবাইকে অবহিত করার দাবি তোলা হয়। কিন্তু কিছুই আমলে নেয়া হয়নি, পাওনাও পরিশোধ করা হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনামতো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান এম এ রহমান।
তবে এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের এমডির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]