শিরোনাম
দৈনিক হাজার টন কাঠ পোড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৪০
দৈনিক হাজার টন কাঠ পোড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা
শফিক আজাদ
প্রিন্ট অ-অ+
উখিয়া-টেকনাফের ১২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা দৈনিক হাজার টনেরও বেশি জ্বালানি কাঠ পোড়াচ্ছে। বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমির পাহাড় কাটা হয়েঠছ। শুধু তাই নয় তারা পাশাপশি সরকারি, সামাজিক বনায়ন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের ফলজ ও বনজ গাছ কেটে তৈরি করছে ঘর-বাড়ি। আর সংরক্ষিত বনের কাঠ ব্যবহার করছে জ্বালানীর কাজে।


এতে উজাড় হচ্ছে উখিয়া-টেকনাফের বনাঞ্চল। অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। পরিবেশবাদী সংগঠনের অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে অকাতরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তাদের রান্নার জন্য জ্বালানী সরবরাহ না করায় উখিয়া টেকনাফের সংরক্ষিত বনের উপর প্রভাব পড়েছে।


বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, দৈনিক হাজার টন জ্বালানি কাঠ পোড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। পুরাতন রোহিঙ্গাদের জ্বালানির ব্যবস্থা থাকলেও নতুনদের জন্য সেই ব্যবস্থা নেই। এছাড়া যে আড়াই হাজার বনভূমিতে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে, সেখানে সামাজিক বনায়ন রয়েছে প্রায় আড়াইশ একর। যা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা হবে বলে বন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।


তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা জ্বালানী সরবরাহ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বন সম্পদ রক্ষায় এসব রোহিঙ্গাদের সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে ৩ হাজার একর বনভূমিতে একত্রিত করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমাবদ্ধতার ভেতরে রাখা না হলে উখিয়া-টেকনাফের বন সম্পদ, পাহাড় শূন্যের কোটায় চলে যাবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারি সিদ্ধান্ত পাঁচটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে।


দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিগতভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু রান্নার জন্য কোন জ্বালানী কাঠ ও ঘরবাড়ি তৈরির জন্য কোন গাছ-বাঁশ দেয়া হচ্ছে না। যার ফলে এই চাহিদা পূরণ হচ্ছে বনায়ন থেকে।


উখিয়ার বন পাহারা দলের সদস্য মীর কাশেম অভিযোগ করে জানান, ফলিয়াপাড়াস্থ দক্ষিণ পাড়া এলাকায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সৃজিত আকাশমনি, বহরা, আমলকি, গর্জন, কড়ই গাছ রোহিঙ্গারা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। উক্ত বন পাহারায় ১৫ জন সদস্য থাকলেও হাজার হাজার রোহিঙ্গার সামনে এসব পাহারা দলের সদস্যরা অসহায়।


তিনি আরো জানায়, রোহিঙ্গাদের সামাজিক বনায়নের গাছ কাটতে বাঁধা দেওয়া হলে তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে পাহারা দলের সদস্যদের ধাওয়া করছে।


ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চলসহ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ফিল্ড সুপারভাইজার আবু সরওয়ার জানান, মানবতাকে পুঁজি করে উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা সরকারি সংরক্ষিত বনের গাছপালা ধ্বংস করেছে। ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও সংস্থাগুলো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি, রান্নাবান্নার জন্য জ্বালানী কাঠ সরবরাহ করলে বনের উপর এ প্রভাবটি পড়ত না।


পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী বন থেকেই জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। এ বিষয় সম্পর্কে সরকার অবগত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শীঘ্রই এর সমাধান হবে।


কক্সবাজার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিন) আলী কবির বলেন, রোহিঙ্গারা যেভাবে বনের গাছপালা উজাড় করছে এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারে সবুজ আর থাকবে না। তাই অন্যান্য ত্রাণের সাথে জ্বালানী কাঠ দেয়ার পরার্মশ দেয়া দরকার।


তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পাহাড় থেকে সরিয়ে ৩ হাজার একরের অস্থায়ী ক্যাম্প কুতুপালং এ নিয়ে আসা সম্পন্ন হলে বনভূমি রোহিঙ্গা মুক্ত হবে। তদস্থলে পরবর্তী বর্ষায় নতুন করে বনায়ন করার পরিকল্পনা করা হবে। সেক্ষেত্রে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠবে।


তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য জ্বালানী সরবরাহের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com