শিরোনাম
নাখালপাড়ায় নিহত আরেক জঙ্গির পরিচয় মিলেছে
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:২৭
নাখালপাড়ায় নিহত আরেক জঙ্গির পরিচয় মিলেছে
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় নিহত তিন জঙ্গির মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। বাকি দুইজনের পরিচয় পেতে র‌্যাব বৃহস্পতিবার তাদের ছবি প্রকাশ করে। তবে ছবি প্রকাশের একদিন পর শুক্রবার নিহত আরেক জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। র‌্যাব সদর দফতর থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।


র‌্যাব জানায়, শুক্রবারে পরিচয় পাওয়া জঙ্গির নাম মোঃ নাফিস উল ইসলাম (১৬)। সে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলামের ছেলে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরের কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল নাফিস। ছবি প্রকাশের পর নজরুল ইসলাম রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটি আসেন। পরে মর্গে লাশ দেখে নাসিফকে সনাক্ত করেন তিনি।


র‌্যাব আরো জানায়, নাফিস তিন মাস থেকে নিখোঁজ ছিল। সে বাড়ি ছাড়ার আগে বাসার লকার থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে আসছিল।


নাফিসের বাবা নজরুল জানিয়েছেন, নাফিস নিখোঁজের পর চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি। এরপর পুলিশের তদন্তে জানা যায়, সে জেএমবিতে যোগদান করেছে। সেখানে সে আব্দুল্লাহ বলে পরিচিত।


এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নাখালপাড়ার ‘রুবি ভিলা’ ঘেরাও করে র‍্যাব। এসময় ছয়তলা ওই ভবনের পঞ্চম তলা থেকে জঙ্গিরা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটালে র‌্যাব ও জঙ্গিদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে তিন জঙ্গি নিহত হয়। পরদিন শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকালে তাদের লাশ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়।


রবিবার (১৪ জানুয়ারি) তিন জঙ্গির একজনের পরিচয় সনাক্ত করে র‌্যাব। তারা ছবিযুক্ত দু’টি জাতীয় পরিচয়পত্র পায়, যার একটিতে নাম ছিল জাহিদ হাসান অন্যটিতে মোঃ সজিব মিয়া। এমনকি পরিচয়পত্র দুটিতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য-উপাত্ত (নাম, পিতা-মাতার নাম ও ঠিকানা) থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক পরিচয় নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।


পরে ফিংগার প্রিন্ট অনুসন্ধানে জাহিদের ফিংগার প্রিন্ট একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলে যায়। ওই পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার মূল নাম মেজবা উদ্দিন। সে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাদুয়ারা গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হকের ছেলে।


এ তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার পিতা-মাতা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় জঙ্গি মেজবা সম্পর্কে তার পরিবারের সদস্যরা বিস্তারিত জানিয়েছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব।


মেজবার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, মেজবার বাবা এনামুল হক চাঁদপুর কাদরা মাদ্রসার শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে স্থানীয় এক মসজিদের মোহাদ্দেস। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মেজবা চতুর্থ (ভাইদের মধ্যে বড়)। সে মনোহরগঞ্জের আলীনকিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে। ২০০৭ সালে সে ঢাকার সায়েদাবাদে একটি মোটর গ্যারেজে কাজ নেয়। আরো পরে সে যাত্রাবাড়ী জনপদ মোড়ে মেজবা টায়ার শপ্ নামে নিজেই একটি মোটর গ্যারেজ চালু করে।


২০১৫ সালের দিকে মেজবার মধ্যে আমূল পরিবর্তন দেখা দেয়। সে ধর্মকর্মের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত হয়ে ওঠে। সে নিজ গ্রামে গিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমামের ইমামতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং পরবর্তীতে একা একা নামাজ আদায় শুরু করে।


র‌্যাব জানায়, মেজবা ২০১৭ সালের ২৮ মে পাশের গ্রামের শারমিন আক্তার নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর সে স্ত্রীর কাছে স্বীকার করে যে সে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।


সর্বশেষ গত বছরের ২০ অক্টোবর সে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিল। এ সময় সে অপরিচিত দুই যুবককেও সঙ্গে নিয়ে যায়। মেজবার পরিবার অপরিচিত যুবকদের পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, এই যুবকরা তার মায়ের পেটের ভাইয়ের চেয়েও আপন। ২৬ অক্টোবর সে গ্রামের বাড়ি ত্যাগ করে।


গত ১০ নভেম্বরের পর হতে মেজবা তার পরিবারের সাথে সর্বপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। তবে ১৫-২০ দিন আগে হঠাৎ একদিন অজ্ঞাত স্থান থেকে স্ত্রী ও মাকে ফোন করে ক্ষমা চায় এবং ‘জান্নাতে দেখা হবে’ বলে বিদায় নেয়। এ সময়ে তার স্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা বলে জানালে সে আল্লাহর রাস্তায় চলে যাচ্ছে বলে জানায়। এ সংবাদে ভীত হয়ে মেজবার পরিবার গত ১৯ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি করে।


নিখোঁজ হওয়ার আগে মেজবার পরিবারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তার সর্বশেষ ঠিকানা ছিল দক্ষিণ সায়েদাবাদ রবিন মিয়ার মেস। ওই সূত্রে ধরে ওই মেসের ম্যানেজার রিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেজবা গত ৫ আগস্ট তার মেস ভাড়া নেয়। সে নিয়মিত নামাজ পড়ত। তার আচার-আচরণও ছিল ভাল। তবে সে মাঝে মধ্যে তাবলীগের কথা বলে নিরুদ্দেশ থাকত বা মেসে ফেরত আসত না। সে গত ৭ নভেম্বর মেজবা তাবলিগে যাচ্ছে বলে সর্বশেষ মেস ত্যাগ করে। এরপর আর ফিরে আসেনি। গত ৩ জানুয়ারি মেজবার ভাই ও বাবা ঢাকায় এসে মেস থেকে তার সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে যায়।


এদিকে, মেজবার ও নাফিসের পরিচয় পাওয়া গেলেও আরেকজনের এখনো পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে তার পরিচয় বের করার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।


বিবার্তা/খলিল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com