শিরোনাম
সাইকেলেই মেয়েদের স্কুল জয়
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:৫০
সাইকেলেই মেয়েদের স্কুল জয়
মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)
প্রিন্ট অ-অ+

এক সময়ে সমাজপতিরা আড় চোখে তাকাতো। মেয়েরা সাইকেল চালাবে! কত আলোচনা-সমালোচনা চলতো হাটে-ঘাটে। চায়ের কাপে অযথাই ঝড় তুলেছেন মেয়েদের এমন সিদ্ধান্তে। এতসব সমালোচনাকে জয় করে তারা এখন দুরন্ত সাইকেল বালিকা। কথা হচ্ছিলো দিনাজপুরের স্কুলগামী সাইকেল জাগরণের বালিকাদের নিয়ে।


শিক্ষার্থীরা বাইসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসায় এলাকায় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চিরিরবন্দর আমেনাবাকি রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চিত্র এমনই। এই তো কয়েক বছর আগেও গ্রামের মেয়েদের বাইসাইকেল চালানোর দৃশ্য জন্ম দিত সমালোচনার, চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে শুরু হতো আলোচনা। গ্রামের সেই সব আলোচনা সমালোচনাকে জয় করে মেয়েরা এখন স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার, অফিস, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেসহ বিভিন্ন জায়গায় বাইসাইকেলে যাতায়াত করছে। দিনদিন বাড়ছে তাদের সংখ্যা।


আগে অভিভাবকরা যাতায়াতের অসুবিধার কথা ভেবে দূরের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ভর্তি করতে চাইতোনা। এখন সে ধারণা পাল্টেছে। মেয়েরাও সকল প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে।


চিরিরবন্দর কারেন্ট হাট এলাকার অভিভাবক আবুল হোসেন বলেন, আমার মেয়েকে আগে আমার মোটরসাইকেল করে বিদ্যালয়ে পৌছে দিতে হত । এতে করে আমাকে সময় দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হত সঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে না পারলে তার ক্লাস মিস হতো নতুবা বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার পর আমি সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারলে বিদ্যালয়ের গেটের পার্শ্বে মেয়েকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে হতো । না হইলে প্রতিদিন রিক্সশা ভাড়া দিতে হতো আমার মত নিন্মবিত্ত পরিবারের পক্ষে তা অনেক কষ্ট হত। এখন আমার মেয়েকে বাই-সাইকেল কিনে দেয়ায় তার সময় মত প্রাইভেট কোচিং , ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে এবং আমিও দুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকছি ।


সুরভী আক্তার ও শাহনাজ পারভীন নামের দুই ছাত্রী জানায়, আমরা ৬ কিলোমিটার দূর থেকে চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যাতায়াত করি। সমস্যা হয় শুধু প্রচুর বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশায়। এমনিতে স্কুলের পোশাক থাকায় রাস্তাঘাটে কোনো সমস্যা হয় না। প্রধান শিক্ষক স্যার প্রায়ই রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে টহল দেন।


আমেনাবাকি রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের জেসমিন ও লিমা। এই দুই ছাত্রী জানায় , আমার বাবা অত্যন্ত গরীব। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন ভ্যান ভাড়া দিতে পারতো না । আমি উপবৃত্তির টাকা ও টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে একটি বাই সাইকেল কিনেছি । এখন আমি প্রতিদিন সাইকেল যোগে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারতেছি। এতে করে আমার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে । এখন আমার লেখাপড়া খুবই ভালভাবে করতে পারতেছি ।


আমেনাবাকি রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, বিগত দিনে আমরা দুর থেকে আসা গরীব মেধাবী ছাত্রীকে স্কুলের পক্ষ থেকে বাই-সাইকেল প্রদান করছি। আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় চলাচলে যাতে কোন সম্যসা না হয় সেদিকে আমরা সর্তক থেকেই খোঁজ খবর রাখছি।


চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী প্রতিদিন বাইসাইকেলে যাতায়াত করছে।


চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিমি আকতার ও আফরিন। ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই দুই ছাত্রী জানায়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও পিতামাতার আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা ৮ কিলোমিটার দূর রাজাপুর গ্রামের শেষপ্রান্ত থেকে গত ৫ বছর যাবৎ বাইসাইকেলে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছি।


তারা আরও জানায়, পথিমধ্যে প্রতিনিয়ত বখাটে ছেলেরা আমাদের সাইকেলের পিছু নেওয়ায় ও বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গি করায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। একই অভিযোগ করেন প্রায় প্রতিটি মেয়ে শিক্ষার্থী।


চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন সরকার জানান, ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ওই সময়টাতে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা টহল জোরদার করলে বখাটেদের উপদ্রব কমে যেতে পারে। তাছাড়া অভিভাকদের বিভিন্ন প্রেষণা জুগিয়ে তাদের মেয়েদেরকে বাইসাইকেল ক্রয় করে দিতে বলা হয়েছে ।


এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম রব্বানী জানান, ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি বন্ধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।


তিনি আরও জানান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যাপারে নির্দেশনা না থাকায় কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। সরকারি নির্দেশনা পেলে আমরা তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।



বিবার্তা/মানিক/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com