শিরোনাম
সবজির চারা বিক্রি করে লাখপতি তিনি
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৭, ১১:৪৮
সবজির চারা বিক্রি করে লাখপতি তিনি
শামীম কাদির, জয়পুরহাট
প্রিন্ট অ-অ+

সংসারে ছিলো হাহাকার। কি করবেন সেই ভাবনাতেই চলতো তার দিনাতিপাত। সেসব এখন স্মৃতি তার। সেই দুঃখের দিনের স্মৃতি মনে করে মাঝে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি। এখন তিনি সবুজের কারিগর। সবজির চারা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত সমাজে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ তিনি লাখপতি।


বীজ নয় শীতকালীন সবজির চারা বিক্রি করেই এখন লাখপতি জয়পুরহাট সদর উপজেলার গনকবাড়ী এলাকার হারুন অর রশিদ । গড়ে তুলেছেন শাহানাজ নামে একটি নার্সারী। প্রথমে অবস্থায় ৪ শতক জায়গা লিজ নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে ও এখন তিনি নিজ জমি ও লিজসহ ৩ বিঘা জায়গার উপর সবজির চারা উৎপাদন করছেন। অসময়ে বৃষ্টির কারণে তার চারার ব্যবসার ক্ষতি হলেও এ মৌসুমে বীজ ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে ৭-৮ লক্ষ টাকা লাভ করবেন বলে আশাবাদী তিনি ।


সরেজমিন গনকবাড়ী এলাকায় গিয়ে হারুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সবজির চারার ব্যবসা শুরু করার আগে হারুন ফেরি করে মুরগি ও কলার ব্যবসা করতেন, এতে করে তার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত,অভাব-অনটনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে একদিন হারুন সিদ্ধান্ত নেয় সবজির চারা উৎপাদন করার।


মাচার নিচে যত্নসহ বড় হচ্ছে সবজির চারা


মাচার নিচে বড় হচ্ছে সবজির চারা। ছবি- শামীম কাদির


২০১০ সালের কথা। শ্বশুরও সবজির চারা ব্যবসায়ী। হারুন তার শ্বশুর ইসমাঈল হোসেনের কাছ থেকে চারার প্রশিক্ষণ নেয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখান থেকে সফল হয়ে তিনি তার তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, মেঝ ছেলে টেঙ্গামারা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে শিশু শ্রেনীতে পড়ছে। এছাড়াও তার নার্সারীতে বর্তমানে ১০ জন শ্রমিককে প্রতিদিনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।


মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে শুরু হওয়া চারা উৎপাদন চলতি জৈষ্ঠ্য মাস অবধি চলবে। এতে একই জমিতে তিন থেকে চার বার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হবে বলে জানান হারুন।


মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা প্রস্তত করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মরিচ, টমেটো, বেগুন, পেঁপের বীজ বপন করা হয়। ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে ২৫-৩০ দিন বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়।


বর্তমানে বাজারে প্রতিটি ভালো মানের চারা মানভেদে ১০০০ পিচ মরিচের চারা চারশত থেকে হাজার টাকা, টমেটোর চারা পাঁচশত থেকে সাতশত টাকা, ফুলকপির চারা সাতশত থেকে নয়শত টাকা, বাঁধাকপির চারা ছয়শত থেকে আটশত টাকা, বেগুনের চারা তিনশত থেকে চারশত টাকা, পেঁপের চারা পাঁচশত থেকে ছয়শত টাকা বিক্রি হচ্ছে ।


হারুনের চারা উৎপাদনের ব্যবসার প্রতি উদ্বদ্ধু হয়ে এই গ্রামেরই জীবন দেবনাথ, আব্দুল ওহাব ও মাসুদ রানাসহ আরও অনেকে এই চারা উৎপাদনের ব্যবসা শুরু করেছেন।


বাজারে বিক্রির জন্য চারা তুলছেন হারুন। ছবি- শামীম কাদির


বাজারে বিক্রির জন্য চারা তুলছেন হারুন। ছবি- শামীম কাদির


জয়পুরহাট সদর উপজেলার বিল্লাহ্ গ্রামের ৪০০ পিচ বাঁধাকপির চারা নিতে আসা অখিল চন্দ্র, ক্ষেতলাল উপজেলার জালিয়াপাড়া গ্রামের ২০০০ পিচ বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা নিতে আসা আব্দুস সামাদ ও বিজন দেবনাথ জানান,আমরা প্রতিবছরই হারুনের নার্সারী থেকে সবজির চারা সংগ্রহ করে থাকি এবং এই নার্সারী থেকে চারা নিলে ফলনও ভালো হয়।


জয়পুরহাট জেলা ছাড়াও সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার কৃষক ও সবজি চারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা তার এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।


শাহানাজ নার্সারীর হারুন অর রশিদ জানান, দিন-দিন আমার নিজ উদ্যোগে ব্যবসার প্রসার হচ্ছে, কিন্ত সরকার বা কৃষি অফিস থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হয় না, এই কারণে আমাকে ভালো বীজের জন্য জয়পুরহাটের বিভিন্ন বীজের দোকানসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়।


জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্র নাথ জানান, হারুনসহ যে কোন চারা ব্যবসায়ী আমাদের কৃষি অফিসে আসলে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।


বিবার্তা/শামীম/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com