শিরোনাম
একযুগেও হয়নি মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০০:৩১
একযুগেও হয়নি মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন
তানভীর আঞ্জুম আরিফ
প্রিন্ট অ-অ+

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ অর্থাৎ ২০ বছর কেটে গেছে সম্মেলন বিহীন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের। এই দীর্ঘ সময়ে কেন্দ্র মনোনীতরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে পদ-পদবিপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।


শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি এই স্লোগানকে বুকে ধারন করে ১৯৪৮ইং সানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ছাত্রলীগ। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে এদেশে এসেছিল মহান ছাত্রনেতারা। ছাত্র রাজনীতির মধ্যে রেখেছে মহান ভূমিকা ।


সময়ের পরিবর্তে ইতিহাস ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলছে ছাত্রলীগ। বারে বারে ভেঙ্গে যাচ্ছে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতা কর্মীর হৃদয়।


এবারও কেন্দ্রের সিলেকশনে মনোনীত হতে পদ-পদবিপ্রত্যাশীরা ঢাকায় লবিং করছেন বলে একটি বিশ্বস্থ সূত্র নিশ্চিত করেছে।


২০ বছর ধরে সভাপতি সম্পাদক নির্বাচিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ভবিষ্যতে কি হবে সে আশায় দিন গুনছে হাজার হাজার নেতা কর্মীরা। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।


কয়েক যুগ পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পেয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কৃতি সন্তান এস এম জাকির হোসাইন। কিন্তু এমন দায়িত্ব পেয়েও নিজ জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারছেন না কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে এমন প্রশ্ন হাজার হাজার কর্মীদের মনে।


১৯ জুলাই ২০১৫ তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নাম প্রকাশ করেন।


জেলা সভাপতির দায়িত্বপান আসাদুজ্জামান রনি। সহ-সভাপতির পদে রাজন, সৈয়দা সাবরিনা। সাধারণ সম্পাদকের পদে সাইফুর রহমান রনি। সাংগঠনিক পদে সাগর, অপু।


ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রলীগের যে ভূমিকা রয়েছে তা জাতি কোনো দিন ভুলতে পারবেনা। শত বছরের সফলতার গৌরব স্বাধীনতার চেতনা বুকে লালন করে আসছে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নেতা সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের বাড়িও মৌলভীবাজার জেলায়। যার নেতৃত্বের গুণ দেখে হাজার হাজার ছাত্রজনতা এসেছিল ছাত্রলীগের পতাকাতলে যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। আজ এমন ছাত্র নেতার নেতৃত্ব পাচ্ছেনা মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ।


জেলা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে মবশ্বির আলীকে জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটিতে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম।


এরপর মো. জাকারিয়াকে সভাপতি, হোসেন ওয়াহিদ সৈকতকে সাধারণ সম্পাদক ও জুবায়ের আহমদ তপুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের একটি কমিটি অনুমোদন দেয়। তখন এই কমিটি মেনে না নিয়ে বাতিলের জন্য একটি গ্রুপ জেলা শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তিন সদস্যের কমিটি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি অনুমোদন দিলেও ছাত্রলীগের কার্যক্রম গতিশীল হয়নি।


২০১৫ সালের মাঝামাঝি চলমান কমিটির কার্যক্রম বাতিল করে সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিকসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।


জেলা আওয়ামী লীগের তিন বলয়ের সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয় করে এ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হলেও তারাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়।


একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, কিছু সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা নিজেদের বলয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ধরে রাখতে সম্মেলন না করে কেন্দ্র থেকে কমিটি অনুমোদনের জন্য লবিং/তদবির করেন। এতে পরীক্ষিত, প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃবৃন্দ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে ব্যর্থ হয়। এবারও অতীতের ধারাবাহিকতা বজায়ের আলামত চলছে বলে অনেকে জানান।


এদিকে নতুন কমিটিতে পদ পেতে জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে জেলা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রক জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার বলয়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। একই সঙ্গে তারা ঢাকার লবিংয়েও সরব রয়েছেন।


এভাবে অনেক ত্যাগী নেতারা পদপদবী না পেয়ে আজ হারিয়ে গেছে স্রোতের গহ্বরে। আশার আলো বার বার জ্বললেও অদৃশ্য শক্তির কারণে পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নিজ এলাকা মৌলভীবাজার। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলেও নিজ এলাকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে হিম শীম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।


এদিকে আগামী ৩১ শে মার্চ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন এই মৌলভীবাজার জেলার সন্তান থাকায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করার জন্য এমনটাই আশা করছেন তৃনমূলের নেতা কর্মীরা।


অনেকের ধারণা এই মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারীতে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হতে পারে। এদিকে নতুন কমিটির চেয়ে পুর্ণাঙ্গের ব্যাপারে আগ্রহী কর্মীরা। অনেক ত্যাগী কর্মীরা বলেন, র্দীঘ ১৮ বছর ধরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। দুই রনি ভাইয়ের কমিটি একটি সফল কমিটি। তাই কেন্দ্রের উচিৎ এই কমিটিকে পূর্নাঙ্গ করে ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম ছাত্রদের মধ্য চালিয়ে নিয়ে সফল কর্মী তৈরী করার ব্যবস্থা করে দেয়া।


জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মীরা হলেন- আবুল আরশাদ জসীম, আমিরুল ইসলাম চৌধুরী আমিন, আক্তার উদ্দিন, ফয়সল মনসুর, মাহের হোসেন জাকের, রেজাউল করিম রেজা ,তারেক আহমদ, অমিত রায়,তন্ময় আহমদ, মাহবুব আলম, মির্জা মোহন বেগ, মো. রাব্বি, সাইদুর রহমান উল্লেখযোগ্য।


মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান রনির সাথে কথা হলে তিনি জানান , আমরা জেলা ছাত্রলীগের অগোছালো কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ১০শে জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে অনুস্টানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।


আমি সভাপতি হিসেবে মনে করি, একটি সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলে এই সংগঠন কি করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।


কেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির ভাইয়ের নিজ জেলা মৌলভীবাজার। আমি জেলা কমিটি পূর্নাঙ্গ করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অভিলম্বে মৌলভীবাজারবাসী পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবে এমনটা আশা করছি।


রনি আরো বলেন, জেলার প্রায় সব ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্র জেলা সম্মেলনের সময়সূচি দিলে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।


সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনির সাথে কথা হলে তিনি জনান, আমরা জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারছিনা এটা দু:খ জনক। তবে আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়ে অনুমোদন নিতে পারবো। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছি উনাদের সহযোগিতা পেলে জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হবে।


আমাদের স্থানীয় অভিবাকদের কাছে আকুল আবেদন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা চাই।


ইতোমধ্যে আমরা মোট ২০টি ইউনিটের মধ্যে ১৬টি ইউনিটের কমিটি গঠন করেছি। যে ইউনিট গুলো অসম্পূর্ণ রয়েছে তা হলো (১) মৌলভীবাজার সদর উপজেলা (২) সরকারী কলেজ(৩) পৌর ও পলিটেকনিক কলেজ।


১৯৯৬ সালে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও তা ১৯৯৮ সালে থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মোট তিন কমিটি গেলেও পূর্ণাঙ্গের মুখ দেখেনি জেলা ছাত্রলীগ।


বিবার্তা/তানভীর/নুর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com